রেজুরান কী
সৌন্দর্যচর্চার নতুন একটি নাম হচ্ছে রেজুরান। এটি সালমনের কোষ থেকে তৈরি একধরনের ইনজেকশন, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে, স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায় এবং বয়সের ছাপ হালকা করার দাবি করে। বোটক্স বা ফিলার যেখানে পেশি শিথিল করে বা ত্বকে ভলিউম বাড়ায়, রেজুরান সেখান থেকে আলাদা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) এখনও এর ইনজেকশন অনুমোদন দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে এটি কেবল সিরাম বা ক্রিম আকারে ব্যবহার করা যায়। ফলে অনেক আমেরিকান নারী সৌন্দর্য চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় যাচ্ছেন।
জনপ্রিয়তা ও খরচ
রেজুরানের জনপ্রিয়তা সোশ্যাল মিডিয়া ও সেলিব্রিটিদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়েছে। কিম কার্দাশিয়ান ও জেনিফার অ্যানিস্টনের মতো তারকারা প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন। নিউইয়র্কের এক মার্কেটার ব্রিটনি ইয়িপ অনলাইনে পরিচিত নারীদের ঝলমলে ত্বক দেখে এটি ব্যবহার করতে সিউল উড়ে যান। প্রতি সেশনে প্রায় ৪৫০ ডলার খরচ হয়, আর পুরো ফল পেতে তিনটি সেশন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এফেক্ট এক বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
উৎপত্তি ও কোম্পানি
২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় রেজুরান প্রথম চালু হয়। বর্তমানে ২০টিরও বেশি দেশে এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে অনুমোদিত। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফার্মা রিসার্চের হাতে আরও বেশ কিছু সৌন্দর্যচিকিৎসার পণ্য রয়েছে। রেজুরানের সফলতার কারণে এর প্রতিষ্ঠাতা জং সাং-সু এ বছর ফোর্বসের হিসাবে বিলিয়নেয়ার হয়েছেন।
চিকিৎসকদের সন্দেহ
তবে কিছু আমেরিকান চিকিৎসক সতর্ক করছেন। তাদের মতে, তথ্য এখনও সীমিত এবং নির্ভরযোগ্য গবেষণা হয়নি। কেউ কেউ ত্বকে উন্নতি দেখছেন, আবার অনেকে তেমন কোনো পরিবর্তনই পাচ্ছেন না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লালচে ভাব, র্যাশ বা রঙ পরিবর্তনের কথাও শোনা গেছে। তবে কোম্পানির দাবি, গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, আর FDA অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা
টরোন্টোর নার্স ট্রিস ভো জানান, সিউলে রেজুরান ইনজেকশন নেওয়ার এক সপ্তাহ পরই তার ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শুষ্কতা কমে যায়, ব্রণ কমে আসে। কানাডায় এটি অনুমোদিত হলেও কোরিয়ায় খরচ তুলনামূলক কম।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বিজ্ঞাপন পরিচালক অ্যালেক্স চো হাইপারপিগমেন্টেশনের জন্য লেজার নিতে গিয়ে রেজুরানও চেষ্টা করেন। তার মতে, ত্বক ছিল আরও উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ।
কে-বিউটি ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই স্কিনকেয়ারের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্র। কে-পপ, কে-ড্রামা ও সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে কে-বিউটি বা কোরিয়ান বিউটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এশীয় সৌন্দর্যচর্চা অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উন্নত।
চিকিৎসা পদ্ধতি ও জটিলতা
রেজুরান ইনজেকশন দেওয়া হয় ত্বকের পৃষ্ঠের কাছাকাছি শতাধিক সূক্ষ্ম সুচ দিয়ে। প্রতিটি সেশনে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ইনজেকশন পয়েন্ট হয়। ফলে চিকিৎসার পর ত্বকে ছোট ছোট লালচে ফোলাভাব তৈরি হয়, যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে চলে যায়। ব্যথা তীব্র হওয়ায় অনেক ক্লিনিক অসাড় করার ক্রিম বা অ্যানেসথেশিয়া ব্যবহার করে।
নিউইয়র্কের ফেসিয়ালিস্ট সোফি পাভিট বলছেন, “আমি ৮০-এর পর গুনতে ছেড়ে দিয়েছিলাম। এটা অসহনীয় না হলেও মনে হয় হাজার কাঁটার খোঁচা খাচ্ছি।”
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রেজুরানকে অনেক সময় অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা হয়, যেমন কোলাজেন বাড়ানোর ফিলার, আল্ট্রাসাউন্ড স্কিন টাইটেনিং বা লেজার। ফলে কোন চিকিৎসার প্রভাবে আসল পরিবর্তন হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
অ্যালিউরের সাবেক সম্পাদক মিশেল লি দক্ষিণ কোরিয়ায় রেজুরান, লেজার ও জুভিলুক একত্রে নেন। তার মতে, ১০ দিনের মধ্যে ত্বক আশ্চর্যজনকভাবে উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়ে ওঠে। তবে কোন চিকিৎসা ফল দিয়েছে তা নিশ্চিত নন।
রেজুরান দ্রুত সৌন্দর্যচর্চার জগতে আলোচিত নাম হয়ে উঠছে। তবু বিশেষজ্ঞদের মতে, আরও বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রয়োজন। কেউ ফল পাচ্ছেন, কেউ পাচ্ছেন না। এর মধ্যে যারা উজ্জ্বল, মসৃণ ত্বকের স্বপ্ন দেখেন, তারা দক্ষিণ কোরিয়ার পথে রওনা হচ্ছেন।