১০:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
ক্রেপাসকুলার সাপ: প্রকৃতির এক রহস্যময় সত্তা আমেরিকা ও চীন স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে: কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা পেরিয়ে কীভাবে এগোনো যায় কাল থেকেই কার্যকর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ইলিশের চেয়ে গরুর মাংসের দামই এখন বড় দুশ্চিন্তা নেভিল মাসকেলাইন: একটি প্যাডেড স্যুট পরা পুরুষ কীভাবে নেভিগেশন শিল্পে বিপ্লব আনলেন মাদারল্যান্ড কখনো ভোলে না’ বীরকে —তাইওয়ানে গোপন মিশনে শহীদ উউ শিকে স্মরণ করছে চীন বার্নার্ড জুলিয়ানের করুণ জীবন— যার উত্থান ও পতন সমান নাটকীয় ১৯২৯—যে বছরে ভেঙে পড়েছিল আমেরিকার স্বপ্ন নগদহীন পেমেন্ট ভালো—কিন্তু সেটি ব্যর্থ হলে সমস্যা মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫৭)

পুতিনের দাবি: ইউক্রেন দোনবাস অঞ্চল ত্যাগ করবে, ন্যাটো নয়, পশ্চিমা সেনাও নয়

মূল দাবি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে দেশটি দোনবাস অঞ্চল ত্যাগ করবে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন করা যাবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত তিনটি সূত্র।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক
আলাস্কায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চার বছরের মধ্যে প্রথমবার রাশিয়া-মার্কিন শীর্ষ বৈঠকে বসেন পুতিন। তিন ঘণ্টার বৈঠকের বেশির ভাগ সময় ইউক্রেন ইস্যুতেই আলোচনা হয়। বৈঠকের পর পুতিন বলেন, এ আলোচনা ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দিতে পারে। তবে কোনো পক্ষই বিস্তারিত শর্ত প্রকাশ করেনি।

প্রস্তাবিত শান্তি-চুক্তির রূপরেখা
সূত্র অনুযায়ী, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে দেওয়া আগের দাবিগুলোর কিছুটা শিথিল করেছেন। তখন তিনি ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে তিনি কেবল দোনবাসের বাকি অংশ ইউক্রেন থেকে ছাড়ার দাবি বজায় রেখেছেন। বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার বর্তমান ফ্রন্টলাইন স্থির রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বর্তমানে রাশিয়া দোনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝিয়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এ ছাড়া রাশিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, খারকিভ, সুমি ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্কের ছোট কিছু দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতে পারে।

ন্যাটো ও সেনা সীমাবদ্ধতা
পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে:

ইউক্রেন কখনো ন্যাটোতে যোগ দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কাছ থেকে পূর্বদিকে সম্প্রসারণ না করার আইনি নিশ্চয়তা।

ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা।

কোনো পশ্চিমা শান্তিরক্ষী সেনা ইউক্রেনে অবস্থান করবে না।

ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন এখনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছিলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি দোনবাসকে দেশের প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ন্যাটোতে যোগদান ইউক্রেনের সংবিধানে সংরক্ষিত একটি লক্ষ্য এবং জেলেনস্কির মতে, এ বিষয়ে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।

মার্কিন ও ন্যাটোর অবস্থান
হোয়াইট হাউস ও ন্যাটো এখনো রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক র‍্যান্ড করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল চারাপ বলেছেন, দোনবাস থেকে ইউক্রেনকে সরে যাওয়ার দাবি রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাঁর মতে, এই প্রস্তাব ট্রাম্পের কাছে শান্তির বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হতে পারে।

যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যদি ইউক্রেন দোনবাস ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তবে যুদ্ধ চলতেই থাকবে। তারা এটিও প্রশ্ন তুলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডকে বৈধতা দেবে কি না।

পুতিন স্বীকার করেছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়ার অর্থনীতি বড় চাপের মুখে পড়বে। ট্রাম্প অন্যদিকে জানিয়েছেন, তিনি এই ‘রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের’ ইতি টেনে ‘শান্তির রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে স্মরণীয় হতে চান।

জেলেনস্কির বৈধতা প্রশ্নে সন্দেহ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি, তবে আগে সব শর্ত পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচন হয়নি বলে তাঁর শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা আছে কি না। তবে কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি এখনো বৈধ প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক সংশয়
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, পুতিন সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে চান। ফলে পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

সম্ভাব্য সমঝোতার পথ
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ৬ আগস্ট মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। সম্ভাব্য চুক্তির মধ্যে একটি হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ স্বীকৃতি দিতে পারে। অন্য বিকল্প হলো ২০২২ সালের ইস্তানবুল আলোচনায় ফিরে যাওয়া, যেখানে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থানের বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা হয়েছিল।

একজন সূত্র বলেছেন, “এখানে দুটি পথ—শান্তি অথবা যুদ্ধ। শান্তি না হলে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ক্রেপাসকুলার সাপ: প্রকৃতির এক রহস্যময় সত্তা

পুতিনের দাবি: ইউক্রেন দোনবাস অঞ্চল ত্যাগ করবে, ন্যাটো নয়, পশ্চিমা সেনাও নয়

০৩:৫১:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

মূল দাবি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে দেশটি দোনবাস অঞ্চল ত্যাগ করবে, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করবে এবং নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখবে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনে কোনো পশ্চিমা সেনা মোতায়েন করা যাবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ক্রেমলিনের উচ্চপর্যায়ের চিন্তাভাবনার সঙ্গে যুক্ত তিনটি সূত্র।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক
আলাস্কায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে চার বছরের মধ্যে প্রথমবার রাশিয়া-মার্কিন শীর্ষ বৈঠকে বসেন পুতিন। তিন ঘণ্টার বৈঠকের বেশির ভাগ সময় ইউক্রেন ইস্যুতেই আলোচনা হয়। বৈঠকের পর পুতিন বলেন, এ আলোচনা ইউক্রেনে শান্তির পথ খুলে দিতে পারে। তবে কোনো পক্ষই বিস্তারিত শর্ত প্রকাশ করেনি।

প্রস্তাবিত শান্তি-চুক্তির রূপরেখা
সূত্র অনুযায়ী, পুতিন ২০২৪ সালের জুনে দেওয়া আগের দাবিগুলোর কিছুটা শিথিল করেছেন। তখন তিনি ইউক্রেনকে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে তিনি কেবল দোনবাসের বাকি অংশ ইউক্রেন থেকে ছাড়ার দাবি বজায় রেখেছেন। বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার বর্তমান ফ্রন্টলাইন স্থির রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বর্তমানে রাশিয়া দোনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝিয়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এ ছাড়া রাশিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, খারকিভ, সুমি ও দ্নিপ্রোপেত্রোভস্কের ছোট কিছু দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতে পারে।

ন্যাটো ও সেনা সীমাবদ্ধতা
পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে:

ইউক্রেন কখনো ন্যাটোতে যোগ দেবে না।

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর কাছ থেকে পূর্বদিকে সম্প্রসারণ না করার আইনি নিশ্চয়তা।

ইউক্রেন সেনাবাহিনীর ওপর সীমাবদ্ধতা।

কোনো পশ্চিমা শান্তিরক্ষী সেনা ইউক্রেনে অবস্থান করবে না।

ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন এখনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছিলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি দোনবাসকে দেশের প্রতিরক্ষা দুর্গ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ন্যাটোতে যোগদান ইউক্রেনের সংবিধানে সংরক্ষিত একটি লক্ষ্য এবং জেলেনস্কির মতে, এ বিষয়ে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই।

মার্কিন ও ন্যাটোর অবস্থান
হোয়াইট হাউস ও ন্যাটো এখনো রাশিয়ার প্রস্তাব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন থিঙ্ক ট্যাঙ্ক র‍্যান্ড করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল চারাপ বলেছেন, দোনবাস থেকে ইউক্রেনকে সরে যাওয়ার দাবি রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে অগ্রহণযোগ্য। তাঁর মতে, এই প্রস্তাব ট্রাম্পের কাছে শান্তির বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে হতে পারে।

যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার হুমকি
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যদি ইউক্রেন দোনবাস ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তবে যুদ্ধ চলতেই থাকবে। তারা এটিও প্রশ্ন তুলেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডকে বৈধতা দেবে কি না।

পুতিন স্বীকার করেছেন, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে রাশিয়ার অর্থনীতি বড় চাপের মুখে পড়বে। ট্রাম্প অন্যদিকে জানিয়েছেন, তিনি এই ‘রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের’ ইতি টেনে ‘শান্তির রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে স্মরণীয় হতে চান।

জেলেনস্কির বৈধতা প্রশ্নে সন্দেহ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ জানিয়েছেন, পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি, তবে আগে সব শর্ত পরিষ্কার করতে হবে। পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, জেলেনস্কির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচন হয়নি বলে তাঁর শান্তি-চুক্তি স্বাক্ষরের বৈধতা আছে কি না। তবে কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জেলেনস্কি এখনো বৈধ প্রেসিডেন্ট।

আন্তর্জাতিক সংশয়
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, পুতিন সত্যিই যুদ্ধ শেষ করতে চান। ফলে পশ্চিমা দেশগুলো সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

সম্ভাব্য সমঝোতার পথ
সূত্রগুলো জানিয়েছেন, ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ৬ আগস্ট মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। সম্ভাব্য চুক্তির মধ্যে একটি হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা, যা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ স্বীকৃতি দিতে পারে। অন্য বিকল্প হলো ২০২২ সালের ইস্তানবুল আলোচনায় ফিরে যাওয়া, যেখানে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থানের বিনিময়ে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা হয়েছিল।

একজন সূত্র বলেছেন, “এখানে দুটি পথ—শান্তি অথবা যুদ্ধ। শান্তি না হলে যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।”