অর্থনৈতিক বৈষম্য কি উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ও বাস্তবভিত্তিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে আমরা এই প্রশ্নটি আলোচনা করেছি। সেখানে আমাদের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল উত্তর দেন, “কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে না? বৈষম্যের বিভিন্ন দিক—সুযোগের বৈষম্য, আয়ের বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য এবং ক্ষমতার বৈষম্য—সবকিছুই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মাত্রা যদি খুব বেশি হয় বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সেটি উন্নয়নকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে আসল প্রশ্ন হলো, আপনি তখন কী করবেন? আর চিকিৎসা কি কখনও রোগের চেয়েও খারাপ হয়ে যায় না?”
কোনো দেশে উচ্চ মাত্রার অর্থনৈতিক বৈষম্য মানুষের সামাজিক–অর্থনৈতিক সিঁড়িতে ওপরে ওঠার সক্ষমতা সীমিত করে, ফলে সার্বজনীন প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমে যায়। বিপরীতে, উচ্চ বৈষম্য কমাতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, মানবসম্পদ শক্তিশালী হয় এবং দারিদ্র্য আরও দ্রুত কমে।
আমরা জানি, ভাগাভাগি সমৃদ্ধি বাড়ানো এবং প্রধান উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের জন্য বৈষম্য মোকাবিলা অপরিহার্য। কিন্তু বৈষম্য ঠিক কখন “খুব বেশি” হয়ে ওঠে? কোন নীতিগত সমাধানগুলো সবচেয়ে কার্যকর?
বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক বৈষম্য কীভাবে পর্যবেক্ষণ করে
বৈষম্য কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে হলে আগে সেটিকে সঠিকভাবে মাপতে হয়। বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য ও বৈষম্য প্ল্যাটফর্ম ১৭২টি দেশের জন্য জিনি সূচকের হিসাব দেয়—জনসংখ্যার মধ্যে আয় বা ভোগের বণ্টন কতটা সমান বা অসমান তার একটি পরিমাপ—যা বিশ্বের প্রায় ৯৮ শতাংশ মানুষের আওতা জুড়ে। এই মূল্যবান সরঞ্জাম বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাত্রা মূল্যায়নে সহায়তা করে। আমরা জিনি সূচক বেছে নিয়েছি আংশিকভাবে এর দীর্ঘদিনের ব্যবহার এবং বিস্তৃত পরিচিতির কারণে।
এই প্ল্যাটফর্মের উপাত্তের ভিত্তিতে ২০২৪ সালে আমরা বিশ্বব্যাংকের করপোরেট স্কোরকার্ডে একটি নতুন বৈশ্বিক সূচক যুক্ত করেছি: উচ্চ বৈষম্যসম্পন্ন দেশের সংখ্যা—যেসব দেশের জিনি সূচক ৪০-এর বেশি। সর্বশেষ তথ্য দেখায়, বিশ্বের প্রতি চার জনে একজনেরও বেশি মানুষ উচ্চ বৈষম্যযুক্ত দেশে বসবাস করেন; এদের বড় অংশ সাহারা–দক্ষিণ আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত।

অর্থনৈতিক বৈষম্য পর্যবেক্ষণের চ্যালেঞ্জ
আমাদের এই সূচকটি উপকারী হলেও, এটি বৈষম্য মাপার বহু পদ্ধতির একটি মাত্র এবং প্রতিটি পদ্ধতিরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, দারিদ্র্য ও বৈষম্য প্ল্যাটফর্মে ব্যবহৃত হিসাব মূলত গৃহস্থালি জরিপের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু আয় বণ্টনের একেবারে নিচু ও একেবারে উঁচু প্রান্তের মানুষ—অর্থাৎ চরম সীমার গোষ্ঠী—অনেক সময় কম প্রতিফলিত হন; কম রিপোর্ট দেওয়া বা সাড়া না দেওয়ার কারণেও এমনটি ঘটে।
তথ্য হালনাগাদের ঘনত্বও দেশে দেশে ভিন্ন। কোথাও বছরে একবার করে হিসাব আপডেট হয়, আবার কোথাও তা আরও কম ঘনঘন। এর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা এবং বহু উচ্চ-আয় দেশ সাধারণত ব্যয়ের পর হাতে থাকা আয়ের তথ্য (ডিসপোজেবল ইনকাম) ব্যবহার করে; বিপরীতে অধিকাংশ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ ভোগ ব্যয়ের তথ্যের ওপর নির্ভর করে—মূলত তথ্যের প্রাপ্যতার কারণে।
আরও কিছু বিষয়ের কারণে দেশভেদে বৈষম্যের হিসাব তুলনাযোগ্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন, কোনো কোনো দেশ গ্রাম ও শহরের দামের পার্থক্য সমন্বয় করে প্রকৃত গৃহস্থালি আয় বা ভোগ নির্ণয় করে, আবার কিছু দেশ তা করে না। সময়ের সঙ্গে তুলনায়ও সমস্যা হতে পারে, কারণ অনেক দেশ তাদের জরিপের নকশা ও পদ্ধতি পরিবর্তন করে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ঘাটতি কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—যেমন গৃহস্থালি জরিপকে করের নথি বা অন্যান্য প্রশাসনিক তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। তবে উচ্চ-আয় দেশের বাইরে সমন্বিত ব্যক্তিগত আয়করের তথ্য অনেক সময় সীমিত থাকে।
নীতিনির্ধারণ শক্তিশালী করতে উন্নত তথ্যভিত্তিতে বিনিয়োগ
আরও সঠিক ও সময়োপযোগী তথ্য পাওয়া গেলে অর্থনৈতিক বৈষম্য মাপা ও পর্যবেক্ষণ আরও উন্নত হবে—যা ভালো নীতি প্রণয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বব্যাংক দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে তাদের কল্যাণ–সংক্রান্ত তথ্যের মানোন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, তথ্যঘাটতি পূরণে কর ও প্রশাসনিক তথ্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং আয় ও সম্পদের বণ্টন আরও ভালোভাবে ধরতে উদ্ভাবনী পদ্ধতি উন্নয়ন।
উদাহরণ হিসেবে, নিম্ন-আয় দেশগুলোর জন্য আমাদের তহবিল আইডিএ—ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন—এর ২১তম পুনঃপূরণের (আইডিএ২১) অংশ হিসেবে আমরা ৩০টি আইডিএ দেশকে গৃহস্থালি জরিপে বিনিয়োগে সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছি, যাতে তারা আরও উন্নত, প্রমাণভিত্তিক নীতি নকশা করতে পারে।
দারিদ্র্য দূর করা এবং বাসযোগ্য গ্রহে ভাগাভাগি সমৃদ্ধি বাড়ানোর আমাদের লক্ষ্য এমন এক পৃথিবীর কথা কল্পনা করে, যেখানে প্রবৃদ্ধি শুধু শক্তিশালীই নয়, পাশাপাশি বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলকও—অর্থাৎ আয়ের বণ্টনের সব স্তরের মানুষ, বিশেষ করে সবচেয়ে নিচের স্তরের মানুষ, পদ্ধতিগতভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এই লক্ষ্য অর্জনে অর্থনৈতিক বৈষম্যের চালকগুলোকে বুঝতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন আরও ভালো তথ্য, শক্তিশালী অংশীদারিত্ব এবং উন্মুক্ত সংলাপ। চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণ ও সহযোগিতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অব্যাহত থাকবে—যাতে প্রবৃদ্ধির সুফল সবার কাছে পৌঁছায় এবং কেউ পিছিয়ে না থাকে।
লুইস ফেলিপে লোপেস-ক্যালভা, ডিওন ফিল্মার, হাইশান ফু 


















