০১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সবুজ পথে ফাভেলা: উচ্ছেদের মুখে টিকে থাকার লড়াই

পরিবর্তনের সূচনা

সিলভা আমাকে বাগানের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বিশাল প্যাশনফ্রুট লতার নিচে ঝুঁকে যাচ্ছিলেন এবং সমান সারির চারা গাছের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। তিনি বললেন, “আগে এই এলাকা পুরোপুরি আবর্জনায় ভর্তি ছিল।” শহরের বর্জ্য সংগ্রহ পরিষেবা এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক বসতিতে পৌঁছাত না। তাই ২০০৬ সালে তিনি কমিউনিটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেন, যা ধীরে ধীরে একটি নিয়মিত সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপ নেয়। পরে কমিউনিটি ময়লার ঝুপড়ি তৈরি করে, যেখানে পুরো ফাভেলার বর্জ্য ফেলা যেত।

ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জা এখন একটি পুরস্কারজয়ী “সবুজ” ফাভেলা হিসেবে পরিচিত।

সিলভা মনে করেন, মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবেশ নষ্ট করে না; তারা করে কারণ তারা অন্য কিছু জানে না বা প্রয়োজনীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবার অভাব থাকে।

২০১৩ সালে, আদালত যখন কমিউনিটিকে উচ্ছেদের পক্ষে রায় দিল, এক বছর পর ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দার এক বৈঠকে সিলভা সতর্ক করেন—প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান না করলে একসময় তাদের উচ্ছেদ হতেই হবে। তিনি বলেন, “আমাদের শেখানোর মতো কোনো টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ছিল না। তাই আমরা কমিউনিটি গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম। বাগানের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ শিক্ষা চালু করতে পারব।”

ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জার বাসিন্দা সিসেরা মারিয়া লিনো বললেন, “আমি ভাবলাম, দারুণ ধারণা।” উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং শুরু থেকেই বাগানে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছেন। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পারনামবুকোর গ্রামে জন্মেছিলেন, যেখানে সবজি চাষ হতো। ২০০২ সালে তিনি এই ফাভেলায় চলে আসেন। “উচ্ছেদের বিরুদ্ধে এটি ছিল কঠিন লড়াই। তখন আমাদের শক্তি ছিল না, কিন্তু লিয়া (সিলভা) আমাদের সেই শক্তি দিয়েছে।”

ভিন্ন মত ও একতার জয়

শুরুতে সবাই বাগান চায়নি। কেউ কেউ মনে করতেন, জমিতে বাড়ি বানানো বা বিক্রি করে অর্থ আনা ভালো হবে। কিন্তু ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাগানের পক্ষে দাঁড়ায়।

প্রথমে মাত্র পাঁচ-ছয়জন সবজি রোপণ শুরু করেন। সিলভা বললেন, “আমি প্রয়োজন থেকে শুরু করেছিলাম। ভাবিনি এটি এতদূর গড়াবে।” এরপর কমিউনিটি এনজিও ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে টেকসই গ্রাম গড়তে।

আগে যেখানে আজকের এই কমিউনিটি গার্ডেন, তা ছিল আবর্জনার ভাগাড়।

বাহিয়ার বাসিন্দা ও নিরাপত্তারক্ষী বাতিস্তা সান্তোস ২০১৪ সালে এখানে এসে প্রকল্পের কথা শুনলেও যুক্ত হননি। তিনি বললেন, “আমি দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করতাম… আর বাগানের কাজ কঠিন।” কিন্তু ২০২০ সালে মহামারিতে চাকরি হারানোর পর তিনি বাগানে যুক্ত হন। তার ভাষায়, “আজ এই জায়গা চমৎকার ও সুন্দর… এটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে।”

এক গবেষণায় দেখা যায়, সাও পাওলোর ৮৪% ফাভেলায় আশেপাশে কোনো খোলা জায়গা নেই। কারণ এগুলো পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে ওঠে। সাধারণত খালি জায়গা বলতে শুধু ফুটবল মাঠই থাকে।

জার্মানির লাইবনিজ ইনস্টিটিউটের গবেষক উলফগ্যাং ভেন্ডে বলেন, জায়গাটিকে বাসিন্দাদের কাছে মূল্যবান করে তুলতে হবে, তাহলেই সম্প্রসারণের চাপ প্রতিরোধ সম্ভব। আর তা করতে হলে মানুষের মধ্যে মালিকানার অনুভূতি তৈরি করতে হবে।

পুরস্কারজয়ী পরিবর্তন

ব্রাজিল সরকার “ফাভেলা আপগ্রেডিং”-এর মাধ্যমে এসব অনানুষ্ঠানিক বসতিকে শহরের মূল সেবার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে। তবে সমালোচকেরা বলেন, এতে দারিদ্র্যের মূল সমস্যা দূর হয় না। পেদ্রো নামে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “শুধু স্থানীয় মানুষদের যুক্ত করা উদ্যোগগুলোই কার্যকর হয়।”

সিলভা বললেন, ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জার সবুজায়ন সফল হয়েছে কারণ এতে পুরো কমিউনিটি যুক্ত ছিল…

সবুজ পথে ফাভেলা: উচ্ছেদের মুখে টিকে থাকার লড়াই

১১:০২:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

পরিবর্তনের সূচনা

সিলভা আমাকে বাগানের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বিশাল প্যাশনফ্রুট লতার নিচে ঝুঁকে যাচ্ছিলেন এবং সমান সারির চারা গাছের পাশ দিয়ে হাঁটছিলেন। তিনি বললেন, “আগে এই এলাকা পুরোপুরি আবর্জনায় ভর্তি ছিল।” শহরের বর্জ্য সংগ্রহ পরিষেবা এ ধরনের অনানুষ্ঠানিক বসতিতে পৌঁছাত না। তাই ২০০৬ সালে তিনি কমিউনিটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগ নেন, যা ধীরে ধীরে একটি নিয়মিত সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রূপ নেয়। পরে কমিউনিটি ময়লার ঝুপড়ি তৈরি করে, যেখানে পুরো ফাভেলার বর্জ্য ফেলা যেত।

ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জা এখন একটি পুরস্কারজয়ী “সবুজ” ফাভেলা হিসেবে পরিচিত।

সিলভা মনে করেন, মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবেশ নষ্ট করে না; তারা করে কারণ তারা অন্য কিছু জানে না বা প্রয়োজনীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পরিষেবার অভাব থাকে।

২০১৩ সালে, আদালত যখন কমিউনিটিকে উচ্ছেদের পক্ষে রায় দিল, এক বছর পর ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দার এক বৈঠকে সিলভা সতর্ক করেন—প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান না করলে একসময় তাদের উচ্ছেদ হতেই হবে। তিনি বলেন, “আমাদের শেখানোর মতো কোনো টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ছিল না। তাই আমরা কমিউনিটি গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম। বাগানের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ শিক্ষা চালু করতে পারব।”

ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জার বাসিন্দা সিসেরা মারিয়া লিনো বললেন, “আমি ভাবলাম, দারুণ ধারণা।” উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং শুরু থেকেই বাগানে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে আসছেন। তিনি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পারনামবুকোর গ্রামে জন্মেছিলেন, যেখানে সবজি চাষ হতো। ২০০২ সালে তিনি এই ফাভেলায় চলে আসেন। “উচ্ছেদের বিরুদ্ধে এটি ছিল কঠিন লড়াই। তখন আমাদের শক্তি ছিল না, কিন্তু লিয়া (সিলভা) আমাদের সেই শক্তি দিয়েছে।”

ভিন্ন মত ও একতার জয়

শুরুতে সবাই বাগান চায়নি। কেউ কেউ মনে করতেন, জমিতে বাড়ি বানানো বা বিক্রি করে অর্থ আনা ভালো হবে। কিন্তু ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাগানের পক্ষে দাঁড়ায়।

প্রথমে মাত্র পাঁচ-ছয়জন সবজি রোপণ শুরু করেন। সিলভা বললেন, “আমি প্রয়োজন থেকে শুরু করেছিলাম। ভাবিনি এটি এতদূর গড়াবে।” এরপর কমিউনিটি এনজিও ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে টেকসই গ্রাম গড়তে।

আগে যেখানে আজকের এই কমিউনিটি গার্ডেন, তা ছিল আবর্জনার ভাগাড়।

বাহিয়ার বাসিন্দা ও নিরাপত্তারক্ষী বাতিস্তা সান্তোস ২০১৪ সালে এখানে এসে প্রকল্পের কথা শুনলেও যুক্ত হননি। তিনি বললেন, “আমি দিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করতাম… আর বাগানের কাজ কঠিন।” কিন্তু ২০২০ সালে মহামারিতে চাকরি হারানোর পর তিনি বাগানে যুক্ত হন। তার ভাষায়, “আজ এই জায়গা চমৎকার ও সুন্দর… এটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে।”

এক গবেষণায় দেখা যায়, সাও পাওলোর ৮৪% ফাভেলায় আশেপাশে কোনো খোলা জায়গা নেই। কারণ এগুলো পরিকল্পনা ছাড়া গড়ে ওঠে। সাধারণত খালি জায়গা বলতে শুধু ফুটবল মাঠই থাকে।

জার্মানির লাইবনিজ ইনস্টিটিউটের গবেষক উলফগ্যাং ভেন্ডে বলেন, জায়গাটিকে বাসিন্দাদের কাছে মূল্যবান করে তুলতে হবে, তাহলেই সম্প্রসারণের চাপ প্রতিরোধ সম্ভব। আর তা করতে হলে মানুষের মধ্যে মালিকানার অনুভূতি তৈরি করতে হবে।

পুরস্কারজয়ী পরিবর্তন

ব্রাজিল সরকার “ফাভেলা আপগ্রেডিং”-এর মাধ্যমে এসব অনানুষ্ঠানিক বসতিকে শহরের মূল সেবার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করে। তবে সমালোচকেরা বলেন, এতে দারিদ্র্যের মূল সমস্যা দূর হয় না। পেদ্রো নামে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “শুধু স্থানীয় মানুষদের যুক্ত করা উদ্যোগগুলোই কার্যকর হয়।”

সিলভা বললেন, ভিলা নোভা এস্পেরাঞ্জার সবুজায়ন সফল হয়েছে কারণ এতে পুরো কমিউনিটি যুক্ত ছিল…