১২:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ তিউনিসিয়ায় কারাগারে বর্বর নির্যাতন! বিরোধী নেতার পরিবারে চরম ক্ষোভ প্রো- ও অ্যান্টি-লকডাউন মিছিল গাজীপুরে পেট্রল ঢেলে বরিশালের উজিরপুরে বিএনপি কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ফরিদপুরে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী টাঙ্গাইল ও ফেনীতে দুই বাসে আগুন ফরিদপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধ বরগুনায় জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ যাত্রী কমায় ফাঁকা দূরপাল্লার বাস—নিষিদ্ধ দলের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব পদ্মা সেতুর সামনে এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ: ট্রাকে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণ

অস্থিতিশীল মিয়ানমার: ভারতের জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

মোহাম্মদ তাহা আলী

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপিদোতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত, যা একসময় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল, এখন অনিশ্চিত সহিংসতা, মানবিক সংকট ও উদ্বাস্তু প্রবাহের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি দিল্লিকে বাধ্য করছে তাদের “লুক ইস্ট” নীতি ও সামরিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে। সীমান্তের এই অস্থিরতা কার্যত এক “ডি-ফ্যাক্টো বাফার জোন” তৈরি করেছে, যা ভারতের সার্বভৌম ভূখণ্ড নয়, আবার মিয়ানমারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণেও নেই।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের প্রাতিষ্ঠানিক শাসন ভেঙে পড়ে। এর সুযোগে দীর্ঘদিনের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (EAO) ও নবগঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (PDF) সীমান্ত অঞ্চলে তৎপরতা বাড়ায়। শিন, কাচিন ও উত্তর শান প্রদেশে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হয়, যেখানে সাধারণ গ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অ্যান্টি-জুন্টা গেরিলারা ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, যেখানে ঘন বন ও দুর্গম ভূখণ্ড তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে ২০২১ সালের পর থেকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মিয়ানমার নাগরিক ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসন ও মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ তৈরি করেছে।

Myanmar Ethnic Rebels Capture Town Next to Bangladesh Border, 6 Army Bases Near India Border | World News - News18

এর পাশাপাশি সীমান্তে বেআইনি অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক বেড়ে উঠেছে। জেড, কাঠ ও মাদক পাচারে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কর আরোপ করছে। এতে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব যেমন দুর্বল হচ্ছে, তেমনি ভারতের সীমান্তবাজারেও আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডে অস্ত্র পাচার ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ বাড়ছে, যার সঙ্গে মিয়ানমারভিত্তিক মিলিশিয়াদের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতের “লুক ইস্ট” নীতির জন্য চ্যালেঞ্জ

১৯৯০-এর দশকে চালু হওয়া ভারতের “লুক ইস্ট” নীতি এবং ২০১৪ সালে “অ্যাক্ট ইস্ট” নামে পুনঃব্র্যান্ডকৃত উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করা। মিয়ানমার ছিল এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু, কারণ তার ভূখণ্ড দিয়েই আসিয়ান অঞ্চলে পৌঁছানোর সবচেয়ে ছোট্ট পথ।

কিন্তু অস্থিতিশীলতা বড় প্রকল্পগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক কিংবা কালাদান মাল্টিমডাল ট্রানজিট রুটের কাজ বারবার থমকে যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণকারী দলকে হামলার শিকার হতে হচ্ছে, বন্দরের উন্নয়ন আটকে যাচ্ছে নিরাপত্তা ছাড়পত্রে দেরির কারণে।

India's Act East Policy:An Attempt to Challenge Chinese Dominance

এখন ভারতের কৌশল বদলানো জরুরি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের বেসামরিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করলে প্রকল্পগুলো স্থানীয় জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রভাব খাটাতে দেবে না।

উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সামরিক কৌশলের রূপান্তর

ভারতের সামরিক কৌশল এতদিন মূলত রাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত ও প্রচলিত হুমকির দিকে নজর দিয়েছিল। উত্তর-পূর্বে বিদ্রোহ দমনে কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকলেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র হুমকি কৌশলগতভাবে খুব কম বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। মিয়ানমারের রাজনৈতিক শূন্যতা এখন নতুন সামরিক কৌশল দাবি করছে—যা “কনটেস্টেড বাফার অপারেশন” নামে পরিচিত হতে পারে। এর অর্থ হলো প্রচলিত প্রতিরক্ষা কৌশলের সঙ্গে সীমান্তঘেঁষা বিশেষ ধরনের প্রতিরোধমূলক ও গেরিলা-বিরোধী তৎপরতার সমন্বয়।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

  • • সীমান্তে দ্রুত ক্রিয়াশীল ইউনিট মোতায়েন,যারা জঙ্গলে যুদ্ধ ও গেরিলা সরবরাহ লাইন ধ্বংসে দক্ষ।
    • নবগঠিত মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরকে সীমিত ক্রস-বর্ডার অভিযান পরিচালনায় প্রস্তুত রাখা।
    • থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা সহযোগিতা বাড়ানো, যাতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র পাচারের গতিবিধি ট্র্যাক করা যায়।
    • সীমান্তের কিছু অংশে ড্রোন ও সেন্সর নজরদারি স্থাপন, আবার বাণিজ্যকেন্দ্রিক অংশগুলোতে আধুনিক কাস্টমস চেকপোস্ট উন্নয়ন।
    • আসাম রাইফেলসকে আরও পেশাদারভাবে আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করা, যাতে তারা স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

নীতি সুপারিশ

১. অভিযোজনযোগ্য সংযোগ কাঠামো: সীমান্ত প্রকল্পগুলোকে মডুলার আকারে বাস্তবায়ন করা, যাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রতিটি অংশ থামানো বা চালু করা যায়।
২. প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা: ড্রোন, সেন্সর ও জিও-স্পেশাল অ্যানালিটিকস ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত অংশে রিয়েল-টাইম নজরদারি নিশ্চিত করা।
৩. কৌশলগত গোয়েন্দা সহযোগিতা: বিমস্টেক ও কোয়াড কাঠামোর আওতায় গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বাড়ানো, যাতে সীমান্ত অস্থিতিশীলতা থেকে উদ্ভূত হুমকি মোকাবিলা করা যায়।
৪. মানবিক সহায়তায় সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাম্প চালু করে উদ্বাস্তু ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্দশা লাঘব, যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমানো যায়।
৫. সামরিক কৌশলের নবায়ন: “কনটেস্টেড বাফার অপারেশন” ধারণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক কৌশলে যুক্ত করা এবং সীমান্ত অস্থিরতায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য নিয়মিত মহড়া চালানো।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতা ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তকে এক নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে। স্থিতিশীল সীমান্ত এখন রূপ নিয়েছে এক “ডি-ফ্যাক্টো বাফার জোন”-এ। এ অবস্থায় ভারতের উচিত তাদের “লুক ইস্ট” নীতি ও সামরিক কৌশল পুনর্গঠন করা। অভিযোজনযোগ্য সংযোগ কাঠামো, সীমান্তভিত্তিক সামরিক প্রস্তুতি এবং আঞ্চলিক গোয়েন্দা সহযোগিতা ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারকেও সুরক্ষিত রাখবে। তবে এই সীমান্ত আগামী অনেক দিন ধরেই অসম্পূর্ণ শাসন ও অস্থিতিশীলতার বাস্তবতা বহন করবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

কম্পিউটিং দুনিয়ায় নতুন বিপ্লবের দুয়ারে বিশ্ব: সামনে আসছে কোয়ান্টাম যুগ

অস্থিতিশীল মিয়ানমার: ভারতের জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ

০৩:৫৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫

মোহাম্মদ তাহা আলী

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপিদোতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমার এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত, যা একসময় তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল, এখন অনিশ্চিত সহিংসতা, মানবিক সংকট ও উদ্বাস্তু প্রবাহের নতুন কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতি দিল্লিকে বাধ্য করছে তাদের “লুক ইস্ট” নীতি ও সামরিক কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে। সীমান্তের এই অস্থিরতা কার্যত এক “ডি-ফ্যাক্টো বাফার জোন” তৈরি করেছে, যা ভারতের সার্বভৌম ভূখণ্ড নয়, আবার মিয়ানমারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণেও নেই।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা পরিস্থিতি

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের প্রাতিষ্ঠানিক শাসন ভেঙে পড়ে। এর সুযোগে দীর্ঘদিনের জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (EAO) ও নবগঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (PDF) সীমান্ত অঞ্চলে তৎপরতা বাড়ায়। শিন, কাচিন ও উত্তর শান প্রদেশে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হয়, যেখানে সাধারণ গ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অ্যান্টি-জুন্টা গেরিলারা ঘাঁটি গড়ে তুলেছে, যেখানে ঘন বন ও দুর্গম ভূখণ্ড তাদের আশ্রয় দিচ্ছে। জাতিসংঘের হিসাবে ২০২১ সালের পর থেকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মিয়ানমার নাগরিক ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, যা স্থানীয় প্রশাসন ও মানবিক সংস্থাগুলোর ওপর চাপ তৈরি করেছে।

Myanmar Ethnic Rebels Capture Town Next to Bangladesh Border, 6 Army Bases Near India Border | World News - News18

এর পাশাপাশি সীমান্তে বেআইনি অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক বেড়ে উঠেছে। জেড, কাঠ ও মাদক পাচারে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো কর আরোপ করছে। এতে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব যেমন দুর্বল হচ্ছে, তেমনি ভারতের সীমান্তবাজারেও আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ছে। অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডে অস্ত্র পাচার ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ বাড়ছে, যার সঙ্গে মিয়ানমারভিত্তিক মিলিশিয়াদের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে।

ভারতের “লুক ইস্ট” নীতির জন্য চ্যালেঞ্জ

১৯৯০-এর দশকে চালু হওয়া ভারতের “লুক ইস্ট” নীতি এবং ২০১৪ সালে “অ্যাক্ট ইস্ট” নামে পুনঃব্র্যান্ডকৃত উদ্যোগের মূল লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করা। মিয়ানমার ছিল এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু, কারণ তার ভূখণ্ড দিয়েই আসিয়ান অঞ্চলে পৌঁছানোর সবচেয়ে ছোট্ট পথ।

কিন্তু অস্থিতিশীলতা বড় প্রকল্পগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপাক্ষিক মহাসড়ক কিংবা কালাদান মাল্টিমডাল ট্রানজিট রুটের কাজ বারবার থমকে যাচ্ছে। সড়ক নির্মাণকারী দলকে হামলার শিকার হতে হচ্ছে, বন্দরের উন্নয়ন আটকে যাচ্ছে নিরাপত্তা ছাড়পত্রে দেরির কারণে।

India's Act East Policy:An Attempt to Challenge Chinese Dominance

এখন ভারতের কৌশল বদলানো জরুরি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি ও স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারের বেসামরিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করলে প্রকল্পগুলো স্থানীয় জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে প্রভাব খাটাতে দেবে না।

উত্তর-পূর্ব সীমান্তে সামরিক কৌশলের রূপান্তর

ভারতের সামরিক কৌশল এতদিন মূলত রাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত ও প্রচলিত হুমকির দিকে নজর দিয়েছিল। উত্তর-পূর্বে বিদ্রোহ দমনে কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকলেও আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে আসা সশস্ত্র হুমকি কৌশলগতভাবে খুব কম বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। মিয়ানমারের রাজনৈতিক শূন্যতা এখন নতুন সামরিক কৌশল দাবি করছে—যা “কনটেস্টেড বাফার অপারেশন” নামে পরিচিত হতে পারে। এর অর্থ হলো প্রচলিত প্রতিরক্ষা কৌশলের সঙ্গে সীমান্তঘেঁষা বিশেষ ধরনের প্রতিরোধমূলক ও গেরিলা-বিরোধী তৎপরতার সমন্বয়।

প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

  • • সীমান্তে দ্রুত ক্রিয়াশীল ইউনিট মোতায়েন,যারা জঙ্গলে যুদ্ধ ও গেরিলা সরবরাহ লাইন ধ্বংসে দক্ষ।
    • নবগঠিত মাউন্টেন স্ট্রাইক কোরকে সীমিত ক্রস-বর্ডার অভিযান পরিচালনায় প্রস্তুত রাখা।
    • থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা সহযোগিতা বাড়ানো, যাতে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র পাচারের গতিবিধি ট্র্যাক করা যায়।
    • সীমান্তের কিছু অংশে ড্রোন ও সেন্সর নজরদারি স্থাপন, আবার বাণিজ্যকেন্দ্রিক অংশগুলোতে আধুনিক কাস্টমস চেকপোস্ট উন্নয়ন।
    • আসাম রাইফেলসকে আরও পেশাদারভাবে আধুনিক নজরদারি প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করা, যাতে তারা স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন ও মানবিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

নীতি সুপারিশ

১. অভিযোজনযোগ্য সংযোগ কাঠামো: সীমান্ত প্রকল্পগুলোকে মডুলার আকারে বাস্তবায়ন করা, যাতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রতিটি অংশ থামানো বা চালু করা যায়।
২. প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা: ড্রোন, সেন্সর ও জিও-স্পেশাল অ্যানালিটিকস ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত অংশে রিয়েল-টাইম নজরদারি নিশ্চিত করা।
৩. কৌশলগত গোয়েন্দা সহযোগিতা: বিমস্টেক ও কোয়াড কাঠামোর আওতায় গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বাড়ানো, যাতে সীমান্ত অস্থিতিশীলতা থেকে উদ্ভূত হুমকি মোকাবিলা করা যায়।
৪. মানবিক সহায়তায় সম্প্রদায়ভিত্তিক উদ্যোগ: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাম্প চালু করে উদ্বাস্তু ও সীমান্তবর্তী জনগণের দুর্দশা লাঘব, যাতে সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রভাব কমানো যায়।
৫. সামরিক কৌশলের নবায়ন: “কনটেস্টেড বাফার অপারেশন” ধারণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সামরিক কৌশলে যুক্ত করা এবং সীমান্ত অস্থিরতায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য নিয়মিত মহড়া চালানো।

মিয়ানমারের অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতা ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তকে এক নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতায় ঠেলে দিয়েছে। স্থিতিশীল সীমান্ত এখন রূপ নিয়েছে এক “ডি-ফ্যাক্টো বাফার জোন”-এ। এ অবস্থায় ভারতের উচিত তাদের “লুক ইস্ট” নীতি ও সামরিক কৌশল পুনর্গঠন করা। অভিযোজনযোগ্য সংযোগ কাঠামো, সীমান্তভিত্তিক সামরিক প্রস্তুতি এবং আঞ্চলিক গোয়েন্দা সহযোগিতা ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারকেও সুরক্ষিত রাখবে। তবে এই সীমান্ত আগামী অনেক দিন ধরেই অসম্পূর্ণ শাসন ও অস্থিতিশীলতার বাস্তবতা বহন করবে।