০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক অর্থনীতিতে—ডিজিটাল মিশরের উত্থান ইউফোরিয়া’ সিজন ৩—জ্যাকব এলর্ডির ইঙ্গিতে ফের উচ্ছ্বাস” প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১২) স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর শেষ অধ্যায়—নেটফ্লিক্সের মহাকাব্যিক সিরিজের অন্তরালের গল্প ‘হোয়েন দে বার্নড দ্য বাটারফ্লাই’—নারী গোপন সমাজের ইতিহাস ও আগুনের শক্তি নিয়ে ওয়েন–ই লির নতুন উপন্যাস মেগান লাউ—দর্শনশাস্ত্রের শিক্ষার্থী থেকে ‘হাউস অব ড্যান্সিং ওয়াটার’-এর আকাশচারী নায়িকা সুদানের জ্বালানি পুনর্গঠনে রাশিয়া—যুদ্ধোত্তর পুনরুদ্ধারে মস্কো প্রধান অংশীদার হতে পারে আফগানিস্তানে মাদকবিরোধী কঠোর অভিযান—আসক্তি, ধর্মীয় উপদেশ ও পুনর্বাসনের নতুন বাস্তবতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৩) অফিসে ফিরছে ওয়াই-টু-কে ফ্যাশন—জেন জেডের হাতে ড্রেস কোডের বদল

ভিসা জটিলতায় কোরিয়া–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন, ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

ভিসা সমস্যায় অচলাবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে দীর্ঘদিনের ভিসা জটিলতা ও ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা দূর করতে। প্রধানমন্ত্রী কিম মিন-সক ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভিসা সমস্যার সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্রে কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর প্রকল্প এগোনো সম্ভব নয়।

তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জর্জিয়ায় হুন্দাই-এলজি এনার্জি সলিউশন ব্যাটারি প্ল্যান্ট নির্মাণস্থলে অভিযান চালিয়ে ৩০০-এর বেশি কোরিয়ান কর্মীকে আটক করা হয়, যদিও এক সপ্তাহ পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। কিম বলেন, কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বা পুনরায় প্রবেশ করা এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠিন হয়ে থাকবে।

বিনিয়োগ চুক্তিতে অনিশ্চয়তা

প্রধানমন্ত্রী কিম জানান, ভিসা সংকটের কারণে জুলাইয়ে ঘোষিত ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কর্মী ও তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষার স্পষ্ট নিশ্চয়তা না দিলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।

Kim Yong-beom, presidential policy chief, briefs reporters on President Lee Jae Myung’s meeting with U.S. Treasury Secretary Scott Bessent at United Nations headquarters in New York, Wednesday (local time). Yonhap

প্রেসিডেন্টের সরাসরি বার্তা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে থাকা প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গে বৈঠকে কোরিয়ার অবস্থান সরাসরি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আলোচনাগুলো এমনভাবে হতে হবে যাতে উভয় দেশের জন্যই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয়।

লি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা সরাসরি কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায় না, কারণ দুই দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ও আর্থিক কাঠামো এক নয়। তাই আলোচনায় এসব পার্থক্য প্রতিফলিত হতে হবে।

মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা

প্রেসিডেন্টের নীতি প্রধান কিম ইয়ং-বম সাংবাদিকদের জানান, লি বৈঠকে বেসেন্টকে সরাসরি মুদ্রা বিনিময় (কারেন্সি সুইপ) চুক্তির প্রস্তাব দেন। লি বলেন, বিনিয়োগ কার্যকর করার সময় কোরিয়ার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এটি অপরিহার্য।

কিম জানান, বেসেন্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিম আরও বলেন, কোরিয়ার অবস্থান তিনটি মূলনীতির ওপর দাঁড়ানো—বাণিজ্যিক যৌক্তিকতা, কোরিয়ার আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক ফলাফল।

জাপানে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ নিজের আবেদন

জাপানের চুক্তি নিয়ে সতর্কতা

সরকারের দৃঢ় অবস্থান থেকে বোঝা যায়, কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের মতো কঠিন শর্তে যেতে চায় না। জাপানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তির ৪৫ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ হস্তান্তরের শর্ত রাখা হয়েছে। কোরিয়ান কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো জাপানের মতো নয় এবং তারা এ ধরনের শর্ত মেনে নিতে পারবে না।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

এই পরিস্থিতি কোরিয়ার বিনিয়োগ চুক্তির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে কোরিয়ান পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় পেতে এবং জোটকে আরও শক্তিশালী করতে এই প্যাকেজ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতা ও আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা না থাকায় পুরো প্রক্রিয়াই আটকে যেতে পারে।

আসন্ন এপেক বৈঠক

এখন দৃষ্টি যাচ্ছে আগামী ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর গিয়ংজুতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের দিকে। সেখানে প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা। দুই দেশের নেতারা মতপার্থক্য দূর করতে পারবেন কি না, তার ওপরই নির্ভর করছে কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই বিনিয়োগ চুক্তির ভবিষ্যৎ।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রাচীন ঐতিহ্য থেকে আধুনিক অর্থনীতিতে—ডিজিটাল মিশরের উত্থান

ভিসা জটিলতায় কোরিয়া–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন, ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকিতে

০৭:৩৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভিসা সমস্যায় অচলাবস্থা

দক্ষিণ কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে দীর্ঘদিনের ভিসা জটিলতা ও ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা দূর করতে। প্রধানমন্ত্রী কিম মিন-সক ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভিসা সমস্যার সমাধান না হলে যুক্তরাষ্ট্রে কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর প্রকল্প এগোনো সম্ভব নয়।

তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি জর্জিয়ায় হুন্দাই-এলজি এনার্জি সলিউশন ব্যাটারি প্ল্যান্ট নির্মাণস্থলে অভিযান চালিয়ে ৩০০-এর বেশি কোরিয়ান কর্মীকে আটক করা হয়, যদিও এক সপ্তাহ পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। কিম বলেন, কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বা পুনরায় প্রবেশ করা এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠিন হয়ে থাকবে।

বিনিয়োগ চুক্তিতে অনিশ্চয়তা

প্রধানমন্ত্রী কিম জানান, ভিসা সংকটের কারণে জুলাইয়ে ঘোষিত ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তিও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কর্মী ও তাদের পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনি সুরক্ষার স্পষ্ট নিশ্চয়তা না দিলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়।

Kim Yong-beom, presidential policy chief, briefs reporters on President Lee Jae Myung’s meeting with U.S. Treasury Secretary Scott Bessent at United Nations headquarters in New York, Wednesday (local time). Yonhap

প্রেসিডেন্টের সরাসরি বার্তা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে থাকা প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্টের সঙ্গে বৈঠকে কোরিয়ার অবস্থান সরাসরি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আলোচনাগুলো এমনভাবে হতে হবে যাতে উভয় দেশের জন্যই বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয়।

লি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে তা সরাসরি কোরিয়ার সঙ্গে তুলনা করা যায় না, কারণ দুই দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ও আর্থিক কাঠামো এক নয়। তাই আলোচনায় এসব পার্থক্য প্রতিফলিত হতে হবে।

মুদ্রা বিনিময় ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা

প্রেসিডেন্টের নীতি প্রধান কিম ইয়ং-বম সাংবাদিকদের জানান, লি বৈঠকে বেসেন্টকে সরাসরি মুদ্রা বিনিময় (কারেন্সি সুইপ) চুক্তির প্রস্তাব দেন। লি বলেন, বিনিয়োগ কার্যকর করার সময় কোরিয়ার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এটি অপরিহার্য।

কিম জানান, বেসেন্ট বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে শুনেছেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিম আরও বলেন, কোরিয়ার অবস্থান তিনটি মূলনীতির ওপর দাঁড়ানো—বাণিজ্যিক যৌক্তিকতা, কোরিয়ার আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য এবং উভয়পক্ষের জন্য লাভজনক ফলাফল।

জাপানে উচ্চশিক্ষাঃ নিজেই করুণ নিজের আবেদন

জাপানের চুক্তি নিয়ে সতর্কতা

সরকারের দৃঢ় অবস্থান থেকে বোঝা যায়, কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের মতো কঠিন শর্তে যেতে চায় না। জাপানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এবং চুক্তির ৪৫ দিনের মধ্যে নগদ অর্থ হস্তান্তরের শর্ত রাখা হয়েছে। কোরিয়ান কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো জাপানের মতো নয় এবং তারা এ ধরনের শর্ত মেনে নিতে পারবে না।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

এই পরিস্থিতি কোরিয়ার বিনিয়োগ চুক্তির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে কোরিয়ান পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় পেতে এবং জোটকে আরও শক্তিশালী করতে এই প্যাকেজ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিসা জটিলতা ও আর্থিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা না থাকায় পুরো প্রক্রিয়াই আটকে যেতে পারে।

আসন্ন এপেক বৈঠক

এখন দৃষ্টি যাচ্ছে আগামী ৩১ অক্টোবর ও ১ নভেম্বর গিয়ংজুতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের দিকে। সেখানে প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং-এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা। দুই দেশের নেতারা মতপার্থক্য দূর করতে পারবেন কি না, তার ওপরই নির্ভর করছে কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ এই বিনিয়োগ চুক্তির ভবিষ্যৎ।