০১:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ তিউনিসিয়ায় কারাগারে বর্বর নির্যাতন! বিরোধী নেতার পরিবারে চরম ক্ষোভ প্রো- ও অ্যান্টি-লকডাউন মিছিল গাজীপুরে পেট্রল ঢেলে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই বাসে আগুন ফরিদপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ বরগুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ যাত্রী কমায় ফাঁকা দূরপাল্লার বাস—নিষিদ্ধ দলের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব পদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ: ট্রাকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বার্তা

কাবুলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক


ভারত সফর শেষে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বুধবার সকালে কাবুলে পৌঁছান। তিনি আফগানিস্তান সফরের পাশাপাশি ষষ্ঠ চীন-আফগানিস্তান-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে অংশ নেন। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবার আফগানিস্তানে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) টিয়ানজিন শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে এই বৈঠক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

আলোচনার মূল বিষয়


আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, তিন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অংশগ্রহণকারীরা পারস্পরিক স্বার্থ, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের সম্পর্ক নিয়ে মতবিনিময় করবেন।

ওয়াং ই-এর বার্তা


কাবুলে আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই জানান, চীন আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখবে, একতরফা চাপের বিরোধিতা করবে এবং নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করবে।

চীন তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘সমন্বিত ভবিষ্যৎ’ গড়ে তোলার যে প্রস্তাব দিয়েছে, আফগানিস্তান সেই উদ্যোগের একটি অপরিহার্য অংশ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী বৈঠকের প্রেক্ষাপট


তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সর্বশেষ গত ২১ মে বেইজিংয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান তখন কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং নীতিগতভাবে দ্রুত রাষ্ট্রদূত নিয়োগে একমত হয়।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ


লানঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঝু ইয়ংবিয়াও জানান, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই বৈঠক প্রথম হওয়ায় এর তাৎপর্য বেশি। পাশাপাশি এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের আগের দিন এই আয়োজন আরও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। তাই এই বৈঠক একদিকে ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে নতুন সূচনা।

তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে। বিশেষ করে তারা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণে আগ্রহী। এটি আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও আফগান অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে সতর্ক। তবে চীন গঠনমূলক সম্পৃক্ততার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহত করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর ওয়াং ই বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাকিস্তান সফর করবেন। তিনি সেখানে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইশাক দারের সঙ্গে ষষ্ঠ চীন-পাকিস্তান কৌশলগত সংলাপে অংশ নেবেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, চীন ও পাকিস্তান ‘আয়রনক্ল্যাড বন্ধু’ এবং সর্বক্ষণ কৌশলগত সহযোগী। দুই দেশের সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্য হলো দৃঢ় আস্থা ও ঘনিষ্ঠ উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। ওয়াং ই-এর এই সফর দুই দেশের নেতাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া বাস্তবায়ন, কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় উন্নত করা এবং আরও ঘনিষ্ঠ চীন-পাকিস্তান অংশীদারিত্ব গঠনে সহায়ক হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ

চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক: আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের বার্তা

০১:২৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

কাবুলে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক


ভারত সফর শেষে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বুধবার সকালে কাবুলে পৌঁছান। তিনি আফগানিস্তান সফরের পাশাপাশি ষষ্ঠ চীন-আফগানিস্তান-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সংলাপে অংশ নেন। তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবার আফগানিস্তানে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হলো। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) টিয়ানজিন শীর্ষ বৈঠকের প্রাক্কালে এই বৈঠক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

আলোচনার মূল বিষয়


আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় বলা হয়েছে, তিন দেশের মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, অংশগ্রহণকারীরা পারস্পরিক স্বার্থ, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের সম্পর্ক নিয়ে মতবিনিময় করবেন।

ওয়াং ই-এর বার্তা


কাবুলে আফগান প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের সঙ্গে সাক্ষাতে ওয়াং ই জানান, চীন আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ও উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে চীন আফগানিস্তানের সঙ্গে ন্যায়ভিত্তিক সম্পর্ক বজায় রাখবে, একতরফা চাপের বিরোধিতা করবে এবং নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা উভয় ক্ষেত্রেই কাজ করবে।

চীন তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ‘সমন্বিত ভবিষ্যৎ’ গড়ে তোলার যে প্রস্তাব দিয়েছে, আফগানিস্তান সেই উদ্যোগের একটি অপরিহার্য অংশ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী বৈঠকের প্রেক্ষাপট


তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সর্বশেষ গত ২১ মে বেইজিংয়ে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান তখন কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং নীতিগতভাবে দ্রুত রাষ্ট্রদূত নিয়োগে একমত হয়।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ


লানঝু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঝু ইয়ংবিয়াও জানান, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর এই বৈঠক প্রথম হওয়ায় এর তাৎপর্য বেশি। পাশাপাশি এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের আগের দিন এই আয়োজন আরও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। তাই এই বৈঠক একদিকে ধারাবাহিকতা, অন্যদিকে নতুন সূচনা।

তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোর দিচ্ছে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাচ্ছে। বিশেষ করে তারা চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণে আগ্রহী। এটি আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাকিস্তানের স্থিতিশীলতা ও আফগান অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক সংকেত।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে সতর্ক। তবে চীন গঠনমূলক সম্পৃক্ততার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহত করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনা

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পর ওয়াং ই বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পাকিস্তান সফর করবেন। তিনি সেখানে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইশাক দারের সঙ্গে ষষ্ঠ চীন-পাকিস্তান কৌশলগত সংলাপে অংশ নেবেন।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, চীন ও পাকিস্তান ‘আয়রনক্ল্যাড বন্ধু’ এবং সর্বক্ষণ কৌশলগত সহযোগী। দুই দেশের সম্পর্কের মূল বৈশিষ্ট্য হলো দৃঢ় আস্থা ও ঘনিষ্ঠ উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ। ওয়াং ই-এর এই সফর দুই দেশের নেতাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া বাস্তবায়ন, কৌশলগত যোগাযোগ জোরদার, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় উন্নত করা এবং আরও ঘনিষ্ঠ চীন-পাকিস্তান অংশীদারিত্ব গঠনে সহায়ক হবে।