পরিচিতি
সন্তানকে বড় করার খরচ কেবল শৈশব বা কলেজ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, বহু অভিভাবক তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের আর্থিকভাবে সহায়তা করছেন। কেউ কেউ এ সহায়তাকে বহু বছরের জন্য পরিকল্পিতভাবে ভাতা বা সঞ্চয় হিসেবে রাখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারা এখন কেবল প্রয়োজনীয়ই নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ডিয়েলি পরিবারের উদাহরণ
ফ্লোরিডার লেজা ও অ্যান্থনি ডিয়েলি প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ডলার তাদের সাত বছরের মেয়ে জোয়ির জন্য সঞ্চয় করছেন। এ টাকা কলেজ ফি বা চিকিৎসা খরচের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে তাকে সহায়তা করার জন্য।
লেজা নিজে ২০০৭–০৯ সালের মন্দার সময় কর্মজীবনে প্রবেশ করেছিলেন। তখন তিনি চাকরির অসন্তুষ্টি ও ঋণের চাপে ভুগেছিলেন। তিনি চান না, জোয়িরও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হোক। তার কথায়, “আমি চাই ওর সামনে যেন বিকল্প থাকে।”

সহায়তার বাস্তবতা
পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২৪ সালের জরিপ বলছে, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী সন্তানদের মধ্যে ৬০ শতাংশই গত বছরে অভিভাবকদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। সাধারণত এ সহায়তা আসে বাড়িভাড়া, ঋণ শোধ বা দৈনন্দিন খরচে। এমনকি নাতি-নাতনির ডে-কেয়ার, বাড়ির ছাদ সংস্কার কিংবা ভ্রমণ খরচেও সাহায্য করছেন অনেকে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রিয়েলটর্সের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, তরুণ মিলেনিয়ালদের এক-তৃতীয়াংশ বাড়ি কেনার জন্য পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে ডাউন পেমেন্ট সহায়তা পেয়েছেন।
ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা
অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। আবার যারা দেন, তাদের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক দিক রয়েছে। একদিকে এটি অভিভাবকদের অবসর পরিকল্পনা নষ্ট করতে পারে, অন্যদিকে সন্তানের স্বনির্ভরতা ব্যাহত হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহায়তা করা যেতে পারে, তবে এর সীমা থাকা দরকার।

ব্যয়ের চাপ ও প্রজন্মের বৈষম্য
অর্থনীতিবিদ প্যাট্রিক হিউই বলেন, “অভিভাবকরা আগের চেয়ে বেশি সহনশীল। তবে চাহিদাটাও এখন অনেক বড়।”
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮০ সালের তুলনায় আমেরিকানরা আজ ১৮ শতাংশ বেশি আয় করছেন। কিন্তু একই সময়ে বাড়ির দাম বেড়েছে ৪০০ শতাংশেরও বেশি, স্বাস্থ্য খরচ বেড়েছে প্রায় ৭০০ শতাংশ, আর টিউশন ও শিশু যত্নের ব্যয় বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। ফলে তরুণ প্রজন্মের পক্ষে আর্থিকভাবে দাঁড়ানো আগের চেয়ে কঠিন।
পারসিচিটি এবং তার পরামর্শ
ডেনভারের আর্থিক উপদেষ্টা রবার্ট পারসিচিটি মনে করেন, সন্তানকে সহায়তা করা নিয়ে লজ্জা বা দ্বিধা রাখার কিছু নেই। তিনি নিজে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত দাদীর সঙ্গে থেকে ভাড়া বাঁচিয়েছিলেন। এ সময় তিনি ঋণ শোধ করেন, ৩০ হাজার ডলার সঞ্চয় করেন এবং ৩০ বছরের আগেই বাড়ি কিনতে সক্ষম হন। এখন তিনি তার ক্লায়েন্টদেরও সন্তানদের জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন।
উত্তরাধিকার ভিন্নভাবে দেখা
অনেক পরিবার উত্তরাধিকারের ধারণাকে উল্টে দিচ্ছে। বেবি বুমার প্রজন্মের বিপুল সম্পদ উত্তরাধিকারসূত্রে বণ্টিত হবে মৃত্যুর পর। কিন্তু কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন — কেন মৃত্যুর অপেক্ষা করা হবে?
উদাহরণস্বরূপ, কাইলা হোলকম ও তার স্বামী প্রতিটি সন্তানের জন্য কিছু অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, যা ভবিষ্যতে বিয়ে, বাড়ি কেনা বা জীবনের বড় মাইলফলকগুলোতে কাজে লাগবে। কাইলার মতে, “যখন সন্তানরা তরুণ, তখনই তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তখন সাহায্য করাই ভালো।”

সংকটে অভিভাবক
সব অভিভাবক এ সহায়তা দিতে সক্ষম নন। ওহাইওর শিক্ষক মেলিন্ডা কেইলস তার ২৪ বছরের মেয়ের বাসা ভাড়া, গাড়ির কিস্তি ও টিউশন দিচ্ছেন। এতে তার নিজের অবসর সঞ্চয় অর্ধেক করতে হয়েছে এবং ছুটির পরিকল্পনাও বাদ দিতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেও সহায়তার জন্য আলাদা সঞ্চয় থাকা উচিত।
উপসংহার
প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে সহায়তা করার প্রবণতা আমেরিকায় নতুন নয়, তবে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেউ এটি সন্তানের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা হিসেবে দেখছেন, কেউ আবার সীমা টেনে দিচ্ছেন। তবে একথা পরিষ্কার — আধুনিক যুগে সন্তান লালন-পালনের খরচ কেবল ১৮ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রাপ্তবয়স্ক জীবনেও বিস্তৃত হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















