খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা
সিমোন বাইলস, ইগা শভিয়াতেক, রাসেল উইলসনের মতো ভিন্নধর্মী খেলোয়াড়দের মধ্যে একটি মিল আছে—তাঁরা সবাই স্পোর্টস সাইকোলজিস্টের সাহায্য নিয়েছেন। লক্ষ্য ছিল মনোযোগ ফিরিয়ে আনা, উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রেরণা বজায় রাখা, ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেলোয়াড় এবং দলগুলো ক্রমশই এই বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভর করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক দক্ষতা অনুশীলন করলে খেলার কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তবে এসব কৌশল শুধু পেশাদার ক্রীড়াবিদদের জন্য নয়—অল্প চর্চায় এগুলো দৈনন্দিন কাজেও প্রয়োগ করা যায়। অফিসে বড় কোনো প্রেজেন্টেশন দেওয়া কিংবা ড্রাইভিং টেস্ট দেওয়ার সময়ও এগুলো কাজে লাগতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৪ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে যারা স্বল্প সময়ের জন্য কল্পনা অনুশীলন (visualization) এবং আত্ম-উদ্বুদ্ধকরণ (self-talk) কৌশল শিখেছিলেন, তারা গড়পড়তা ভালো করেছেন অন্যদের তুলনায় যারা এসব প্রশিক্ষণ নেননি।
গবেষক অ্যান্ড্রু এম. লেন বলছেন, যেমন শারীরিক অনুশীলনে ফল পেতে পুনরাবৃত্তি ও আত্মসমালোচনা প্রয়োজন, তেমনি মানসিক কৌশল আয়ত্ত করতেও একই প্রক্রিয়া প্রয়োজন।
একটিমাত্র লক্ষ্যে আবদ্ধ হবেন না
অনেকে “সব না হলে কিছুই নয়” ধরনের লক্ষ্য ঠিক করেন, যেমন চার ঘণ্টার কম সময়ে ম্যারাথন শেষ করা। এতে অযথা চাপ তৈরি হয় এবং অসুস্থতা বা খারাপ আবহাওয়ার মতো নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা কারণগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কার্লা মেইয়েন পরামর্শ দেন, একাধিক স্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে। যেমন—একটি স্বপ্নের লক্ষ্য, একটি মাঝারি লক্ষ্য, আর একটি ন্যূনতম লক্ষ্য। এতে ব্যর্থতার অনুভূতি কমে যায় এবং নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া যায়।
তিনি উদাহরণ দেন—যেভাবে প্রসবের ক্ষেত্রে একটি আদর্শ পরিকল্পনা করা যায়, আবার বিকল্প পরিকল্পনা বি বা সি তৈরি করা যেতে পারে।
সহায়ক চিন্তায় মনোযোগ দিন
অত্যধিক ইতিবাচক চিন্তা অনেক সময় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ওহাইও সেন্টার ফর স্পোর্ট সাইকোলজির পরিচালক জ্যাক জে. লেসিক বলেন, খেলোয়াড়দের আসলে যা দরকার, তা হলো সহায়ক চিন্তা।
উদাহরণস্বরূপ, একজন গলফার ভাবতে পারেন, “আজ আমার জীবনের সেরা রাউন্ড।” কিন্তু এতে তিনি পরবর্তী শটে মনোযোগ হারাতে পারেন। পরিবর্তে তার উচিত বাস্তবধর্মী ভাবনা—“বল এখন কোথায়? আমি কোথায় পাঠাতে চাই? সেটা কীভাবে সম্ভব?”
সংকেতমূলক শব্দ ব্যবহার করুন
অ্যান্ড্রু লেন বলেন, সংকেতমূলক শব্দ যেমন “সামঞ্জস্য রাখো” বা “কাজটা করো”—এগুলো খেলোয়াড়কে ফোকাস ধরে রাখতে সাহায্য করে। অনেকে শারীরিক ভঙ্গি দিয়েও ভুল কাটিয়ে ওঠেন, যেমন সাঁতারু চশমা থেকে পানি ঝেড়ে ফেলেন।
দৈনন্দিন জীবনেও একই কৌশল কাজে লাগানো যায়। বাসায় কাজ করার সময় সমস্যা নিয়ে বেশি ভাবলে, কিছুক্ষণের জন্য শুয়ে পড়া, পানি খাওয়া বা অল্প ব্যায়াম করা মনোযোগ ফেরাতে সাহায্য করে।
মানসচক্ষে অনুশীলন
অ্যাথলেটদের শেখানো হয় মানসচক্ষে সাফল্য কল্পনা করতে। এতে মস্তিষ্কে সেই অংশ সক্রিয় হয় যা বাস্তবে পারফর্ম করার সময় কাজ করে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, স্নায়ুচাপ কমে।
ড. লেসিক পরামর্শ দেন ধাপে ধাপে কল্পনা করতে। যেমন প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে প্রথমে শেষ অংশটি কল্পনা করুন, এরপর শেষ দুই ধাপ, তারপর পুরো প্রক্রিয়া। বিশেষ করে যেই অংশ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন, সেটি বেশি অনুশীলন করতে বলছেন তিনি।
নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়ে মনোযোগ
খেলোয়াড়রা জানেন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। যেমন দর্শকদের চিৎকার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমালোচনা।
ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির ব্রায়ান ফস্টার বলেন, সেরা পারফর্মাররা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিষয়গুলোতে সময় নষ্ট করেন না। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জাস্টিন রস বলেন, বিভ্রান্তি এড়াতে চাইলে নিজেকে প্রশ্ন করুন—“এই মুহূর্তে আমি কিসে মনোযোগ দিতে চাই?”
ফলাফল থেকে পরিচয় আলাদা রাখুন
অ্যান্ড্রু লেন মনে করিয়ে দেন, পেশাগত সাফল্য বা ব্যর্থতাকে ব্যক্তিগত পরিচয়ের সঙ্গে মেলালে একদিনের ভুলও বড় ব্যর্থতা মনে হতে পারে।
বরং ভুলকে পরিস্থিতি হিসেবে দেখুন। যেমন—“আমি তাড়াহুড়ো করেছি, তাই কাজ ডাবল চেক করতে পারিনি।” এরপর সেটিকে পুনর্গঠন করুন—“এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আমাকে কাজের গতি সামঞ্জস্য করতে হবে, এটা নয় যে আমি অযোগ্য।”
শেষে শিক্ষাটা মনে রাখুন, সামান্য হাঁটুন, তারপর এগিয়ে যান।
এই কৌশলগুলো ক্রীড়াক্ষেত্র ছাড়াও জীবনের যেকোনো চ্যালেঞ্জে মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।