নতুন শিপিং প্রকল্পের ঘোষণা
চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের (এনডিআরসি) চেয়ারম্যান ঝেং শানজিয়ে বুধবার ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটিতে এক প্রতিবেদন জমা দেন। তিনি থ্রি গর্জেস এলাকায় নতুন শিপিং চ্যানেলসহ বড় ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এই প্রকল্পটি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা শিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, এই নতুন প্রকল্প থ্রি গর্জেস-গেজহোবা হাব এলাকার ট্রাফিক সমস্যা কমাবে। এটি ইয়াংজি ইকোনমিক বেল্টের একটি কৌশলগত সংযোগস্থল। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে একটি ডাবল লাইন, পাঁচ ধাপের নতুন লক সিস্টেম তৈরি করা হবে এবং গেজহোবার শিপিং সক্ষমতা বাড়ানো হবে।
প্রকল্পের ব্যয় ও সময়সীমা
জুন মাসে প্রকাশিত দরপত্রের তথ্যে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয় হবে প্রায় ৭৬৬ কোটি ইউয়ান (প্রায় ১০৭ কোটি মার্কিন ডলার)। এটি সম্পূর্ণ করতে আট বছরেরও বেশি সময় লাগবে, এর পাশাপাশি ১২ মাসের প্রস্তুতিমূলক সময় থাকবে। এর সময়সূচি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা জুড়ে বিস্তৃত হবে।
এই প্রকল্পের ধারণা প্রথমে ১৩তম পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৪তম পরিকল্পনায় থ্রি গর্জেস হাবের জটিলতা কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক নীতির দ্বন্দ্ব
চীন বর্তমানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ানোর পাশাপাশি অবকাঠামো-নির্ভর প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করছে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা ব্যয় বাড়ানো এবং অবকাঠামোগত বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বেইজিংভিত্তিক উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গ্রিনপয়েন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলফ্রেডো মন্তুফার-হেলু বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক দুর্বলতার প্রেক্ষাপটে সরকার অবকাঠামো বিনিয়োগকে প্রবৃদ্ধি সমর্থনের প্রধান উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে থাকবে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত সংস্কারও জরুরি। এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার সম্ভাবনা উন্মোচিত হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের সংস্কার কার্যকর করতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে।
তিব্বতের বিশাল বাঁধ ও অন্যান্য উদ্যোগ
বুধবারের প্রতিবেদনে ঝেং শানজিয়ে তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন। এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে।
এছাড়া তিনি ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদক্ষেপ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। এর মধ্যে রয়েছে বিধিনিষেধ শিথিল করা, সেবাখাতে ব্যয় বৃদ্ধি, শিশু ভর্তুকি প্রদান এবং জনগণের ওপর বিনিয়োগ বাড়ানো।
জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
ঝেং বলেন, চীনের উন্নয়ন পরিবেশ এখন ক্রমশ জটিল, কঠিন এবং অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। এর পেছনে বহিরাগত ধাক্কা এবং অভ্যন্তরীণ ঝুঁকি দায়ী। তবে তিনি আশাবাদী যে ইতিবাচক উপাদানগুলোও ধীরে ধীরে জমা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ভালো সমন্বয় করতে হবে। এর মাধ্যমে অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে।