ভ্রমণ প্রযুক্তিতে এআই-এর প্রতিশ্রুতি
এআই-চালিত ভ্রমণ প্রযুক্তির নির্মাতারা দাবি করেন, তাদের সরঞ্জাম ভ্রমণকে সহজ করে তুলতে পারে—যেমন স্বপ্নের ভ্রমণ পরিকল্পনা করা, হোটেল বা এয়ারলাইন্স পয়েন্ট সর্বাধিক ব্যবহার করা কিংবা রাস্তার ধারে থাকা ঐতিহাসিক ভবন সম্পর্কেও তথ্য জানানো।
কিন্তু আসলেই কি তা সম্ভব? পরীক্ষায় দেখা গেছে—আংশিকভাবে হ্যাঁ। বেশ কয়েকটি এআই-ভিত্তিক ভ্রমণ পরিকল্পনাকারী প্ল্যাটফর্ম ভ্রমণপথ, হোটেল ও রেস্তোরাঁর পরামর্শ দিতে পারে, তবে সবগুলোর সাফল্যের মাত্রা সমান নয়। সেরা প্ল্যাটফর্মগুলো কথোপকথনের ধাঁচে ব্যবহারকারীদের সাড়া দিতে পারে, যেমন ওপেনএআই-এর ChatGPT বা গুগলের Gemini করে থাকে।
তবে সীমাবদ্ধতাও আছে। হালনাগাদ তথ্য সবসময় পাওয়া যায় না, অনেক সময় তারা গুগল ফ্লাইটসের মতো বিশদ তথ্য দিতে পারে না, আর কখনও কখনও পুরোপুরি ভুল তথ্যও তৈরি করে ফেলে। তবুও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এদের থেকে উপকার পাওয়া সম্ভব।
এক্সপিডিয়া ট্রিপ ম্যাচিং
কাজ: ইনস্টাগ্রাম রিলস থেকে ভ্রমণ পরিকল্পনা তৈরি।
এই ভ্রমণ পরিকল্পনাকারী ব্যবহার করা সহজ। কোনো গন্তব্য নিয়ে রিল দেখলে সেটি এক্সপিডিয়াকে সরাসরি বার্তায় পাঠালেই এআই চ্যাটবট ব্যবহারকারীর আগ্রহ (ইতিহাস, খাবার, প্রকৃতি, নৈশজীবন ইত্যাদি) অনুযায়ী প্রস্তাব দেয়।
এক্সপিডিয়ার মার্কেটিং প্রধান জানান, এই টুল মূলত তাদের জন্য যাদের এখনো নির্দিষ্ট কোনো ভ্রমণ পরিকল্পনা নেই, কিন্তু আকর্ষণীয় কোনো জায়গা দেখে আগ্রহী হয়েছেন।
তবে সমস্যা হলো, এটি অনেক সময় সাধারণ পরামর্শ দেয় এবং প্রায়ই এমন হোটেলের নাম প্রস্তাব করে যেগুলো নির্দিষ্ট তারিখে খালি থাকে না। আরও বড় সমস্যা দেখা দেয় যখন এটি যুদ্ধরত অঞ্চলে (যেমন মস্কো হয়ে ট্রানজিট) ভ্রমণের পরামর্শ দেয়, যা নিরাপদ নয়।
মাইন্ডট্রিপ
কাজ: আগ্রহ অনুযায়ী সাজানো ভ্রমণ পরিকল্পনা।
মাইন্ডট্রিপের আকর্ষণ হলো এর ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা। চ্যাটবটের সঙ্গে কথোপকথনের পাশাপাশি মানচিত্র ও ছবি দেয়। শুরুতেই একটি ছোট কুইজ নিয়ে ব্যবহারকারীর আগ্রহ বুঝে নেয়।
অতিরিক্ত সুবিধা হলো—এটি ব্যবহারকারীকে সম্ভাব্য প্রশ্ন প্রস্তাব করে, যাতে ভ্রমণস্থান সম্পর্কে আরও বিশদ তথ্য জানা যায়। এছাড়া এখানে ৩০,০০০-এর বেশি ব্যবহারকারী ও বিষয়বস্তু নির্মাতার গাইড পাওয়া যায়।
তবে দুর্বলতা হলো—ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য সঠিকভাবে দিতে পারে না। অনেক রুটের ক্ষেত্রে ফ্লাইট ভাড়া দেখাতে ব্যর্থ হয়। অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে তুলনামূলকভাবে ভালো কাজ করলেও আন্তর্জাতিক ভ্রমণে সীমাবদ্ধ।
লায়লা
কাজ: ভ্রমণ পরিকল্পনায় আবেগের প্রতিফলন।
লায়লার সিইও’র মতে, ব্যবহারকারীরা তাদের ভ্রমণের অনুভূতি বা মনের অবস্থা জানালে এটি সবচেয়ে ভালো কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, শরতের সময় ভারমন্ট (Vermont) ভ্রমণের কথা বললে লায়লা বেশ প্রাণবন্ত ভঙ্গিতে “চমৎকার কিছু করার” প্রস্তাব দেয়।
তবে কিছু সীমাবদ্ধতা আছে—১০টির কম বার্তা পাঠানোর পরই পেইড সদস্যপদ নিতে হয়। বছরে ৪৯ ডলারের সদস্যপদ নিলে কিছু হোটেলে ২০% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু বিনামূল্যের অন্যান্য টুল একই ধরনের সুবিধা দেওয়ায় অনেকের কাছে লায়লার অর্থ প্রদানের যৌক্তিকতা কম মনে হতে পারে।
গন্ডোলা
কাজ: লয়্যালটি পয়েন্ট ও মাইলসের সর্বোত্তম ব্যবহার।
গন্ডোলা মূলত তাদের জন্য, যারা বছরে ১০ বারের বেশি ভ্রমণ করেন। এটি বিভিন্ন হোটেল চেইন (যেমন ম্যারিয়ট (Marriott), হিলটন, হায়াত (Hyatt)) একসঙ্গে তুলনা করে সর্বোত্তম মূল্য নির্ধারণ করে।
বিশেষ সুবিধা হলো—ফ্লাইট বা হোটেল বুক করার পরও গন্ডোলা ভাড়া পর্যবেক্ষণ করে। দাম কমে গেলে ব্যবহারকারীকে পুনরায় বুক করতে দেয়। তবে সরাসরি ফ্লাইট বুক করা যায় না। এটি নতুন ভ্রমণ পরিকল্পনার পরিবর্তে তুলনামূলক বিশ্লেষণ টুল হিসেবে বেশি কার্যকর।
রে-ব্যান মেটা চশমা
কাজ: ভ্রমণকালে সরাসরি তথ্য পাওয়া।
রে-ব্যান মেটা চশমা ব্যবহারকারীকে আশপাশের জায়গা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে পারে। শুধু “Hey, Meta” বললেই চশমার এআই ঐতিহাসিক ফোয়ারা বা অন্য যে কোনো স্থাপনা শনাক্ত করে অডিও তথ্য দেয়।
এছাড়া ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি ও ইতালীয় ভাষার লাইভ অনুবাদ করে। যদিও গুগল ট্রান্সলেট ২৫০ ভাষার বেশি সমর্থন করে, তবুও এই ফিচার ভ্রমণে সহায়ক হতে পারে।
চশমার দাম ২৯৯ ডলার থেকে শুরু, বিভিন্ন ডিজাইনে পাওয়া যায়। ব্যাটারি লাইফ প্রায় চার ঘণ্টা। তবে এর ক্যামেরা নিয়ে গোপনীয়তা প্রশ্ন তুলতে পারে, কারণ ছবি বা ভিডিও তোলার সময় অন্যদের সতর্ক করার জন্য লাইট জ্বলে ওঠে।