মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে চেকোস্লোভাকিয়া নামক ইউরোপের একটি দেশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়।
অপরদিকে, মিউনিক চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স চেকোস্লোভাকিয়ার উত্তর-পশ্চিমাংশে সীমান্ত এলাকার জার্মান ভাষাভাষী “সুদেতেনল্যান্ড” (Sudetenland) জার্মান রাইখ-কে অর্পণ করে। চুক্তি অনুযায়ি দশই অক্টোবর (১০.১০.১৯৩৮) হিটলার সুদেতেনল্যান্ডের সংযুক্তি শুরু করেন। যদিও চুক্তিটিতে জার্মান পক্ষ সুদেতেনল্যান্ডের সীমানা ছেড়ে ভিনজমিতে এক ছটাক পরিমাণ পা দেবে না বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল কিন্তু ১৫ মার্চ ১৯৩৯ সালে (১৫.০৩.১৯৩৯), প্রাগবাসীরা শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে ‘লেফটহ্যান্ড ড্রাইভে’ চলমান জার্মান ট্যাঙ্কের বহর দেখে বুঝতে পারে যে তাদের আশঙ্কার ষোলো আনা পূর্তি হয়েছে।
জার্মান সেনাবাহিনী চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে নেয় এবং দেশটিকে দুই অংশে বিভক্ত করে: “বোহেমিয়া ও মোরাভিয়া” অংশকে জার্মান রাইখের অংশে পরিণত করা হয় এবং “স্লোভাকিয়া” অংশটি জার্মান প্রটেকটোরেটে পরিণত হয়। এভাবে, মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে চেকোস্লোভাকিয়া নামক ইউরোপের একটি দেশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়।
মিউনিখ চুক্তি সই হওয়ার পরপরই চুক্তিটির মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা চেকোস্লোভাকরা করে আসছিল। তাদের সেই দুরূহ দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠায় জর্জরিত, কঠিন অবমাননার দিনগুলোতে আন্তর্জাতিকভাবে দুই ব্যক্তিত্ব: আলবের্ট আইনস্টাইন ও (শান্তিনিকেতন থেকে) বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৃথক পৃথকভাবে, ১৯৩৭ সালের বড়োদিনের আগেরদিন, ক্রিসমাস ঈভে প্রাগ রেডিয়ো থেকে প্রচারিত “শান্তি ও গুডউইল” বাণী সম্প্রচার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এই অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন কারেল চাপেক এবং রবীন্দ্রনাথের জন্য দোভাষী ছিলেন প্রফেসর ভিনসেন্স লেসনি।

১৯৩৮ সালের হেমন্তকালে রবীন্দ্রনাথ। প্রকাশ্যে মিউনিখ চুক্তির নিন্দা করেন।
সৌজন্যে: নোবেল ফাউন্ডেশন আর্কাইভ। পাবলিক ডমেইন।
“১৯৩৮ সালের হেমন্তকালে রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ্যে মিউনিখ চুক্তির নিন্দা করেন। … চেকোস্লোভাকিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডঃ এর্ডোয়াড বেনেশকে… অসদাচরণ ও অবিচারের বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ ও ক্রোধ প্রকাশ করে টেলিগ্রাম পাঠান।” “১৯৩৮ সালের ১৫ অক্টোবর শান্তিনিকেতনের উত্তরায়ণে বসে রবীন্দ্রনাথ প্রফেসর লেসনিকে একটি চিঠি লেখেন… “সবত্র একই খবর কিভাবে ইংল্যান্ড আর ফ্রান্স তোমার এই চমকপ্রদ দেশটির সঙ্গে প্রতারণা করলো… মিস্টার নেহরুর সঙ্গে দেখা করেছি… এবং তিনি চেকোস্লোভাকিয়ার অঙ্গচ্ছেদের দুর্দশার কারণসমূহের একটা গ্রাফিক বর্ণণা দেন আমাকে… আশাকরি তোমার দেশের সাহসী মানুষেরা নিজের ভবিষ্যত আবারো পুনর্নিমাণে ব্যর্থ হবে না।”… চিঠির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ পাঠিয়েছিলেন “প্রায়শ্চিত্ত” কবিতার ইংরেজি কপি “দি পেনান্স”। (উৎস: “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাগ ভ্রমণ”, নাদিরা মজুমদার, জনকণ্ঠে প্রকাশিত, নভেম্বর ২০১৪)।
১৫ মার্চ ১৯৩৯ সালের কয়েক মাস পরে, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মান সেনাবাহিনী অনায়াসে পোল্যান্ডে “মার্চ” করে ঢোকে, সেসময় অস্ট্রিয়ার মতো পোল্যান্ডেও নাৎসীভক্তের দল ডমিনেন্ট ছিল। এর দুইদিন বাদে, ৩ মার্চ (০৩.০৩.১৯৩৯) যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স জার্মান রাইখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে কিন্তু পোল্যান্ডকে কোনো সামরিক সাহায্য প্রেরণ করে না। অপরদিকে, পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে পূর্বমুখী ধাবিত জার্মান বাহিনীর অগ্রগতি রোধের জন্য ১৭ মার্চ (১৭.০৩.১৯৩৯) সোভিয়েত ইউনিয়ন রেড আর্মি প্রেরণ করে। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়।
(চলবে)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২২)
নাঈম হক 



















