ট্রাম্প পরিবারের ক্রিপ্টো ব্যবসা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দুই ছেলের মালিকানাধীন ক্রিপ্টো টোকেন বাজারে লেনদেন শুরু করেছে। এর ফলে তাদের হাতে থাকা সম্পদের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি ডলার (প্রায় ৩৭০ কোটি পাউন্ড)।
গত বছরের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প পরিবার ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল’ নামের এই ক্রিপ্টো কোম্পানি চালু করে। তখন থেকেই এ নিয়ে স্বার্থের দ্বন্দ্বের প্রশ্ন উঠেছিল, কারণ তিনি একই সাথে এই শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করার অবস্থানে আছেন।
শেয়ার বিক্রির নিয়ম ও বাজারদর
কোম্পানি প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজস্ব ডিজিটাল টোকেন বিক্রি করে তহবিল সংগ্রহ করে। শুরুতে বিনিয়োগকারীদের টোকেন বিক্রি করার অনুমতি ছিল না। তবে জুলাইয়ে ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়—প্রতিষ্ঠাতাদের (যেমন ট্রাম্প পরিবার) বাইরে অন্য প্রাথমিক বিনিয়োগকারীরা তাদের মালিকানার সর্বোচ্চ ২০% পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন।
সোমবার লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকে টোকেন WLFI-এর দাম প্রায় ৫০% কমেছে। মঙ্গলবার এর দাম ছিল প্রায় ২২ সেন্ট, যা এখনো অনেক প্রাথমিক ক্রেতাদের জন্য লাভজনক।
ট্রাম্প পরিবারের সম্পদ
আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ট্রাম্প নিজেই প্রায় ১.৫৭৫ বিলিয়ন WLFI টোকেনের মালিক, যার বর্তমান মূল্য ৩৪০ কোটি ডলারেরও বেশি। এটি এখন তার সবচেয়ে বড় সম্পদের উৎস।
পুরো ট্রাম্প পরিবার মিলিয়ে কোম্পানির তৈরি ১০০ বিলিয়ন WLFI টোকেনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তাদের দখলে আছে। বর্তমান বাজারদরে এর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫০০ কোটি ডলার।
এছাড়া, টোকেন বিক্রি থেকে আসা আয়ের একটি অংশও ট্রাম্প ও তার ছেলেদের যায়। এভাবে তারা ইতোমধ্যেই ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করেছেন।
কোম্পানির নতুন চুক্তি
গত মাসে ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল আরেকটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়, যারা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৭৫০ কোটি ডলার সংগ্রহ করে এই টোকেন কিনেছে। এর ফলে কোম্পানিটি এখন টোকেনের ক্রেতা ও বিক্রেতা—দুটো ভূমিকাতেই রয়েছে।
সমালোচনা ও সরকারের প্রতিক্রিয়া
ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের ক্রিপ্টো ব্যবসা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। তাদের অভিযোগ, এই কোম্পানিগুলো দুর্নীতি ও স্বার্থের দ্বন্দ্বের পথ তৈরি করছে।
কিন্তু হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সরকারের নীতিমালা উদ্ভাবন ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, “মিডিয়ার তৈরি করা অভিযোগ দায়িত্বহীন এবং মানুষের আস্থা আরও নষ্ট করছে। প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার কখনো স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়ায়নি, ভবিষ্যতেও জড়াবে না।”
নীতি পরিবর্তন ও ক্রিপ্টো শিল্প
বাইডেন প্রশাসন টোকেন বিক্রিকে শেয়ারবাজারের নিয়মের আওতায় আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ট্রাম্প ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে “বিশ্বের ক্রিপ্টো রাজধানী” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি বিচার বিভাগ ক্রিপ্টো অপরাধ বিষয়ক বিশেষ টাস্ক ফোর্স ভেঙে দিয়েছে। আর্থিক নিয়ন্ত্রকেরাও বাইডেন যুগের নির্দেশনা থেকে সরে এসেছে।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের প্রধান পল অ্যাটকিনস বলেন, “অধিকাংশ ক্রিপ্টো সম্পদ সিকিউরিটি নয়। আমাদের এমন একটি কাঠামো দরকার, যা আমেরিকান বাজারে এগুলোকে বিকশিত হতে সাহায্য করবে।”