দূরবর্তী লোকে নবাববাড়িটাকে যেন প্রজ্বলিত অগ্নিময় দেখিয়াছিল।
প্রায় ১২১ খানা নৌকা ও পুলিশ স্টিমার জলমগ্ন হইয়া যায়। বিক্রমপুরে অঞ্চলে প্রায় ৭০ জন লোক-এই কাটকাবর্তের প্রবল কাড়নায় প্রাণত্যাগ করিয়াছিল। “একা প্রকাশ তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল “নবাববাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এক জয় হাতিউড় নামিতে দেখে।
দেখিতে দেখিতে না প্রণামটি দ্বিখণ্ড হইয়া একভাগ পশ্চিম দিকে ও একভাগ নবাববাড়ির দিকে প্রধাবিত হয়। উহা দ্বিখণ্ড হওয়ার সময়ই উহা হইতে সহস্র সহস্র অগ্নিময় গোলা উড্ডীন হইতে লোকে দেখিয়াছিল। যখন উহা নাবাববাড়ির ধ্বংস সাধনে নিরত হয়, তখন দূরবর্তী লোকে নবাববাড়িটাকে যেন প্রজ্বলিত অগ্নিময় দেখিয়াছিল।
প্রাত্যাবর্তের শব্দ শুনিয়া নবাব সাহেবগণ আপনাপন প্রকোষ্ঠ ছাড়িয়া উত্তর দিকের বারিন্দায় আসিয়াছিলেন, যেই তাঁহাদের আসা, অমনি পরিত্যক্ত প্রকোষ্ঠগুলি চুরমার হইয়াছিল।”….
কুশাই সরকার সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখতেন। পথকবি ছিলেন তিনি। বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে লেখা তার কবিতার সংকলন, নানাবিধ গান-এ ঢাকার টর্নেডো নিয়ে দীর্ঘ এক কবিতা আছে। এ কবিতায় ঢাকার কী কী ক্ষতি হয়েছিল তার বর্ণনা আছে। কুশাই-র ‘গান’ অনুযায়ী-
হাজারীবাগ থেকে তুফান শুরু হয়ে ব্যাপ্ত হয় বাড্ডানগর, বাগালপুর নবাবগঞ্জ, চৌধুরী বাজারে। এখানে অসংখ্য ঘর ধ্বসে গেছে এর অধিকাংশ বোধহয় ছিল কুটির। ঝড় এরপর আমলিগোলা হয়ে লালবাগে প্রবেশ করে। সেখানে কিছু সেপাই জখম হয়, মারা যায় একজন হাবিলদার। সেখান থেকে ‘তুফান ছুইটে পরে এইসে’ চাঁদনীঘাট, রহমতগঞ্জ ও চকবাজারে। জেলের এক কোণা ভেঙে তুফান বেগমবাজার হয়ে মুগলটুলি ঘুরে হানা দেয় কুমারটুলি।
লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সেখানকার দালানকোঠা। এছাড়া নৌকা চুরমার হয়ে গেছে, শাহবাগ, স্কুল-কলেজের বাগান ধ্বংসস্তূপ। জখম হয়েছেও অনেক। আসলে কুশাইর কবিতায় যে কাঁচা অনুভবটি আসে তা আমার বিবরণে অসম্ভব। তাই নিচে কবিতাটি উদ্ধৃতি করেছি।
(চলবে)
মুনতাসীর মামুন 



















