রাতভর হামলা ও আতঙ্ক
শনিবার রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাঙ্ক গাজা নগরীর পূর্ব ও উত্তর শহরতলিতে ভয়াবহ হামলা চালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেতাউন ও শেজাইয়া এলাকায় টানা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। সাবরা মহল্লায় ট্যাঙ্ক থেকে গোলাবর্ষণ হয় এবং বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়। উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়াতেও কয়েকটি ভবন উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে আকাশ আলোকিত হয়ে ওঠে। অনেক পরিবার আতঙ্কে নগরী ছাড়তে বাধ্য হলেও কেউ কেউ বলছেন, মরলেও তাঁরা গাজা ছেড়ে যাবেন না।
ইসরায়েলের সামরিক পরিকল্পনা
ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা জাবালিয়া এলাকায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে, যাতে হামাসের সুড়ঙ্গ ধ্বংস ও ওই অঞ্চলে পুনঃনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এসব অভিযান নতুন এলাকায় লড়াই চালানোর সুযোগ দেবে এবং হামাসের পুনঃপ্রবেশ ঠেকাবে।
চলতি মাসে ইসরায়েল গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এটি তারা হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বর্ণনা করছে। যদিও এ পরিকল্পনা কয়েক সপ্তাহ পর কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতার যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফেরার সুযোগ পাবে।
রবিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ঘোষণা দেন, যুদ্ধবিরতি না হলে গাজা নগরীকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, হামাস যদি যুদ্ধ বন্ধে সম্মত না হয় ও সব বন্দি মুক্ত না করে, তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া ও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের নগরী দখলের পরিকল্পনা প্রমাণ করে তারা যুদ্ধবিরতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। সংগঠনটি বলেছে, যুদ্ধবিরতিই একমাত্র পথ যাতে বন্দিদের ফেরত আনা সম্ভব। এ দায়িত্ব তারা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপিয়েছে।
আলোচনায় থাকা প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, গাজায় আটক ১০ জীবিত বন্দি ও ১৮ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২০০ দীর্ঘমেয়াদি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে পরবর্তী সময়ে স্থায়ী সমাধান ও অবশিষ্ট বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
নেতানিয়াহু গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, প্রায় ৫০ জন বন্দির মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল তাদের মুক্তি ও যুদ্ধের অবসান বিষয়ে আলোচনায় বসবে, তবে সেটি ইসরায়েলের শর্ত মেনেই হতে হবে।
দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকট
গাজা নগরীতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস, যা পুরো জনসংখ্যার অর্ধেক। কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যে মালপত্র নিয়ে পালিয়ে গেছে।
৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, কতবার তাঁকে স্ত্রী ও তিন কন্যাসন্তান নিয়ে ঘর ছাড়তে হয়েছে তা তিনি গুনতে পারেন না। তাঁর মতে, কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। অন্যদিকে ৩১ বছর বয়সী আয়াহ বলেন, তারা আট সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন, অর্থকষ্টের কারণে তাঁরা কোনো তাবু কিনতে বা পরিবহন ভাড়া করতে সক্ষম নন। তাই তারা বাড়িতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা শুক্রবার জানিয়েছে, গাজা নগরী ও আশপাশের এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং তা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইসরায়েল এই মূল্যায়ন প্রত্যাখ্যান করেছে, তবে গাজায় সাহায্য বৃদ্ধির দাবি নাকচ করেনি।
রবিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহারে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৯ জনে, যার মধ্যে ১১৫ জন শিশু।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে প্রবেশ করে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে। তার পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজায় অন্তত ৬২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। একই সঙ্গে অঞ্চলটির বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজার দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরায়েলের নগরী দখল পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনার উদ্যোগ থাকলেও উভয় পক্ষের কঠোর অবস্থানের কারণে সমাধান অনিশ্চিত রয়ে গেছে।
গাজার শহরতলিতে ইসরায়েলি হামলা, অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
-
সারাক্ষণ রিপোর্ট - ১২:৪২:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫
- 80
জনপ্রিয় সংবাদ

























