নিষেধাজ্ঞা ও শুল্কের প্রভাব অস্বীকার
রাশিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক ভারতের জ্বালানি সরবরাহে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত রোমান বাবুশকিন বলেন, মস্কোর হাতে এমন একটি “বিশেষ কৌশল” আছে যা দিয়ে মার্কিন প্রশাসনের আরোপিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থাকে পাশ কাটানো সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক কেবল জ্বালানি খাতেই নয়, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাতেও গভীর। বিশেষ করে সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাত রুশ অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে।
ভারতের জন্য জ্বালানির বড় অংশীদার রাশিয়া
ভারত বর্তমানে চীনের পরেই রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। ভারতের মোট জ্বালানি সরবরাহের প্রায় ৪০ শতাংশই আসে রাশিয়া থেকে। ইউক্রেনে আক্রমণের পর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ভারত তার রুশ তেল কেনার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।
আগামী ২৮ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় রপ্তানির ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে, যা রুশ তেল ক্রয়ের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া পদক্ষেপ। তবে রুশ কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন যে তেল সরবরাহের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে না।
ভাদিনার রিফাইনারি ও রুশ কৌশল
গুজরাটের ভাদিনার রিফাইনারি, যেখানে রুশ কোম্পানি রসনেফটের ৪৯.১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, সেটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম একক রিফাইনারি। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু হওয়া সত্ত্বেও এর কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়েনি।
রুশ কর্মকর্তারা বলেন, ইইউ-নিষেধাজ্ঞাজনিত শিপিং ও বীমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানও তারা খুঁজে পেয়েছেন। সরাসরি রসনেফটের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তেল সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত-রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৬৮.৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যদিও ভারতের রপ্তানি ছিল মাত্র ৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে কাজ করছে।
বাবুশকিন বলেন, বাণিজ্যের বাধা দূর করা, নতুন লজিস্টিক করিডর তৈরি করা এবং অর্থপ্রদানের প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন আনা হবে এই লক্ষ্যে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় রাশিয়ার প্রাধান্য
যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও রাশিয়া ভারতের প্রতিরক্ষার “অগ্রাধিকার অংশীদার” বলে মন্তব্য করেন বাবুশকিন। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৮ সাল থেকে ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যৌথভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে।
মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত “অপারেশন সিন্ধু”-তে ভারত রাশিয়ান ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করে। এসব অস্ত্র পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা প্রকল্পে রাশিয়ার অংশগ্রহণ
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবস ভাষণে যে ‘সুদর্শন চক্র’ নামের দীর্ঘ-পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন, সেটিতেও রাশিয়ার অংশগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে। এই ব্যবস্থা ২০৩৫ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা এবং এটি ভারতের শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সুরক্ষিত করবে।
আসন্ন শীর্ষ বৈঠক
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মস্কো সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে অর্থনীতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিগত সহযোগিতা জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি বছরই ভারত সফর করবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। তার সফরে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি সহযোগিতা, অবকাঠামো এবং পারমাণবিক শক্তি (বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মডুলার রিঅ্যাক্টর) বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ এজেন্ডা গ্রহণ করা হবে।
রাশিয়ার বিশেষ কৌশল: ভারতের জ্বালানি সরবরাহ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা অব্যাহত
-    
																	 সারাক্ষণ রিপোর্ট সারাক্ষণ রিপোর্ট
- ০৩:৩৪:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫
- 39
                                      জনপ্রিয় সংবাদ                                
                                 
																			


















