০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
পিয়ানোর অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে সুরের লড়াই , কানাডার কেভিন চেন ফাইনালে জেমস ফক্সের ‘ক্রাফ্টল্যান্ড’—ব্রিটেনের হারিয়ে যাওয়া হস্তশিল্পের জীবন্ত ইতিহাস বিলুপ্তির তালিকায় নতুন নাম—একটি পাখি, একটি শুঁয়োপোকা ও একটি শ্রু প্রজাতি হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৬) কানাডায় অনিরাপদ বোধ করছেন ভারতীয়রা, উদ্বেগ জানালেন নয়াদিল্লির হাইকমিশনার নির্বাচন বানচালে হঠাৎ আক্রমণও হতে পারে জেএমবির তৎপরতার সময় বোয়ালমারীতে নির্মম হত্যাকাণ্ড—পলাতক চার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালতের দণ্ডাদেশ সিলেটে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিকদের ১১ দফা দাবি—ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি সহযোগিতা ঘিরে ট্রাম্প–লি বৈঠক; বৃহস্পতিবার চীনা প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাৎ রেকর্ড বৃষ্টিপাতে ভিয়েতনামে ভয়াবহ বন্যা—নয়জনের মৃত্যু, নিখোঁজ পাঁচজন

চম্পার জীবন ও কর্ম: জন্ম থেকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা

জন্ম ও শৈশব

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী চম্পা, যার আসল নাম গুলশান আরা আখতার চম্পা। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৫ জানুয়ারি ১৯৬৫ সালে যশোরে। তাঁর পরিবার সাংস্কৃতিক ধারা ও শিল্পচর্চার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। বাবা নিযামুদ্দিন এবং মা ডা. জাহানারা আখতার ছিলেন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা। মায়ের পেশা ছিল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। চম্পা ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাঁর দুই বোন—শুচন্দা ও ববিতা—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহাতারকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

শৈশবে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত ও সাহসী। তবে মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারানো তাঁর জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে। এত অল্প বয়সে মায়ের মৃত্যু তাঁর শৈশবকে কঠিন করে তুললেও পারিবারিক শিল্পচর্চার পরিবেশ তাঁকে ধীরে ধীরে শক্ত করে তোলে। বাড়ির আড্ডা, গান, আবৃত্তি ও নাট্যচর্চা তাঁকে শৈশবেই শিল্পমনস্ক করে তোলে।

কৈশোর ও প্রেরণা

কৈশোরে চম্পা স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। মাঠে খেলাধুলা তাঁকে শারীরিকভাবে দৃঢ় করে তোলে। অভিনয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও পারিবারিক পরিবেশ ও বোনদের প্রভাব তাঁকে অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। তিনি ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল ও বিশেষ করে শ্রীদেবীর অভিনয়কে অনুকরণ করতেন। শ্রীদেবীর অভিব্যক্তি পরিবর্তনের ক্ষমতা তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

নাটক ও সিনেমার গল্পে আরও বৈচিত্র্য প্রয়োজন': চম্পা

অভিনয়জীবনের সূচনা

চম্পার অভিনয়জীবন শুরু হয় টেলিভিশনে। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক ‘দূর সাঁতার’-এ অভিনয় করেন, যা পরিচালনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। নাটকটি প্রচারিত হওয়ার পরই তিনি দর্শকের নজরে আসেন। এরপর একের পর এক নাটকে অভিনয় করতে থাকেন—যেমন ‘এখানে নোঙর,’ ‘আকাশ বাড়িয়ে দাও,’ ‘খোলা দরজা,’ ‘অপোয়া’ প্রভৃতি। ধীরে ধীরে তিনি টেলিভিশনের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হন।

চলচ্চিত্রে অভিষেক

চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক ঘটে ১৯৮৬ সালে, ছবির নাম ছিল ‘তিন কন্যা’। ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন তাঁর বোন শুচন্দা। এই চলচ্চিত্রে তিনি পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর তিনি ‘নিষ্পাপ’ ও ‘ভেজা চোখ’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। মূলত এই সময় থেকেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন করে নেন।

সাফল্যের ধারাবাহিকতা

চম্পা ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক ও গুণগতমানসম্পন্ন উভয় ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। নব্বই দশক ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালি সময়। এই সময়ে তিনি একদিকে মূলধারার জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন, অন্যদিকে শিল্পসম্মত ছবিতেও অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে ২০০টিরও বেশি চলচ্চিত্র রয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি বিশেষ আসনে বসিয়েছে।

পদ্মা নদীর মাঝি: অনন্য মাইলফলক

চম্পার অভিনয়জীবনে সবচেয়ে আলোচিত ছবি হলো ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (১৯৯৩)। এটি ছিল ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার একটি শিল্পমানসম্পন্ন ছবি, পরিচালনা করেছিলেন গৌতম ঘোষ। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে।

চম্পা ছবিতে ‘মালা’ চরিত্রে অভিনয় করেন। একজন দরিদ্র কিন্তু সাহসী নদীজীবনের নারী হিসেবে তাঁর অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলে জীবনের সংগ্রাম, টানাপোড়েন, প্রেম ও বেঁচে থাকার লড়াই তিনি অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরেন। এই ছবির জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সেরা অভিনেত্রীর ক্যাটাগরিতে। শুধু দেশেই নয়, এই ছবির মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি লাভ করেন।

উত্তরের খেপ: আরেকটি মহিমান্বিত অধ্যায়

২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত ‘উত্তরের খেপ’ ছিল চম্পার ক্যারিয়ারের আরেকটি শীর্ষস্থানীয় সাফল্য। শওকত আলীর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে তিনি এক প্রান্তিক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নায়ক ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মন্না।

এই ছবিতে চম্পা দেখিয়েছেন নারীর সংগ্রাম, বেদনা ও বেঁচে থাকার লড়াই কতটা গভীরভাবে রূপায়িত করা যায়। তাঁর অভিনয়ের বাস্তবতা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই ছবির জন্যও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেরা অভিনেত্রীর বিভাগে। ‘উত্তরের খেপ’ প্রমাণ করে যে, চম্পা শুধু নায়িকা নন, বরং একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী, যিনি চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন।

জন্মদিনে ফুলে ফুলে ভরে গেছে চম্পার বাসা | The Daily Star Bangla

ব্যক্তিজীবন

অভিনয়ের পাশাপাশি চম্পার ব্যক্তিজীবনও আলোচনার বিষয়। ১৯৮২ সালে তিনি ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র কন্যা এশা। ব্যস্ত অভিনয়জীবন সামলানোর পাশাপাশি তিনি সবসময় পারিবারিক জীবনে নিবেদিত থেকেছেন। পরিবার ও পেশাকে সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই তাঁর সাফল্যের অন্যতম রহস্য।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

চম্পা তাঁর দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। বিশেষ করে—

  • • সেরা অভিনেত্রী (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার): পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), অন্যায় জীবন (১৯৯৫), উত্তরের খেপ (২০০০)
  • • সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার): শাস্তি (২০০৫), চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮)

এছাড়া আরও বহু সম্মাননা ও স্বীকৃতি তিনি অর্জন করেছেন।

উত্তরাধিকার ও অবদান

চম্পা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক অনন্য নাম। তিনি একদিকে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক টেনেছেন, অন্যদিকে শিল্পসম্মত ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। বিশেষ করে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও ‘উত্তরের খেপ’ তাঁর ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পিয়ানোর অলিম্পিকের চূড়ান্ত পর্বে সুরের লড়াই , কানাডার কেভিন চেন ফাইনালে

চম্পার জীবন ও কর্ম: জন্ম থেকে সাফল্যের ধারাবাহিকতা

০৪:০১:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫

জন্ম ও শৈশব

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি অভিনেত্রী চম্পা, যার আসল নাম গুলশান আরা আখতার চম্পা। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৫ জানুয়ারি ১৯৬৫ সালে যশোরে। তাঁর পরিবার সাংস্কৃতিক ধারা ও শিল্পচর্চার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। বাবা নিযামুদ্দিন এবং মা ডা. জাহানারা আখতার ছিলেন শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা। মায়ের পেশা ছিল হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। চম্পা ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। তাঁর দুই বোন—শুচন্দা ও ববিতা—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহাতারকা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।

শৈশবে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত ও সাহসী। তবে মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারানো তাঁর জীবনে এক গভীর শূন্যতা তৈরি করে। এত অল্প বয়সে মায়ের মৃত্যু তাঁর শৈশবকে কঠিন করে তুললেও পারিবারিক শিল্পচর্চার পরিবেশ তাঁকে ধীরে ধীরে শক্ত করে তোলে। বাড়ির আড্ডা, গান, আবৃত্তি ও নাট্যচর্চা তাঁকে শৈশবেই শিল্পমনস্ক করে তোলে।

কৈশোর ও প্রেরণা

কৈশোরে চম্পা স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। মাঠে খেলাধুলা তাঁকে শারীরিকভাবে দৃঢ় করে তোলে। অভিনয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও পারিবারিক পরিবেশ ও বোনদের প্রভাব তাঁকে অভিনয়ের প্রতি আকৃষ্ট করে। তিনি ভারতীয় অভিনেত্রী শাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল ও বিশেষ করে শ্রীদেবীর অভিনয়কে অনুকরণ করতেন। শ্রীদেবীর অভিব্যক্তি পরিবর্তনের ক্ষমতা তাঁকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।

নাটক ও সিনেমার গল্পে আরও বৈচিত্র্য প্রয়োজন': চম্পা

অভিনয়জীবনের সূচনা

চম্পার অভিনয়জীবন শুরু হয় টেলিভিশনে। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাটক ‘দূর সাঁতার’-এ অভিনয় করেন, যা পরিচালনা করেছিলেন আবদুল্লাহ আল মামুন। নাটকটি প্রচারিত হওয়ার পরই তিনি দর্শকের নজরে আসেন। এরপর একের পর এক নাটকে অভিনয় করতে থাকেন—যেমন ‘এখানে নোঙর,’ ‘আকাশ বাড়িয়ে দাও,’ ‘খোলা দরজা,’ ‘অপোয়া’ প্রভৃতি। ধীরে ধীরে তিনি টেলিভিশনের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হন।

চলচ্চিত্রে অভিষেক

চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক ঘটে ১৯৮৬ সালে, ছবির নাম ছিল ‘তিন কন্যা’। ছবিটি প্রযোজনা করেছিলেন তাঁর বোন শুচন্দা। এই চলচ্চিত্রে তিনি পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এরপর তিনি ‘নিষ্পাপ’ ও ‘ভেজা চোখ’ ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। মূলত এই সময় থেকেই তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন করে নেন।

সাফল্যের ধারাবাহিকতা

চম্পা ধীরে ধীরে বাণিজ্যিক ও গুণগতমানসম্পন্ন উভয় ধারার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। নব্বই দশক ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের সোনালি সময়। এই সময়ে তিনি একদিকে মূলধারার জনপ্রিয় ছবিতে অভিনয় করেছেন, অন্যদিকে শিল্পসম্মত ছবিতেও অভিনয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁর ক্যারিয়ারজুড়ে ২০০টিরও বেশি চলচ্চিত্র রয়েছে, যা তাঁকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে একটি বিশেষ আসনে বসিয়েছে।

পদ্মা নদীর মাঝি: অনন্য মাইলফলক

চম্পার অভিনয়জীবনে সবচেয়ে আলোচিত ছবি হলো ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ (১৯৯৩)। এটি ছিল ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনার একটি শিল্পমানসম্পন্ন ছবি, পরিচালনা করেছিলেন গৌতম ঘোষ। ছবিটি নির্মিত হয়েছিল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে।

চম্পা ছবিতে ‘মালা’ চরিত্রে অভিনয় করেন। একজন দরিদ্র কিন্তু সাহসী নদীজীবনের নারী হিসেবে তাঁর অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের মুগ্ধ করে। পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলে জীবনের সংগ্রাম, টানাপোড়েন, প্রেম ও বেঁচে থাকার লড়াই তিনি অত্যন্ত বাস্তবসম্মতভাবে তুলে ধরেন। এই ছবির জন্য তিনি বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সেরা অভিনেত্রীর ক্যাটাগরিতে। শুধু দেশেই নয়, এই ছবির মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিচিতি লাভ করেন।

উত্তরের খেপ: আরেকটি মহিমান্বিত অধ্যায়

২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া শাহজাহান চৌধুরী পরিচালিত ‘উত্তরের খেপ’ ছিল চম্পার ক্যারিয়ারের আরেকটি শীর্ষস্থানীয় সাফল্য। শওকত আলীর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিতে তিনি এক প্রান্তিক নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নায়ক ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা মন্না।

এই ছবিতে চম্পা দেখিয়েছেন নারীর সংগ্রাম, বেদনা ও বেঁচে থাকার লড়াই কতটা গভীরভাবে রূপায়িত করা যায়। তাঁর অভিনয়ের বাস্তবতা দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই ছবির জন্যও তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সেরা অভিনেত্রীর বিভাগে। ‘উত্তরের খেপ’ প্রমাণ করে যে, চম্পা শুধু নায়িকা নন, বরং একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী, যিনি চরিত্রের ভেতরে ঢুকে যেতে পারেন।

জন্মদিনে ফুলে ফুলে ভরে গেছে চম্পার বাসা | The Daily Star Bangla

ব্যক্তিজীবন

অভিনয়ের পাশাপাশি চম্পার ব্যক্তিজীবনও আলোচনার বিষয়। ১৯৮২ সালে তিনি ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র কন্যা এশা। ব্যস্ত অভিনয়জীবন সামলানোর পাশাপাশি তিনি সবসময় পারিবারিক জীবনে নিবেদিত থেকেছেন। পরিবার ও পেশাকে সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই তাঁর সাফল্যের অন্যতম রহস্য।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

চম্পা তাঁর দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। বিশেষ করে—

  • • সেরা অভিনেত্রী (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার): পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), অন্যায় জীবন (১৯৯৫), উত্তরের খেপ (২০০০)
  • • সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার): শাস্তি (২০০৫), চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮)

এছাড়া আরও বহু সম্মাননা ও স্বীকৃতি তিনি অর্জন করেছেন।

উত্তরাধিকার ও অবদান

চম্পা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক অনন্য নাম। তিনি একদিকে বাণিজ্যিক ছবির দর্শক টেনেছেন, অন্যদিকে শিল্পসম্মত ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। বিশেষ করে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ ও ‘উত্তরের খেপ’ তাঁর ক্যারিয়ারের চূড়ান্ত মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে।