১১:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

প্রবীণ সাংবাদিক টি. জে. এস. জর্জ আর নেই

সংক্ষিপ্তসার

ভারতীয় সাংবাদিকতার অন্যতম প্রভাবশালী কণ্ঠ থায়িল জেকব সনি জর্জ (টি. জে. এস. জর্জ) শুক্রবার ৯৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। সাত দশকেরও বেশি দীর্ঘ কর্মজীবনে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ, ব্যঙ্গ-ব্যঞ্জনা আর নির্ভীক লেখনীর জন্য তিনি পাঠকসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন।

পরিচয় ও প্রারম্ভিক জীবন

১৯২৮ সালের ৭ মে কেরালায় জন্ম নেওয়া জর্জ মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ের দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালে যোগ দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতা শুরু করেন।

কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক

  • আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অনেক মাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি: ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট, দ্য সার্চলাইট, ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউসহ নানা পত্রিকা।
  • হংকংয়ে এশিয়াউইকের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক।
  • দেশে ফিরে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সম্পাদকীয় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন।
  • দীর্ঘ ২৫ বছর (১৯৯৭–২০২২) সাপ্তাহিক কলাম Point of View লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন; ৯৪ বছর বয়স পর্যন্ত কলামটি অব্যাহত রাখেন।

অবস্থান ও লেখনী-দৃষ্টিভঙ্গি

দুর্নীতি, সামাজিক অবিচার, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানবিরোধী হুমকির বিরুদ্ধে তিনি ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করেছেন। যুক্তি-ভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্পষ্ট অবস্থান ও শাণিত ব্যঙ্গ তাঁর লেখার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

বিপদের মুখে নির্ভীকতা

১৯৬৫ সালে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কে. বি. সাহাইয়ের বিরোধিতা করায় তিনি কারাবন্দী হন—স্বাধীন ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম দিকের সম্পাদকদের একজন। সে সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি. কে. কৃষ্ণ মেনন আদালতে তাঁর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এই অভিজ্ঞতা তিনি আত্মজীবনী Ghoshayatra-তে তুলে ধরেন।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

২০১১ সালে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ লাভ করেন।

শোকবার্তা ও স্মরণ

  • কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া তাঁকে স্মরণ করেছেন “পাঠককে ভাবতে, প্রশ্ন করতে ও জড়িত হতে শেখানো এক সত্যিকারের জনবুদ্ধিজীবী” হিসেবে।
  • কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, একজন সম্পাদক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন ভারতীয় গণমাধ্যম ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। জরুরি অবস্থার সময়েও তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অটল ছিলেন।

মূল তথ্য এক নজরে

  • পূর্ণ নাম: থায়িল জেকব সনি (টি. জে. এস.) জর্জ
  • জন্ম: ৭ মে ১৯২৮, কেরালা
  • মৃত্যু: শুক্রবার, বয়স ৯৭
  • পেশা: সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট
  • উল্লেখযোগ্য ভূমিকা: এশিয়াউইকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা
  • বিখ্যাত কলাম: Point of View (প্রকাশকাল প্রায় ২৫ বছর; শেষ: জুন ২০২২)
  • সম্মাননা: পদ্মভূষণ (২০১১)
  • গ্রন্থ: Ghoshayatra (আত্মজীবনী)

টি. জে. এস. জর্জ ভারতীয় সাংবাদিকতায় নির্ভীকতা, নৈতিক বলিষ্ঠতা ও ধারাবাহিকতার এক মানদণ্ড স্থাপন করে গেছেন—তাঁর লেখা ও মূল্যবোধ আগামী প্রজন্মের জন্যও দিশা দেখাবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবীণ সাংবাদিক টি. জে. এস. জর্জ আর নেই

০৬:৩০:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

সংক্ষিপ্তসার

ভারতীয় সাংবাদিকতার অন্যতম প্রভাবশালী কণ্ঠ থায়িল জেকব সনি জর্জ (টি. জে. এস. জর্জ) শুক্রবার ৯৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন। সাত দশকেরও বেশি দীর্ঘ কর্মজীবনে তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণ, ব্যঙ্গ-ব্যঞ্জনা আর নির্ভীক লেখনীর জন্য তিনি পাঠকসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন।

পরিচয় ও প্রারম্ভিক জীবন

১৯২৮ সালের ৭ মে কেরালায় জন্ম নেওয়া জর্জ মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ের দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালে যোগ দিয়ে তাঁর সাংবাদিকতা শুরু করেন।

কর্মজীবনের উল্লেখযোগ্য মাইলফলক

  • আন্তর্জাতিক ও জাতীয় অনেক মাধ্যমে নিয়মিত লেখালেখি: ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট, দ্য সার্চলাইট, ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউসহ নানা পত্রিকা।
  • হংকংয়ে এশিয়াউইকের প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক।
  • দেশে ফিরে দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সম্পাদকীয় উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন।
  • দীর্ঘ ২৫ বছর (১৯৯৭–২০২২) সাপ্তাহিক কলাম Point of View লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন; ৯৪ বছর বয়স পর্যন্ত কলামটি অব্যাহত রাখেন।

অবস্থান ও লেখনী-দৃষ্টিভঙ্গি

দুর্নীতি, সামাজিক অবিচার, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানবিরোধী হুমকির বিরুদ্ধে তিনি ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করেছেন। যুক্তি-ভিত্তিক বিশ্লেষণ, স্পষ্ট অবস্থান ও শাণিত ব্যঙ্গ তাঁর লেখার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

বিপদের মুখে নির্ভীকতা

১৯৬৫ সালে বিহারের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কে. বি. সাহাইয়ের বিরোধিতা করায় তিনি কারাবন্দী হন—স্বাধীন ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রথম দিকের সম্পাদকদের একজন। সে সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভি. কে. কৃষ্ণ মেনন আদালতে তাঁর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এই অভিজ্ঞতা তিনি আত্মজীবনী Ghoshayatra-তে তুলে ধরেন।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

২০১১ সালে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ লাভ করেন।

শোকবার্তা ও স্মরণ

  • কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া তাঁকে স্মরণ করেছেন “পাঠককে ভাবতে, প্রশ্ন করতে ও জড়িত হতে শেখানো এক সত্যিকারের জনবুদ্ধিজীবী” হিসেবে।
  • কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, একজন সম্পাদক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন ভারতীয় গণমাধ্যম ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। জরুরি অবস্থার সময়েও তিনি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অটল ছিলেন।

মূল তথ্য এক নজরে

  • পূর্ণ নাম: থায়িল জেকব সনি (টি. জে. এস.) জর্জ
  • জন্ম: ৭ মে ১৯২৮, কেরালা
  • মৃত্যু: শুক্রবার, বয়স ৯৭
  • পেশা: সাংবাদিক, সম্পাদক, কলামিস্ট
  • উল্লেখযোগ্য ভূমিকা: এশিয়াউইকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা
  • বিখ্যাত কলাম: Point of View (প্রকাশকাল প্রায় ২৫ বছর; শেষ: জুন ২০২২)
  • সম্মাননা: পদ্মভূষণ (২০১১)
  • গ্রন্থ: Ghoshayatra (আত্মজীবনী)

টি. জে. এস. জর্জ ভারতীয় সাংবাদিকতায় নির্ভীকতা, নৈতিক বলিষ্ঠতা ও ধারাবাহিকতার এক মানদণ্ড স্থাপন করে গেছেন—তাঁর লেখা ও মূল্যবোধ আগামী প্রজন্মের জন্যও দিশা দেখাবে।