বহু সংখ্যক সুরম্য হারাজি ও প্রাচীন কীর্তিকলাপ একেবারে বিধ্বস্ত হইয়া লোক চলাচলের অন্তরাল হইয়াছে।
সরকারি বিবরণটি স্বাভাবিকভাবেই বাহুল্যবর্জিত, নির্লিপ্ত। গেজেটিয়ার অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, ভূমিকম্প প্রবল হয়েছিল বটে তবে প্রাণহানির সংখ্যা বেশি হয়নি। ভূমিকম্পে ঢাকার প্রসিদ্ধ ঔষধের দোকান শাহীন মেডিকেল হল নবাব সলিমুল্লাহ যার মালিক ছিলেনা, নাজিরের মঠ, শাহবাগ এবং মিসেস স্ট্যান সরকারি যে বাসায় থাকতেন তা ধ্বসে পড়েছিল এবং এতে নিহত হয়েছিল ৫ জন।
এছাড়া কমিশনার, কালেকটর, জজ ও সিভিল সার্জনের বাড়িসহ ৯টি স্থাপনা এমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে তা আর বাসযোগ্য ছিল না। জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ইমারতসমূহ সারানোর জন্য সরকারের ১,৫০,০০০ রুপি লাগবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে রৌমারীতে সৃষ্ট ‘ফিশার বা ফাটিন
ভূমিকম্পের অভিঘাত যে প্রচণ্ড ছিল তা যতীন্দ্রমোহন রায় ও সংবাদপত্রের বিভিন্ন সংবাদ থেকে জানা যায়। পুরো বাংলা জুড়ে ভূমিকম্প হয়েছিল এবং ময়মনসিংহ এলাকাটি হয়েছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন পত্র লেখক তাদের এলাকার বর্ণনা দিয়েছেন। তবে প্রাণহানির সংখ্যা তেমন ছিল না। পূর্ববঙ্গে ইট/পাথরের তৈরি
ইমারতের অপ্রতুলতা এর কারণ। তবে, মানুষজন যে ভীত হয়েছিল তা সে সব বিবরণ পড়ে বোঝা যায়। ঐতিহাসিক যতীন্দ্রমোহন লিখেছিলেন-
“এই ভূমিকম্পে জেলার উত্তরাংশের অনেকখানে খালবিলের মুখ বন্ধ হইয়া গিয়াছে, বহু সংখ্যক সুরম্য হারাজি ও প্রাচীন কীর্তিকলাপ একেবারে বিধ্বস্ত হইয়া লোক চলাচলের অন্তরাল হইয়াছে। ঐ ভূকম্পের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইন ভাঙিয়া প্রায় দুই সপ্তাহকাল রেলের চলাচল বন্ধ হইয়াছিল বলিয়া জানা যায়। বস্তুত এ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত ভূমিকম্পের বিবরণ সংগৃহীত হইয়াছে তাহাদের কোনোটিরই ধ্বংসকার্য ও বিস্তৃতি এই ভূমিকম্প অপেক্ষা অধিক ছিল না।”
(চলবে)
মুনতাসীর মামুন 



















