নতুন নীতি প্রবর্তন
সংযুক্ত আরব আমিরাতে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমিরাতিদের আকৃষ্ট ও ধরে রাখতে পরিবারবান্ধব নীতিমালা চালু করছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি, পূর্ণাঙ্গ পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং কর্মস্থলে নার্সারি স্থাপনের পরিকল্পনা। এসব উদ্যোগ আমিরাতাইজেশন কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মী কল্যাণ ও কাজ-জীবনের ভারসাম্যে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের নেতৃত্ব
বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তারা নারী কর্মীদের জন্য ১০০ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি, পিতৃত্বকালীন ছুটি, কর্মীদের পরিচালনায় পরিবার-সহায়ক গ্রুপ এবং কর্মস্থলে নার্সারি স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল কাসিম জানান, কর্মীদের সুখী রাখা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোই প্রধান লক্ষ্য। এ কারণে অফিসের পরিবেশ আধুনিক করা হয়েছে এবং নমনীয় কর্মঘণ্টা চালু করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব বিকাশ
ডিপি ওয়ার্ল্ড এমিরাতিদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। সম্প্রতি ১৫ জন এমিরাতি স্নাতক স্নাইডার ইলেকট্রিকের সহযোগিতায় নেতৃত্ব উন্নয়ন কর্মসূচি শেষ করেছেন। তারা টেকসই উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডিজিটাল উদ্ভাবন এবং নেতৃত্ব বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
অ্যাডিডাসের নমনীয় কর্মনীতি
অ্যাডিডাস তাদের ‘ফিউচার ট্যালেন্ট প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে এমিরাতি নাগরিকদের এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে উপযুক্ত পদে নিয়োগ করছে। তারা সপ্তাহে পাঁচদিন কাজের মধ্যে দুদিন বাসা থেকে কাজের সুযোগ দিচ্ছে।
অ্যাডিডাসের এমিরাতাইজেশন ম্যানেজার মাহদি আবদুল্লাহ বলেন, তারা কাজের ঘন্টার চেয়ে ফলাফলের ওপর জোর দেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য নমনীয় সময় রাখা হয়েছে। এছাড়া এমিরাতি কর্মীদের জন্য ভ্রমণ টিকিট, বোনাস, বীমা সুবিধা ও নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ইঅ্যান্ড গ্রুপের উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি
ইঅ্যান্ড গ্রুপ বিশেষ প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সমন্বয়ের মাধ্যমে এমিরাতিদের আকৃষ্ট করছে। প্রতিষ্ঠানের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওবেইদ আল জাবি বলেন, তারা এমিরাতিদের প্রতিভা বিকাশ, প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত করছেন।
প্রতিষ্ঠানটি কর্মীদের জন্য নমনীয় কর্মঘণ্টা, নির্দিষ্ট দিনে দূরবর্তী কাজ এবং পড়াশোনার ছুটির ব্যবস্থা রেখেছে।
সরকারি উদ্যোগ: নাফিস প্রোগ্রাম
আমিরাত সরকার নাফিস কর্মসূচির আওতায় ২০২৬ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে ৭৫ হাজার এমিরাতির কর্মসংস্থানের জন্য ২৪ বিলিয়ন দিরহাম বরাদ্দ দিয়েছে।এই কর্মসূচির মাধ্যমে এমিরাতি কর্মীদের মাসিক সর্বোচ্চ ৭,০০০ দিরহাম বেতন ভাতা, প্রতিটি সন্তানের জন্য মাসে ৮০০ দিরহাম ভাতা এবং পেনশন অবদান দেওয়া হচ্ছে।
বেসরকারি খাতে এমিরাতাইজেশন
বেসরকারি কোম্পানিগুলো বুঝতে পেরেছে, প্রতিযোগিতামূলক বেতনের পাশাপাশি পারিবারিক সহায়তা ও ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ ছাড়া প্রতিভাবান এমিরাতিদের ধরে রাখা সম্ভব নয়।
৫০ জনের বেশি কর্মী থাকা কোম্পানিকে বছরে ২ শতাংশ হারে এমিরাতি নিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ হার অর্জিত হয়। নিয়ম ভঙ্গকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিটি শূন্য পদে মাসে ৬,০০০ দিরহাম জরিমানা দিতে হবে, যা প্রতিবছর ১,০০০ দিরহাম করে বাড়তে থাকবে।
প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সফলতা
বর্তমানে বেসরকারি খাতে ১ লাখ ৩১ হাজারের বেশি এমিরাতি কর্মরত আছেন, যা ২০২৬ সালের লক্ষ্য ৭৫ হাজারের চেয়ে অনেক বেশি।
এটি প্রমাণ করছে যে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি পরিবারবান্ধব নীতি, ক্যারিয়ার উন্নয়ন এবং কাজ-জীবনের ভারসাম্য নিশ্চিত করলেই দক্ষ এমিরাতিদের আকৃষ্ট ও ধরে রাখা সম্ভব।