শৈশব ও পরিবার থেকে প্রেরণা
বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী স্বনির্মিত বিলিয়নিয়ার ও সিরিয়াল উদ্যোক্তা লুসি গুও তার বাবা-মায়ের কঠোর পরিশ্রম ও মিতব্যয়ী জীবনধারাকে নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৩০ বছর বয়সী গুও সম্প্রতি ফোর্বস তালিকায় ১.৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে সর্বকনিষ্ঠ স্বনির্মিত নারী বিলিয়নিয়ার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
গুওর প্রথম উদ্যোগ ছিল স্কেল এআই (Scale AI), যা একটি এআই ডেটা লেবেলিং কোম্পানি। পরবর্তীতে প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা এটি ২৫ বিলিয়ন ডলারে অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে তিনি ২০২২ সালে চালু করা ‘পাসেস’ (Passes) নামের কনটেন্ট ক্রিয়েটর মনিটাইজেশন প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া ২০১৯ সালে তিনি ‘ব্যাকএন্ড ভেঞ্চারস’ (Backend Ventures) নামে একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গড়ে তোলেন, যা প্রাথমিক পর্যায়ের প্রযুক্তি স্টার্টআপে বিনিয়োগ করে।
চীনা অভিবাসী বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেমন্টে বেড়ে ওঠা গুও ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা ও অর্থের গুরুত্ব শিখেছিলেন। তার ভাষায়, বাবা-মা তাকে অ্যাবাকাস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাধ্য করতেন এবং পড়াশোনায় ভালো করার জন্য কঠোর চাপ দিতেন।
পড়াশোনা ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত
শিক্ষার প্রতি মনোযোগের কারণে গুও কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ও হিউম্যান-কম্পিউটার ইন্টারঅ্যাকশন বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তবে মাত্র দুই বছর পর, ডিগ্রি শেষ হওয়ার এক বছর বাকি থাকতেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেন। এ সিদ্ধান্ত তার বাবা-মায়ের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়।
গুও বলেন, “আমার বাবা-মা চীন থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন কেবল আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো করার জন্য। আমি যখন ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দিলাম, তাদের কাছে সেটি ছিল অপমানজনক।”
তবে তিনি থিয়েল ফেলোশিপে যোগ দেন, যেখানে তরুণদের ২ লাখ ডলার দেওয়া হয় নতুন ও উদ্ভাবনী কোম্পানি গড়ে তুলতে। গুওর মতে, বাবা-মা ভেবেছিলেন তিনি তাদের ভালবাসেন না। কিন্তু আসলে তিনি নিজের ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন।
শৈশবে অর্থ উপার্জনের অভ্যাস
লুসি গুও ছোটবেলা থেকেই টাকার গুরুত্ব বোঝেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতেই তিনি বিভিন্নভাবে টাকা কামানোর চেষ্টা শুরু করেন। মাঠে পোকেমন কার্ড, রঙিন পেন্সিল ও নানা জিনিস বিক্রি করতেন। যদি তিনি খারাপ আচরণ করতেন, বাবা-মা তার টাকা কেড়ে নিতেন। তখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া গুও হোম ডিপোতে গিয়ে একটি ডেবিট কার্ড সংগ্রহ করেন এবং পেপ্যাল অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের টাকা জমাতে শুরু করেন।
ইন্টারনেটে ব্যবসার বিস্তার
সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার উপার্জনের কৌশলও বদলাতে থাকে। নীওপেটস (Neopets) নামের একটি অনলাইন গেম খেলে তিনি বিরল পোষা প্রাণী ও ভার্চুয়াল মুদ্রা বিক্রি করতেন বাস্তব অর্থের বিনিময়ে। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং ও কোডিংয়ে দক্ষতা অর্জন করে তিনি গেমে প্রতারণার জন্য বট তৈরি ও বিক্রি করতে শুরু করেন।
এরপর ধীরে ধীরে ওয়েবসাইট বানিয়ে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয়, ইন্টারনেট মার্কেটিং টুল তৈরি এবং অন্যান্য নানা উদ্যোগে তিনি জড়িয়ে পড়েন। গুও বলেন, “একটার পর একটা উদ্যোগ নিজে থেকেই গড়ে উঠতে থাকে।”
লুসি গুওর গল্প তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রেরণাদায়ক। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রচলিত পথ ছেড়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিলে বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব। বাবা-মায়ের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও গুও নিজের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা ও ব্যবসায়িক দক্ষতা দিয়ে আজ বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী স্বনির্মিত নারী বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।