হিবিস্কাসের প্রজাতি ও বৈচিত্র্য
হিবিস্কাস (Hibiscus) হলো একটি বিশ্বজুড়ে বহুল পরিচিত ফুলগাছের জাত (genus), যার প্রজাতি সংখ্যা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। বেশিরভাগ গবেষণা অনুযায়ী হিবিস্কাসের প্রজাতি প্রায় ২০০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে। তবে কিছু গবেষণায় এই সংখ্যা ৪৩২ পর্যন্ত বলা হয়েছে। তাই এক কথায় বলা যায়, হিবিস্কাস হলো কয়েক শতাধিক প্রজাতির সমৃদ্ধ উদ্ভিদ জাত।
ফুলের রঙের বৈচিত্র্য
হিবিস্কাস ফুল পৃথিবীর নানা রঙে দেখা যায়, যা প্রকৃতিকে করে তোলে আরও বৈচিত্র্যময়। লাল, গোলাপি, সাদা, হলুদ ও কমলা হলো সবচেয়ে প্রচলিত রঙ। তবে এর পাশাপাশি নীল, বেগুনি, ফ্যাকাশে পিচ ও মাল্টিকোলার বা একাধিক রঙের সংমিশ্রণও পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু বিরল রঙ যেমন পার্পল ও ব্লু’ও উল্লেখযোগ্য। এ কারণে হিবিস্কাস ফুলকে অনেক সময় ফুলের জগতে রঙের এক বিশাল সম্ভার বলা হয়।

বাংলাদেশের হিবিস্কাস
বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত প্রজাতি হলো Hibiscus rosa-sinensis, যা চাইনিজ বা জবা ফুল নামে পরিচিত। এ দেশের বাগান ও বাজারে সাধারণত লাল, গোলাপি, সাদা, হলুদ ও কমলা রঙের হিবিস্কাস বেশি দেখা যায়। তবে কিছু হাইব্রিড জাত বা ডাবল পেটালস প্রজাতিতে মাল্টিকোলার, হালকা বেগুনি ও পিচ টোনও চোখে পড়ে। ফলে বলা যায়, বাংলাদেশে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় ধরনের রঙের হিবিস্কাস ফুল পাওয়া সম্ভব।
হিবিস্কাস চা: প্রস্তুতি ও স্বাদ
হিবিস্কাস ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং এর থেকে তৈরি হয় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর চা। সাধারণত Hibiscus sabdariffa প্রজাতির ফুলের ক্যালিক্স (Calyx) থেকে হিবিস্কাস চা প্রস্তুত করা হয়। এতে থাকে একটি উজ্জ্বল লাল রঙ এবং হালকা টকটকে স্বাদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই চা ভিন্ন নামে পরিচিত। পশ্চিম আফ্রিকায় এটি “বিসাপ” নামে জনপ্রিয়, মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকায় বলা হয় “আগুয়া দে জামাইকা (Agua de Jamaica)”, মিশর ও সুদানে এটি “কারকাডে” নামে পরিচিত এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে এর নাম “সোরেল”।

হিবিস্কাস চায়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা
হিবিস্কাস চা শুধু স্বাদের জন্যই নয়, বরং নানাভাবে স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, নিয়মিত হিবিস্কাস চা পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষত সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ প্রায় পাঁচ থেকে সাত মিলিমিটার পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এটি রক্তে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। LDL বা “খারাপ” কোলেস্টেরল কমাতে এবং HDL বা “ভালো” কোলেস্টেরল বাড়াতে এটি সহায়ক হতে পারে।
এছাড়া হিবিস্কাস এক্সট্র্যাক্ট লিভারের সুরক্ষায়ও কার্যকর। বিশেষত লিভার স্টিয়াটোসিস বা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে এটি ভূমিকা রাখতে পারে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব দেহকে ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং কোষকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত এই চা পান করলে হৃদরোগ প্রতিরোধেও সহায়ক হতে পারে, কারণ এটি রক্তচাপ ও অতিরিক্ত চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শুধু তাই নয়, হিবিস্কাস চা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রভাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞ মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমিন আক্তার জানান, হিবিস্কাস ফুল শুধু নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, বরং এটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও একটি প্রাকৃতিক ওষুধের উৎস। তাঁর মতে, নিয়মিত হিবিস্কাস চা পান করলে শরীরের রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এটি লিভার ও হৃদ্যন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়। তিনি আরও বলেন, “হিবিস্কাসে যে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তা শরীরের কোষকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
সব মিলিয়ে হিবিস্কাস ফুল সৌন্দর্যের পাশাপাশি স্বাস্থ্যেরও এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিশ্বজুড়ে এর প্রজাতি সংখ্যা ২০০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে, আর রঙের বৈচিত্র্য বিস্ময়কর। বাংলাদেশে সাধারণভাবে পাঁচ থেকে ছয়টি রঙের হিবিস্কাস পাওয়া যায়, যা বাগান ও প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে। অন্যদিকে, হিবিস্কাস চা শুধু স্বাদের দিক থেকে নয়, বরং রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, লিভার সুরক্ষা, হৃদরোগ প্রতিরোধ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রভাব ও সম্ভাব্য ক্যান্সার প্রতিরোধের কারণে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















