১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭) প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৪) পাঁচ হাজার ডলারের পথে সোনা, ২০২৬ সালেও ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকার আভাস জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমছে, ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা কাটছাঁট স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, আউন্সপ্রতি ছাড়াল ৪৪০০ ডলার এনসিপি নেতাকে গুলি: নারী সঙ্গী পলাতক, ফ্ল্যাট থেকে মাদকসংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার তারেক রহমানের দেশে ফেরা সামনে রেখে শঙ্কার কথা জানালেন মির্জা আব্বাস গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোটের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ওসমান হাদির বোন পাচ্ছেন অস্ত্রের লাইসেন্স ও গানম্যান তিন যুগ, তিন ফাইনাল, একই বাধা ভারত—সারফরাজের নামেই আবার পাকিস্তানের জয়গাথা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১২)

  • নাঈম হক
  • ০৯:০০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • 61

জাপানের দাবির মুখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ১৯৪০ সালের জুলাই মাস থেকে আপাতত তিন মাসের জন্য “বার্মা-রোড” বন্ধ করে দেয়।

১৯৩৭-১৯৪১ সাল পর্যন্ত, চীন-সোভিয়েত চুক্তির আওতায় সামরিক ও অন্যান্য সাপ্লাই নিরবচ্ছিন্ন ছিল: সোভিয়েত সাহায্যসামগ্রি কৃষ্ণসাগরের ওডেসা বন্দরে খালাস হতো, অতঃপর ১৭০০ মাইল দীর্ঘ সোভিয়েত-পথ ধরে চীনের “লানচৌ”-য়ে আনা হতো। ১৯৩৭-১৯৩৮ সালে সামুদ্রিক বন্দরের অভাবে চীন এতোটাই মরিয়া অবস্থায় চলে আসে যে রেঙ্গুনের সামুদ্রিক বন্দরে বহির্বিশ্ব থেকে আগত সাপ্লাই-য়ের খালাস নেয়ার জন্য “বার্মা-রোড” নিমার্ণ করে; বার্মা তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রদেশ।

রেঙ্গুন বন্দরে সাপ্লাই খালাস নেয়ার পরে ট্রেনযোগে “লশিও” নিয়ে যাওয়া হতো, সেখান থেকে পর্বতার্কীর্ণ সরু পার্বত্য রাস্তা “বার্মা-রোড” ধরে চীনের কুনমিং শহরে নিয়ে আসা হতো। চীন এমনকি ফরাসি ইন্দো-চীনের হ্যানয় বন্দর ব্যবহার শুরু করে। হ্যানয় বন্দরে আগত সাপ্লাই কুনমিং-য়ে নিয়ে যাওয়া হতো।

কিন্তু জাপান নাছোড়বান্দা, যেমন করেই হোক বহির্বিশ্বের সঙ্গে চীনের সব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবেই। চীনকে শতকরা একশ’ ভাগ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আনতেই হবে। ১৯৪০ সালে জাপান বিনাযুদ্ধে ফরাসি ইন্দো-চীন দখল করে; ফলে চীনের জন্য হ্যানয়-বন্দর বন্ধ হয়ে যায়। জাপানের দাবির মুখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ১৯৪০ সালের জুলাই মাস থেকে আপাতত তিন মাসের জন্য “বার্মা-রোড” বন্ধ করে দেয়।

সম্মিলিত চীনাশক্তি নিয়ে জাপানিদের পরাভূত করার যে প্রতিজ্ঞা মাও-কে চিয়াং কাই শের দিয়েছিলেন, তিনি সেটি রাখেননি। সৌজন্যে। উইকিমিডিয়া; পাবলিক ডমেইন।

ইত্যবসরে, ইউরোপে জাপানের মিত্র জার্মানি ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিবেশি দেশ পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে জার্মানি ঝটিকা বেগে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম দখল করে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য এমন পরিস্থিতি জার্মান কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাষ হতে পারে বইকি।

১৯৪১ সালের এপ্রিল মাসে জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন “অনাক্রমণ চুক্তি” সই করে। ফলস্বরূপ, চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক ও অন্যান্য সাহায্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। ইউরোপ ফ্রন্টে, জার্মানির পরবর্তী টার্গেট যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তারা সেটি আঁচ করতে পেরেছিল; জাপানের সঙ্গে “অনাক্রমণ চুক্তি” সইয়ের মাত্র প্রায় দুই মাসের মধ্যে সোভিয়েতদের আশঙ্কা বাস্তব রূপ নেয়; জার্মানি “জার্মান-সোভিয়েত ইউনিয়ন অনাক্রমণ চুক্তি” ভঙ্গ করে এবং ফিনল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৪১ সালের বাইশে জুন “অপারেশন বারবারোসা” ‘কোউড’ নামে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে।

জার্মানরা তিন মিলিয়নেরও বেশি সৈন্যসামন্ত নিয়ে তিনটি ‘সমান্তরাল অফেনসিডে’ এই আক্রমণ পরিচালনা করে। যুদ্ধের ইতিহাসে এটি ছিল শক্তিশালীতম, প্রবলতম আক্রমণকারী বাহিনীর দৃষ্টান্ত।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১১)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১১)

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৭)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১২)

০৯:০০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাপানের দাবির মুখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ১৯৪০ সালের জুলাই মাস থেকে আপাতত তিন মাসের জন্য “বার্মা-রোড” বন্ধ করে দেয়।

১৯৩৭-১৯৪১ সাল পর্যন্ত, চীন-সোভিয়েত চুক্তির আওতায় সামরিক ও অন্যান্য সাপ্লাই নিরবচ্ছিন্ন ছিল: সোভিয়েত সাহায্যসামগ্রি কৃষ্ণসাগরের ওডেসা বন্দরে খালাস হতো, অতঃপর ১৭০০ মাইল দীর্ঘ সোভিয়েত-পথ ধরে চীনের “লানচৌ”-য়ে আনা হতো। ১৯৩৭-১৯৩৮ সালে সামুদ্রিক বন্দরের অভাবে চীন এতোটাই মরিয়া অবস্থায় চলে আসে যে রেঙ্গুনের সামুদ্রিক বন্দরে বহির্বিশ্ব থেকে আগত সাপ্লাই-য়ের খালাস নেয়ার জন্য “বার্মা-রোড” নিমার্ণ করে; বার্মা তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রদেশ।

রেঙ্গুন বন্দরে সাপ্লাই খালাস নেয়ার পরে ট্রেনযোগে “লশিও” নিয়ে যাওয়া হতো, সেখান থেকে পর্বতার্কীর্ণ সরু পার্বত্য রাস্তা “বার্মা-রোড” ধরে চীনের কুনমিং শহরে নিয়ে আসা হতো। চীন এমনকি ফরাসি ইন্দো-চীনের হ্যানয় বন্দর ব্যবহার শুরু করে। হ্যানয় বন্দরে আগত সাপ্লাই কুনমিং-য়ে নিয়ে যাওয়া হতো।

কিন্তু জাপান নাছোড়বান্দা, যেমন করেই হোক বহির্বিশ্বের সঙ্গে চীনের সব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবেই। চীনকে শতকরা একশ’ ভাগ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় আনতেই হবে। ১৯৪০ সালে জাপান বিনাযুদ্ধে ফরাসি ইন্দো-চীন দখল করে; ফলে চীনের জন্য হ্যানয়-বন্দর বন্ধ হয়ে যায়। জাপানের দাবির মুখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ১৯৪০ সালের জুলাই মাস থেকে আপাতত তিন মাসের জন্য “বার্মা-রোড” বন্ধ করে দেয়।

সম্মিলিত চীনাশক্তি নিয়ে জাপানিদের পরাভূত করার যে প্রতিজ্ঞা মাও-কে চিয়াং কাই শের দিয়েছিলেন, তিনি সেটি রাখেননি। সৌজন্যে। উইকিমিডিয়া; পাবলিক ডমেইন।

ইত্যবসরে, ইউরোপে জাপানের মিত্র জার্মানি ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের এক তারিখে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিবেশি দেশ পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং ১৯৪০ সালের এপ্রিল মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে জার্মানি ঝটিকা বেগে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম দখল করে নেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য এমন পরিস্থিতি জার্মান কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাষ হতে পারে বইকি।

১৯৪১ সালের এপ্রিল মাসে জাপান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন “অনাক্রমণ চুক্তি” সই করে। ফলস্বরূপ, চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সামরিক ও অন্যান্য সাহায্য সাপ্লাই বন্ধ করে দেয়। ইউরোপ ফ্রন্টে, জার্মানির পরবর্তী টার্গেট যে সোভিয়েত ইউনিয়ন, তারা সেটি আঁচ করতে পেরেছিল; জাপানের সঙ্গে “অনাক্রমণ চুক্তি” সইয়ের মাত্র প্রায় দুই মাসের মধ্যে সোভিয়েতদের আশঙ্কা বাস্তব রূপ নেয়; জার্মানি “জার্মান-সোভিয়েত ইউনিয়ন অনাক্রমণ চুক্তি” ভঙ্গ করে এবং ফিনল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৪১ সালের বাইশে জুন “অপারেশন বারবারোসা” ‘কোউড’ নামে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে।

জার্মানরা তিন মিলিয়নেরও বেশি সৈন্যসামন্ত নিয়ে তিনটি ‘সমান্তরাল অফেনসিডে’ এই আক্রমণ পরিচালনা করে। যুদ্ধের ইতিহাসে এটি ছিল শক্তিশালীতম, প্রবলতম আক্রমণকারী বাহিনীর দৃষ্টান্ত।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১১)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-১১)