১২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ তিউনিসিয়ায় কারাগারে বর্বর নির্যাতন! বিরোধী নেতার পরিবারে চরম ক্ষোভ প্রো- ও অ্যান্টি-লকডাউন মিছিল গাজীপুরে পেট্রল ঢেলে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই বাসে আগুন ফরিদপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ বরগুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ যাত্রী কমায় ফাঁকা দূরপাল্লার বাস—নিষিদ্ধ দলের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব পদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ: ট্রাকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

আট বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়নি: সংকটে বাংলাদেশ

আট বছরের অচলাবস্থা

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আজ আট বছর কেটে গেছে, কিন্তু একজনকেও দেশে ফেরানো যায়নি। বরং নতুন করে আরও মানুষ এসেছে। এখন কক্সবাজারে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে।

স্থানীয়দের চাপ ও উদ্বেগ

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি স্থানীয়দের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে।

অপরাধ বাড়ছে: মাদক, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ কমছে।
পাহাড়-জঙ্গল দখল হয়ে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বাড়তি চাপ পড়ছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা—যদি দ্রুত প্রত্যাবাসন না হয়, তাহলে একসময় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সরাসরি সংঘাত দেখা দেবে।

আন্তর্জাতিক মনোযোগ কমেছে

প্রথম দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরব ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ও মহামারির মতো বৈশ্বিক ঘটনাবলিতে মনোযোগ সরে গেছে।

ফলে মানবিক সহায়তা কমেছে।
দাতা সংস্থার ক্লান্তি দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা শিক্ষা ও খাদ্য সংকটে পড়ছে, অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।


তহবিলের সংকট

২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮৫২ মিলিয়ন ডলার, পাওয়া গেছে মাত্র ৩০%।
২০২৫ সালে আবেদন করা হয়েছিল ৯৩৪ মিলিয়ন ডলার, এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৫%।
শিক্ষাক্ষেত্রে ৪,৫০০ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে ২.২ লাখ শিশু পড়াশোনার বাইরে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি খাবারের ভাউচার অর্ধেকে নামিয়েছে, যা পরিবারগুলোর জন্য মারাত্মক আঘাত।
জাতিসংঘ মহাসচিব এই অবস্থাকে “মানবিক অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অপরাধ ও নিরাপত্তা হুমকি

তহবিল কমার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পে অপরাধ বেড়েছে।

২০২২–২৩ সালে ক্যাম্পভিত্তিক সহিংসতার ৬০% ঘটনা ঘটেছে।
২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৫২০টি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১,২০০-র বেশি রোহিঙ্গা।
মাদক ও অস্ত্র পাচার, খুন ও অপহরণ বেড়ে গেছে, পুলিশ ও প্রশাসন কার্যত বিপাকে।


প্রত্যাবাসন কেন আটকে আছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২০১৮ সালে প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও তা কার্যকর হয়নি।

রোহিঙ্গাদের দাবি ছিল নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও জমি ফেরতের নিশ্চয়তা।
জান্তা সরকার এসব উপেক্ষা করেছে।
চীনের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালে সীমিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও ভেস্তে যায়।
ফলে বরং নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে, সংকট আরও গভীর হয়েছে।

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘ হলে বাংলাদেশের জন্য নানা ঝুঁকি তৈরি হবে।

সামাজিক: স্থানীয়-রোহিঙ্গা সংঘাতের ঝুঁকি।
অর্থনৈতিক: কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মারাত্মক চাপ।
নিরাপত্তা: অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হুমকি।
কূটনৈতিক: উন্নয়ন অর্জন ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা।


আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে। লক্ষ্য হলো—

নতুন তহবিল সংগ্রহ
মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি
মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা
কিন্তু জান্তা সরকার বারবার অজুহাত দেখিয়ে প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিভঙ্গি

ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা বলছেন, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া তারা ফিরবেন না। রাখাইনে চলমান যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা তাদের ফেরত যাওয়ার পথে বড় বাধা।
এক নারী বলেন, “দেশে ফেরার জন্য মন কাঁদে, কিন্তু যুদ্ধ চললে সেখানে ফিরে যাওয়া মানে নতুন করে নির্যাতন।”

করণীয় ও নীতি পরামর্শ

বাংলাদেশের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ:

কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো – ভারত, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা।

নতুন দাতা খোঁজা – ইসলামী দেশ ও কর্পোরেট খাতকে সহায়তায় আনা।

স্থানীয়দের সহায়তা – কক্সবাজারের মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা।

নিরাপত্তা জোরদার – ক্যাম্পে অপরাধ দমন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।

আন্তর্জাতিক বিচার – গণহত্যার মামলা ও আইসিজেতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।

আরো জটিল হয়েছে

আট বছরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হয়নি, বরং আরও জটিল আকার নিয়েছে। স্থানীয়রা বিপাকে, সরকার চাপের মুখে, আর আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমেই কমছে। প্রত্যাবাসন ছাড়া এ সংকটের কোনো টেকসই সমাধান নেই। বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বিশ্বকে আবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনোযোগী করা এবং মিয়ানমারকে কার্যকরভাবে চাপ দেওয়া।

জনপ্রিয় সংবাদ

কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ

আট বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়নি: সংকটে বাংলাদেশ

১২:২৩:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

আট বছরের অচলাবস্থা

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আজ আট বছর কেটে গেছে, কিন্তু একজনকেও দেশে ফেরানো যায়নি। বরং নতুন করে আরও মানুষ এসেছে। এখন কক্সবাজারে রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে।

স্থানীয়দের চাপ ও উদ্বেগ

রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি স্থানীয়দের জন্য বড় সংকট তৈরি করেছে।

অপরাধ বাড়ছে: মাদক, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও খুন প্রতিদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে স্থানীয়দের কাজের সুযোগ কমছে।
পাহাড়-জঙ্গল দখল হয়ে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় বাড়তি চাপ পড়ছে।
স্থানীয়দের আশঙ্কা—যদি দ্রুত প্রত্যাবাসন না হয়, তাহলে একসময় রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে সরাসরি সংঘাত দেখা দেবে।

আন্তর্জাতিক মনোযোগ কমেছে

প্রথম দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরব ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ও মহামারির মতো বৈশ্বিক ঘটনাবলিতে মনোযোগ সরে গেছে।

ফলে মানবিক সহায়তা কমেছে।
দাতা সংস্থার ক্লান্তি দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গারা শিক্ষা ও খাদ্য সংকটে পড়ছে, অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।


তহবিলের সংকট

২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন ছিল ৮৫২ মিলিয়ন ডলার, পাওয়া গেছে মাত্র ৩০%।
২০২৫ সালে আবেদন করা হয়েছিল ৯৩৪ মিলিয়ন ডলার, এখন পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৫%।
শিক্ষাক্ষেত্রে ৪,৫০০ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে ২.২ লাখ শিশু পড়াশোনার বাইরে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি খাবারের ভাউচার অর্ধেকে নামিয়েছে, যা পরিবারগুলোর জন্য মারাত্মক আঘাত।
জাতিসংঘ মহাসচিব এই অবস্থাকে “মানবিক অপরাধ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

অপরাধ ও নিরাপত্তা হুমকি

তহবিল কমার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পে অপরাধ বেড়েছে।

২০২২–২৩ সালে ক্যাম্পভিত্তিক সহিংসতার ৬০% ঘটনা ঘটেছে।
২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে ৫২০টি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১,২০০-র বেশি রোহিঙ্গা।
মাদক ও অস্ত্র পাচার, খুন ও অপহরণ বেড়ে গেছে, পুলিশ ও প্রশাসন কার্যত বিপাকে।


প্রত্যাবাসন কেন আটকে আছে

বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২০১৮ সালে প্রত্যাবাসন চুক্তি করলেও তা কার্যকর হয়নি।

রোহিঙ্গাদের দাবি ছিল নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা ও জমি ফেরতের নিশ্চয়তা।
জান্তা সরকার এসব উপেক্ষা করেছে।
চীনের মধ্যস্থতায় ২০২৩ সালে সীমিত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগও ভেস্তে যায়।
ফলে বরং নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে, সংকট আরও গভীর হয়েছে।

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘ হলে বাংলাদেশের জন্য নানা ঝুঁকি তৈরি হবে।

সামাজিক: স্থানীয়-রোহিঙ্গা সংঘাতের ঝুঁকি।
অর্থনৈতিক: কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মারাত্মক চাপ।
নিরাপত্তা: অপরাধ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের হুমকি।
কূটনৈতিক: উন্নয়ন অর্জন ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা।


আন্তর্জাতিক উদ্যোগ

বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘ, কাতারসহ বিভিন্ন দেশের সহযোগিতায় তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করছে। লক্ষ্য হলো—

নতুন তহবিল সংগ্রহ
মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি
মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করা
কিন্তু জান্তা সরকার বারবার অজুহাত দেখিয়ে প্রক্রিয়া ঠেকিয়ে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের দৃষ্টিভঙ্গি

ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা বলছেন, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া তারা ফিরবেন না। রাখাইনে চলমান যুদ্ধ ও অস্থিতিশীলতা তাদের ফেরত যাওয়ার পথে বড় বাধা।
এক নারী বলেন, “দেশে ফেরার জন্য মন কাঁদে, কিন্তু যুদ্ধ চললে সেখানে ফিরে যাওয়া মানে নতুন করে নির্যাতন।”

করণীয় ও নীতি পরামর্শ

বাংলাদেশের জন্য জরুরি কিছু পদক্ষেপ:

কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো – ভারত, চীন ও আসিয়ান দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করা।

নতুন দাতা খোঁজা – ইসলামী দেশ ও কর্পোরেট খাতকে সহায়তায় আনা।

স্থানীয়দের সহায়তা – কক্সবাজারের মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা।

নিরাপত্তা জোরদার – ক্যাম্পে অপরাধ দমন ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো।

আন্তর্জাতিক বিচার – গণহত্যার মামলা ও আইসিজেতে সক্রিয় ভূমিকা রাখা।

আরো জটিল হয়েছে

আট বছরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান হয়নি, বরং আরও জটিল আকার নিয়েছে। স্থানীয়রা বিপাকে, সরকার চাপের মুখে, আর আন্তর্জাতিক সহায়তা ক্রমেই কমছে। প্রত্যাবাসন ছাড়া এ সংকটের কোনো টেকসই সমাধান নেই। বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ হলো—বিশ্বকে আবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনোযোগী করা এবং মিয়ানমারকে কার্যকরভাবে চাপ দেওয়া।