০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৫০ স্টেলথ ফাইটারের নতুন রূপ?

নতুন ছবিতে দেখা দিলো জে-৫০ এর অগ্রগতি

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পে দ্রুত অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে নতুন কিছু ছবিতে। ২৫ সেপ্টেম্বর চীনা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে একটি টেইল-বিহীন যুদ্ধবিমানকে রানওয়েতে দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শেনইয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার, যেটিকে অনেক সময় জে-৫০ নামেও উল্লেখ করা হয়।

তবে এখনও চীনা কর্তৃপক্ষ ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

টেস্ট ফ্লাইটে পরিবর্তনের ইঙ্গিত

আগের ছবিগুলিতে বিমানের সামনের অংশে একটি নাক-মাউন্টেড এয়ার ডেটা বুম (পরিমাপক সেন্সর) দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নতুন ছবিতে সেটি আর নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পরীক্ষামূলক ধাপ অতিক্রম করে উন্নত সেন্সর ব্যবস্থা সরাসরি বিমানের ভেতর সংযুক্ত করা হয়েছে।

সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিং বলেছেন, ছবিগুলো যদি আসল হয় তবে এটি সম্ভবত শেনইয়াং-এর তৈরি দ্বিতীয় প্রোটোটাইপ। তার ভাষায়, “প্রথম প্রোটোটাইপ যদি ০০১ হয়ে থাকে, তবে এটি হয়তো ০০২ সংস্করণ। যুদ্ধবিমানের প্রথম ধাপে বুম ব্যবহৃত হলেও পরবর্তী ধাপে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়, যেমনটি আগে জে-২০ এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।”

New Chinese fighter jet seen over Chengdu tacitly confirmed by military

চীনা বিমান বিশ্লেষক ফু চিয়ানশাও ও একমত হয়ে বলেন, ছবিগুলো যদি আসল হয় তবে এটি নতুন প্রোটোটাইপ, যা চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার পরীক্ষার দ্রুত গতি প্রকাশ করে।

এক আসন ও দুই আসনের সম্ভাবনা

নতুন ছবিতে একটি একক আসনের ককপিট দেখা গেছে। অথচ আগের লম্বা ক্যানোপি দেখে ধারণা হয়েছিল এটি দুই আসনের হতে পারে। ফু চিয়ানশাও মনে করেন, এখনও উভয় ধরণের – এক আসন ও দুই আসন – সংস্করণ সমান্তরালে তৈরি হচ্ছে কি না, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “দুই আসনের সংস্করণ হলে সেটি হয়তো ড্রোন নিয়ন্ত্রণ বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে এক আসনের সংস্করণটি আক্রমণাত্মক অনুপ্রবেশ বা আকাশ নিয়ন্ত্রণ মিশনে বেশি উপযোগী হবে।”

সাধারণত দুই আসনের নকশায় দ্বিতীয় পাইলট ড্রোন বা অন্য বিমানের সঙ্গে ‘লয়্যাল উইংম্যান’ সিস্টেম ও সেন্সরের মাধ্যমে আক্রমণ বা গোয়েন্দা অভিযানে সমন্বয় করেন।

What do we know about China’s two next-generation aircraft?

যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন: ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রতিযোগিতা

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই ভবিষ্যতের যুদ্ধে আকাশ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দৌড়ে রয়েছে। এ বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, বোয়িং কোম্পানি এফ-২২ এর বদলি হিসেবে নতুন জেট তৈরি করবে, যা ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স প্রোগ্রাম’ এর অধীনে।

গত সপ্তাহে মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল ডেভিড অলভিন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই এফ-৪৭ ষষ্ঠ প্রজন্মের জেটের উৎপাদন শুরু করেছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চীন এ ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। বরং ছবি ফাঁস বা অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিতের মাধ্যমেই জানাচ্ছে যে প্রকল্পটি অগ্রসর হচ্ছে। এর আগে চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে এমন আরেকটি টেইল-বিহীন ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৩৬ ফাইটারের ছবিও প্রকাশ পেয়েছিল।

নতুন ছবিগুলো নিশ্চিত না হলেও এগুলো স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, চীন সমান্তরালে বিভিন্ন প্রোটোটাইপ তৈরি করছে। এক আসন ও দুই আসনের নকশা, উন্নত সেন্সর ব্যবস্থা এবং টেইল-বিহীন নকশা – সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধের প্রতিযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৫০ স্টেলথ ফাইটারের নতুন রূপ?

১০:০০:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

নতুন ছবিতে দেখা দিলো জে-৫০ এর অগ্রগতি

চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পে দ্রুত অগ্রগতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে নতুন কিছু ছবিতে। ২৫ সেপ্টেম্বর চীনা সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে একটি টেইল-বিহীন যুদ্ধবিমানকে রানওয়েতে দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শেনইয়াং এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার, যেটিকে অনেক সময় জে-৫০ নামেও উল্লেখ করা হয়।

তবে এখনও চীনা কর্তৃপক্ষ ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

টেস্ট ফ্লাইটে পরিবর্তনের ইঙ্গিত

আগের ছবিগুলিতে বিমানের সামনের অংশে একটি নাক-মাউন্টেড এয়ার ডেটা বুম (পরিমাপক সেন্সর) দেখা গিয়েছিল। কিন্তু নতুন ছবিতে সেটি আর নেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পরিবর্তন ইঙ্গিত দিচ্ছে যে পরীক্ষামূলক ধাপ অতিক্রম করে উন্নত সেন্সর ব্যবস্থা সরাসরি বিমানের ভেতর সংযুক্ত করা হয়েছে।

সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিং বলেছেন, ছবিগুলো যদি আসল হয় তবে এটি সম্ভবত শেনইয়াং-এর তৈরি দ্বিতীয় প্রোটোটাইপ। তার ভাষায়, “প্রথম প্রোটোটাইপ যদি ০০১ হয়ে থাকে, তবে এটি হয়তো ০০২ সংস্করণ। যুদ্ধবিমানের প্রথম ধাপে বুম ব্যবহৃত হলেও পরবর্তী ধাপে সেটি সরিয়ে ফেলা হয়, যেমনটি আগে জে-২০ এর ক্ষেত্রে হয়েছিল।”

New Chinese fighter jet seen over Chengdu tacitly confirmed by military

চীনা বিমান বিশ্লেষক ফু চিয়ানশাও ও একমত হয়ে বলেন, ছবিগুলো যদি আসল হয় তবে এটি নতুন প্রোটোটাইপ, যা চীনের ষষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার পরীক্ষার দ্রুত গতি প্রকাশ করে।

এক আসন ও দুই আসনের সম্ভাবনা

নতুন ছবিতে একটি একক আসনের ককপিট দেখা গেছে। অথচ আগের লম্বা ক্যানোপি দেখে ধারণা হয়েছিল এটি দুই আসনের হতে পারে। ফু চিয়ানশাও মনে করেন, এখনও উভয় ধরণের – এক আসন ও দুই আসন – সংস্করণ সমান্তরালে তৈরি হচ্ছে কি না, তা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, “দুই আসনের সংস্করণ হলে সেটি হয়তো ড্রোন নিয়ন্ত্রণ বা অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে এক আসনের সংস্করণটি আক্রমণাত্মক অনুপ্রবেশ বা আকাশ নিয়ন্ত্রণ মিশনে বেশি উপযোগী হবে।”

সাধারণত দুই আসনের নকশায় দ্বিতীয় পাইলট ড্রোন বা অন্য বিমানের সঙ্গে ‘লয়্যাল উইংম্যান’ সিস্টেম ও সেন্সরের মাধ্যমে আক্রমণ বা গোয়েন্দা অভিযানে সমন্বয় করেন।

What do we know about China’s two next-generation aircraft?

যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন: ষষ্ঠ প্রজন্মের প্রতিযোগিতা

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়েই ভবিষ্যতের যুদ্ধে আকাশ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরির দৌড়ে রয়েছে। এ বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, বোয়িং কোম্পানি এফ-২২ এর বদলি হিসেবে নতুন জেট তৈরি করবে, যা ‘নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স প্রোগ্রাম’ এর অধীনে।

গত সপ্তাহে মার্কিন বিমানবাহিনীর প্রধান জেনারেল ডেভিড অলভিন জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই এফ-৪৭ ষষ্ঠ প্রজন্মের জেটের উৎপাদন শুরু করেছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি উড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে চীন এ ধরনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। বরং ছবি ফাঁস বা অপ্রত্যক্ষ ইঙ্গিতের মাধ্যমেই জানাচ্ছে যে প্রকল্পটি অগ্রসর হচ্ছে। এর আগে চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে এমন আরেকটি টেইল-বিহীন ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৩৬ ফাইটারের ছবিও প্রকাশ পেয়েছিল।

নতুন ছবিগুলো নিশ্চিত না হলেও এগুলো স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে, চীন সমান্তরালে বিভিন্ন প্রোটোটাইপ তৈরি করছে। এক আসন ও দুই আসনের নকশা, উন্নত সেন্সর ব্যবস্থা এবং টেইল-বিহীন নকশা – সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতের আকাশযুদ্ধের প্রতিযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।