রাজসাহীর প্রাচীনত্ব:
রাজসাহী অতি প্রাচীন স্থান। ইহার প্রাচীনত্ব বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এই স্থান ক্রমান্বয়ে হিন্দু, মুসলমান ও ইংরেজদিগের শাসনাধীন হইয়াছে। মহাভারতে উত্তর ‘গো-গৃহের” উল্লেখ আছে। সেই “গো-গৃহ” রাজসাহী প্রদেশের উত্তরভাগে ছিল। আবার উত্তর বঙ্গ রেলওয়ে স্টেশন পাঁচবিবি হইতে পূর্ব মুখে ১২ মাইল পথ যাইলে মাগুরা এবং ঐ মাগুরা হইতে দক্ষিণ পূর্ব মুখে ৫ মাইল যাইলে বিরাট নগর। এই নগর মৎস্যদেশীয় নরপতি বিরাট স্থাপিত করেন। এই বিরাট নগরে পাণ্ডবগণ অজ্ঞাতবাস করেন। এই নগরের দুই মাইল দক্ষিণে বিরাট রাজার সেনাপতি কীচকের বাসভবন ছিল। ইহার অনতিদূরে মহাভারতীয় “সমীবৃক্ষ” স্থান। রাজসাহী “মৎস্য” দেশের অর্ন্তগত এবং রাজসাহী যে মৎস্যদেশাধিপতি বিরাটের রাজ্য ছিল, এ বিষয়ে কাহারও সন্দেহ হইতে পারে না। মৎস্যদেশাধিপতি বিরাটের অধিকার অনেকদিন গত হইয়াছে; কিন্তু তাহার ধ্বংসকাহিনী এখনও পুরানে ও ইতিহাসে কীর্তিত হইতেছে। যে পাণ্ডবগণের বীরত্বে ভারত কেন সমগ্র পৃথিবী কম্পিত হইয়াছিল; সেই পাণ্ডবগণের অজ্ঞাতবাসে বিরাট রাজ্যের অন্তর্গত রাজসাহী প্রদেশ পুণ্যভূমি বলিয়া কীর্তিত হইতেছে। বিরাটের রাজভবনের ধ্বংসাবশেষ এবং তন্নিকটবর্তী কীচকের বাসভবনের ভগ্নাবশেষ রাজসাহী প্রদেশে বিদ্যমান থাকিয়া পাণ্ডবগণের অতীত গৌরবের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। দিল্লির সম্রাট আকবরের সময়ে রাজস্বমন্ত্রী রাজা তোডরমল যে সকল “সরকার” নামক বিভাগে বঙ্গদেশকে বিভক্ত করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে “তাহিরপুর” ও “সাঁতুল” রাজসাহীর অন্তর্গত। “তাহিরপুর” ও “সাঁতুল” রাজাদ্বয় একাদশ ভৌমিক মধ্যে দুইটি ভৌমিক রাজা বলিয়া প্রসিদ্ধ। এই রাজসাহী বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত। পদ্মা নদীর উত্তর এবং করতোয়া ও মহানন্দা নদীর মধ্যস্থিত প্রদেশ বরেন্দ্রভূমি বলিয়া প্রসিদ্ধ ছিল। এই বরেন্দ্র ভূমিতে অনেক বারেন্দ্র ব্রাহ্মণগণের বাস। বারেন্দ্র শ্রেণি ব্রাহ্মণগণের কৌলীন্য প্রথানুসারে তাহিরপুর “অস্তাচল” এবং শুশুঙ্গ “উদয়াচল” বলিয়া প্রসিদ্ধ। ইহাতে স্পষ্ট দেখা যাইতেছে যে, রাজা বিরাটের সময় হইতে প্রসিদ্ধ সেনবংশীয় রাজাদের সময় পর্যন্ত রাজসাহী হিন্দু রাজার শাসনাধীন ছিল; তাহার পর মুসলমান রাজা রাজসাহী অধিকৃত করেন। বাগার জায়গির মোঘলসম্রাট সাজাহান প্রদত্ত। আমরুল পরগণার অন্তর্গত “নবাবের তাম্বু” নামে একটি গ্রাম। আছে। ইহা কথিত আছে যে রাজসাহী জরিপ সময় রাজা তোডরমল ঐ গ্রামে নিজ তাম্বু স্থাপিত করেন। মোঘলবংশীয় সম্রাটের শাসনাধীনেও রাজসাহী ছিল। হিন্দু ও মুসলমান শাসনকালের রাজসাহীর কোন ধারাবাহিক ইতিহাস পাওয়া কঠিন। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ হইতে ইংরেজরা মুসলমানদিগকে পরাভব করিয়া এপর্যন্ত রাজসাহীর অধিস্বামী হইয়া রহিয়াছেন। সুতরাং ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দের পূর্বের যে কোন ঘটনা জানা যাইবে, তাহার উল্লেখ করা যাইবে।
রাজসাহীর নাম:
পদ্মা নদীর দক্ষিণে “নিজ চাকলা রাজসাহী” নামে একটি ভূভাগ রাজসাহী প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ইংরেজদের অধিকার সময়ে বোধ হয় ঐ চাকলার নামে রাজসাহী জেলার নাম হয়। কেহ কেহ বলেন এই ভূখণ্ডে অনেক রাজার বাসস্থান। এই জন্য জেলার নাম “রাজসাহী” হয়। পূর্বের নামই সঙ্গত বলিয়া বোধ হয়।
রাজা মানসিংহের সহিত রাজসাহী নামের ব্যুৎপত্তি আছে বলিয়া কালীপ্রসন্ন বাবু উল্লেখ করিয়াছেন। রাজসাহী নাম “শাহী” রাজা মানসিংহের প্রদত্ত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। রাজসাহী নাম “শাহী” রাজা মানসিংহের প্রদত্ত বলিয়া কথিত।’ এ অনুমান আমি সঙ্গত মনে করি না, যেহেতু “শ” “স”-য়ে বৈষম্য দৃষ্ট হয়।
চলবে……
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















