নেতৃত্বের বার্তা
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বুধবার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের আধুনিকীকরণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিব্বতের উন্নয়ন চীনা আধুনিকায়নের উজ্জ্বল অধ্যায় হয়ে উঠতে হবে।
শি, যিনি একইসঙ্গে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান, জনগণের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানান।
লাসায় উষ্ণ অভ্যর্থনা
শি জিনপিং বুধবার সকালে লাসায় পৌঁছান। সিপিসির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে শহরের পথে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
বিকেলে শি আলাদাভাবে স্থানীয় কর্মকর্তা, বিচারকর্মী, পুলিশ, অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও লাসায় অবস্থানরত সৈন্যদের সঙ্গেও দেখা করেন এবং তাদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানান।
৬০ বছরের উন্নয়ন
১৯৬৫ সালে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিব্বতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষত সিপিসির ১৮তম কংগ্রেসের পর অঞ্চলটির উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য নতুন নীতি গ্রহণ করা হয়।
গবেষক লি দেচেং জানান, এই নীতির মাধ্যমে তিব্বত অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি অর্জন করেছে এবং আধুনিকায়নের নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে।
উৎসবমুখর পরিবেশ
৬০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লাসা শহর সাজানো হয়েছে রঙিন আলোকসজ্জা ও পতাকায়। রাস্তায় ব্যানার ও জাতীয় পতাকা ঝুলছে, শহরজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তিব্বতের জিডিপি দাঁড়িয়েছে ২৭৬.৫ বিলিয়ন ইউয়ান, যা ১৯৬৫ সালের তুলনায় ১৫৫ গুণ বেশি। ১৯৫০-এর দশকে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৩৫.৫ বছর, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২.৫ বছরে।
সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো দারিদ্র্যমুক্তি – হাজার বছরের পুরোনো চরম দারিদ্র্য দূর হয়েছে এবং গোটা দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
নতুন শিল্প ও অর্থনীতি
তিব্বতে আধুনিক শিল্পখাত যেমন পরিচ্ছন্ন জ্বালানি, সাংস্কৃতিক পর্যটন ও পাহাড়ি অঞ্চলের হালকা শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এগুলো একটি শক্তিশালী শিল্প কাঠামো গড়ে তুলেছে।
গত কয়েক বছরে তিব্বতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চীনের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছে। মানুষের আয় ও জীবনমানও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে অর্থনীতিবিদ লি চাঙআন মন্তব্য করেন।
মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা
২০২৫ সালের মার্চে প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে বলা হয়, ২০১৯ সালের মধ্যে তিব্বতের ৬,২৮,০০০ দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। ২০২৪ সালে তাদের গড় বার্ষিক আয় ১২.৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিব্বতে স্বাস্থ্যসেবারও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বর্তমানে সেখানে ৭,২৩১ টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ২১,৫৫১ টি হাসপাতালের শয্যা এবং প্রায় ২৯,৩৭৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে।
ধর্মীয় চর্চাও আইনানুগভাবে চলছে। তিব্বতে বৌদ্ধধর্ম, ইসলাম ও ক্যাথলিক ধর্মসহ বিভিন্ন ধর্ম দীর্ঘদিন ধরে সহাবস্থান করছে। শুধু বৌদ্ধধর্মেরই ১,৭০০-এর বেশি মঠ এবং প্রায় ৪৬,০০০ সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনী রয়েছে।
সরকার “জীবন্ত বুদ্ধ”দের পুনর্জন্মের ঐতিহ্যকে সম্মান করে এবং তা আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত করে। একইসঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
সামগ্রিক চিত্র
তিব্বতের গত ৬০ বছরের যাত্রা দারিদ্র্যমুক্তি, উন্নত জীবনমান, স্বাস্থ্যসেবা, ধর্মীয় সহাবস্থান ও আধুনিক শিল্প বিকাশে এক মাইলফলক হয়ে উঠেছে। শি জিনপিংয়ের সফর ও অংশগ্রহণ এই অগ্রগতিকে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















