০২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপনার প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদল হলে কী চাকরি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

মালিকানা বদলের পর চাকরির ঝুঁকি

প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করলে সবসময় চাকরি হারানোর ঝুঁকি থাকে না। ম্যানপাওয়ারগ্রুপ সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি ম্যানেজার লিন্ডা তিও বলেন, ছাঁটাই কেবল একটি সম্ভাব্য ফলাফল। এর সম্ভাবনা নির্ভর করে কর্মীর দায়িত্ব, কাজের ক্ষেত্র এবং দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই ধরনের পদ বা দায়িত্বের পুনরাবৃত্তির ওপর।
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে অধিগ্রহণের ফলে ব্যবসার বিস্তার ঘটে, নতুন পদ সৃষ্টি হয় বা অভ্যন্তরীণভাবে কর্মী স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়। বিষয়টি নির্ভর করে অধিগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ও একীভূতকরণ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার ওপর।

কৌশলগত পরিবর্তন ও খরচ কমানোর পদক্ষেপ

আদেক্কো সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি ম্যানেজার সিন্ডি লি জানান, অধিগ্রহণের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশল বা অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে দল ছোট করা, কিছু পণ্য বন্ধ করা বা বাজার থেকে সরে আসা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। খরচ কমাতে কর্মীসংখ্যা হ্রাস বা পদ একীভূতকরণ একটি প্রচলিত কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ঝুঁকির ইঙ্গিত চেনার উপায়

লিন্ডা তিও বলেন, ছাঁটাই নিশ্চিত নয়, তবে কিছু ইঙ্গিত আগে থেকেই দেখা যায়। যেমন–

  • একই ধরনের পদ বা বিভাগ দুটি প্রতিষ্ঠানে থাকলে
  • পুনর্গঠনের ঘোষণা এলে
  • কৌশলগত দিক পরিবর্তন হলে
  • কর্মীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা বা দৃশ্যমানতা কমে গেলে
  • ভবিষ্যৎ দায়িত্ব অস্পষ্ট হলে

তিনি সতর্ক করেন, কারও পদ যদি উভয় প্রতিষ্ঠানে থাকে এবং দায়িত্বগুলো প্রায় একরকম হয়, তবে redundancy বা অতিরিক্ত পদে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে উচ্চ খরচের পদে থাকা কর্মীরা অধিগ্রহণ-পরবর্তী সময়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

সিন্ডি লি আরও বলেন, নতুন নেতৃত্ব আসলে তারা প্রায়ই নিজের মতো করে দল পুনর্গঠন করে। পাশাপাশি, হঠাৎ নিয়োগ বন্ধ হওয়াও সংকেত হতে পারে।

কর্মীদের করণীয়

অধিগ্রহণের সময় অভ্যন্তরীণ তথ্য নজরে রাখা জরুরি। অফিসিয়াল ব্রিফিং, বিজ্ঞপ্তি বা মেমো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। পাশাপাশি, ম্যানেজার, মানবসম্পদ বিভাগ এবং বিভিন্ন বিভাগের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝা দরকার।
লি পরামর্শ দেন, খবর পাওয়ার পর মনোবল ধরে রাখা এবং নেটওয়ার্কিং বাড়ানো জরুরি, যেন সম্ভাব্য পরিবর্তন সামলাতে প্রস্তুত থাকা যায়। একইসঙ্গে, নিজের অধিকার ও ছাঁটাই সুবিধা সম্পর্কে জানা উচিত।

তবে তিও মনে করিয়ে দেন, অনেক সময় লাইন ম্যানেজার বা মানবসম্পদ বিভাগও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যায়, তাই তারা সব উত্তর নাও দিতে পারে। তবু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহায়ক হতে পারে।

কাজের পরিবেশে পরিবর্তন

অধিগ্রহণ শুধু চাকরি হারানোর ঝুঁকিই নয়, কাজের ধরনেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কর্মীরা নতুন ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে পারেন বা অন্য টিমে স্থানান্তরিত হতে পারেন। এতে দৈনন্দিন দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন বদলে যায়।
এছাড়া প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম, মানবসম্পদ নীতি, বেতন প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন কাঠামো, ছুটির নিয়ম এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ পদ্ধতিও পরিবর্তিত হতে পারে। কর্মীদের দ্রুত নতুন সিস্টেমে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

সঠিক প্রশ্ন করা জরুরি

সিন্ডি লি বলেন, কর্মীরা সরাসরি ম্যানেজারের সঙ্গে ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত বা দায়িত্বভিত্তিক প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে বড় কৌশলগত পরিবর্তন নিয়ে জানতে হলে উর্ধ্বতন পর্যায়ের ম্যানেজারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করা উত্তম।
তিনি কর্মীদের পরামর্শ দেন–

  • নিজের ভূমিকা কীভাবে প্রভাবিত হবে তা খুঁজে বের করা
  • পুনর্বিন্যাস বা নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ আছে কি না তা জানা
  • ছাঁটাই হলে কী ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে তা বোঝা
  • রিপোর্টিং লাইন, ব্যবহৃত সিস্টেম বা কর্মী রাখার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা
  • অভ্যন্তরীণভাবে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সুযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা

কখন পদত্যাগ বিবেচনা করবেন

দুই বিশেষজ্ঞই বলেন, চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কেবল তখনই, যদি নিশ্চিতভাবে মনে হয়–

  • আপনার পদ বাদ যাবে বা গুরুত্ব হারাবে
  • অভ্যন্তরীণভাবে অন্য কোনো বিকল্প নেই
  • অন্য কোথাও আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী ভালো সুযোগ রয়েছে

অর্থাৎ, অধিগ্রহণ মানেই চাকরি হারানো নয়। বরং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিলে অনেক সময় নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বদল হলে কী চাকরি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?

১২:০৪:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৫

মালিকানা বদলের পর চাকরির ঝুঁকি

প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো কোম্পানি অধিগ্রহণ করলে সবসময় চাকরি হারানোর ঝুঁকি থাকে না। ম্যানপাওয়ারগ্রুপ সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি ম্যানেজার লিন্ডা তিও বলেন, ছাঁটাই কেবল একটি সম্ভাব্য ফলাফল। এর সম্ভাবনা নির্ভর করে কর্মীর দায়িত্ব, কাজের ক্ষেত্র এবং দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই ধরনের পদ বা দায়িত্বের পুনরাবৃত্তির ওপর।
তিনি উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে অধিগ্রহণের ফলে ব্যবসার বিস্তার ঘটে, নতুন পদ সৃষ্টি হয় বা অভ্যন্তরীণভাবে কর্মী স্থানান্তরের সুযোগ তৈরি হয়। বিষয়টি নির্ভর করে অধিগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য ও একীভূতকরণ কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার ওপর।

কৌশলগত পরিবর্তন ও খরচ কমানোর পদক্ষেপ

আদেক্কো সিঙ্গাপুরের কান্ট্রি ম্যানেজার সিন্ডি লি জানান, অধিগ্রহণের সময় অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশল বা অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে দল ছোট করা, কিছু পণ্য বন্ধ করা বা বাজার থেকে সরে আসা অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। খরচ কমাতে কর্মীসংখ্যা হ্রাস বা পদ একীভূতকরণ একটি প্রচলিত কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ঝুঁকির ইঙ্গিত চেনার উপায়

লিন্ডা তিও বলেন, ছাঁটাই নিশ্চিত নয়, তবে কিছু ইঙ্গিত আগে থেকেই দেখা যায়। যেমন–

  • একই ধরনের পদ বা বিভাগ দুটি প্রতিষ্ঠানে থাকলে
  • পুনর্গঠনের ঘোষণা এলে
  • কৌশলগত দিক পরিবর্তন হলে
  • কর্মীর সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা বা দৃশ্যমানতা কমে গেলে
  • ভবিষ্যৎ দায়িত্ব অস্পষ্ট হলে

তিনি সতর্ক করেন, কারও পদ যদি উভয় প্রতিষ্ঠানে থাকে এবং দায়িত্বগুলো প্রায় একরকম হয়, তবে redundancy বা অতিরিক্ত পদে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে উচ্চ খরচের পদে থাকা কর্মীরা অধিগ্রহণ-পরবর্তী সময়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

সিন্ডি লি আরও বলেন, নতুন নেতৃত্ব আসলে তারা প্রায়ই নিজের মতো করে দল পুনর্গঠন করে। পাশাপাশি, হঠাৎ নিয়োগ বন্ধ হওয়াও সংকেত হতে পারে।

কর্মীদের করণীয়

অধিগ্রহণের সময় অভ্যন্তরীণ তথ্য নজরে রাখা জরুরি। অফিসিয়াল ব্রিফিং, বিজ্ঞপ্তি বা মেমো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। পাশাপাশি, ম্যানেজার, মানবসম্পদ বিভাগ এবং বিভিন্ন বিভাগের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝা দরকার।
লি পরামর্শ দেন, খবর পাওয়ার পর মনোবল ধরে রাখা এবং নেটওয়ার্কিং বাড়ানো জরুরি, যেন সম্ভাব্য পরিবর্তন সামলাতে প্রস্তুত থাকা যায়। একইসঙ্গে, নিজের অধিকার ও ছাঁটাই সুবিধা সম্পর্কে জানা উচিত।

তবে তিও মনে করিয়ে দেন, অনেক সময় লাইন ম্যানেজার বা মানবসম্পদ বিভাগও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যায়, তাই তারা সব উত্তর নাও দিতে পারে। তবু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহায়ক হতে পারে।

কাজের পরিবেশে পরিবর্তন

অধিগ্রহণ শুধু চাকরি হারানোর ঝুঁকিই নয়, কাজের ধরনেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কর্মীরা নতুন ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে পারেন বা অন্য টিমে স্থানান্তরিত হতে পারেন। এতে দৈনন্দিন দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন বদলে যায়।
এছাড়া প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম, মানবসম্পদ নীতি, বেতন প্রক্রিয়া, মূল্যায়ন কাঠামো, ছুটির নিয়ম এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ পদ্ধতিও পরিবর্তিত হতে পারে। কর্মীদের দ্রুত নতুন সিস্টেমে মানিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

সঠিক প্রশ্ন করা জরুরি

সিন্ডি লি বলেন, কর্মীরা সরাসরি ম্যানেজারের সঙ্গে ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত বা দায়িত্বভিত্তিক প্রশ্ন তুলতে পারেন। তবে বড় কৌশলগত পরিবর্তন নিয়ে জানতে হলে উর্ধ্বতন পর্যায়ের ম্যানেজারের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করা উত্তম।
তিনি কর্মীদের পরামর্শ দেন–

  • নিজের ভূমিকা কীভাবে প্রভাবিত হবে তা খুঁজে বের করা
  • পুনর্বিন্যাস বা নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ আছে কি না তা জানা
  • ছাঁটাই হলে কী ধরনের সহায়তা পাওয়া যাবে তা বোঝা
  • রিপোর্টিং লাইন, ব্যবহৃত সিস্টেম বা কর্মী রাখার মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা
  • অভ্যন্তরীণভাবে ক্যারিয়ার পরিবর্তনের সুযোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা

কখন পদত্যাগ বিবেচনা করবেন

দুই বিশেষজ্ঞই বলেন, চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কেবল তখনই, যদি নিশ্চিতভাবে মনে হয়–

  • আপনার পদ বাদ যাবে বা গুরুত্ব হারাবে
  • অভ্যন্তরীণভাবে অন্য কোনো বিকল্প নেই
  • অন্য কোথাও আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী ভালো সুযোগ রয়েছে

অর্থাৎ, অধিগ্রহণ মানেই চাকরি হারানো নয়। বরং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রস্তুতি নিলে অনেক সময় নতুন সুযোগও তৈরি হতে পারে।