পাকিস্তানের ডিপিলেক্স স্মাইলঅ্যাগেইন ফাউন্ডেশন (ডিএসএফ) ও ল’রিয়েল পাকিস্তান, ফঁদাসিয়ঁ ল’রিয়েলের সহায়তায় সম্প্রতি এক ব্যতিক্রমী সাফল্য উদযাপন করেছে। চার মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা ৬০ নারী করাচির ডিপিলেক্স সেন্টারে সনদপত্র গ্রহণ করেন। এই কর্মসূচির নাম ছিল বিউটি ফর আ বেটার লাইফ (বিএফবিএল)।
এই নারীরা শুধু সাধারণ শিক্ষার্থী নন; তাঁরা অ্যাসিড হামলা ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার, যারা নতুন করে জীবন গড়ার জন্য এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কোর্সে অন্তর্ভুক্ত ছিল হেয়ার কেয়ার, স্কিন কেয়ার, মেকআপ ও সেলুন ব্যবস্থাপনা। তবে এর গুরুত্ব শুধুই পেশাগত দক্ষতা নয়—এটি তাদের জন্য ছিল স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার পথ।
মর্যাদা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা
সমাপনী অনুষ্ঠানে ডিএসএফের প্রতিষ্ঠাতা মাসারাত মিসবাহ বলেন,
“বিউটি ফর আ বেটার লাইফ কেবল একটি প্রশিক্ষণ নয়; এটি মর্যাদা ফিরিয়ে আনে, নতুন আশার আলো জ্বালায় এবং বাস্তব সুযোগ সৃষ্টি করে।”
তবে বাস্তবতা জটিল। এখনো অনেক বেঁচে থাকা নারী কর্মসংস্থানে বৈষম্যের শিকার, পরিবারে বঞ্চিত এবং দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার ঘাটতিতে ভোগেন। মিসবাহ জোর দিয়ে বলেন, পেশাগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি স্থায়ী চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি।
ভিন্নধর্মী ফ্যাশন শো
গ্র্যাজুয়েশনের দুই সপ্তাহ আগে অনুষ্ঠিত হয় রানওয়ে এসএস ’২৫। সাধারণ ফ্যাশন আয়োজনকে ছাপিয়ে এটি হয়ে ওঠে ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতা।
এই আয়োজনে দেশের শীর্ষ ডিজাইনার, মডেল, স্টাইলিস্ট, কোরিওগ্রাফার, সাংবাদিক, ব্লগার, ইনফ্লুয়েন্সার ও সেলিব্রেটিরা একত্রিত হন।
মাসারাত মিসবাহ অ্যাসিড হামলার শিকার ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে মঞ্চে হাঁটেন। ডিজাইনার জুবায়ের শাহর পোশাকে অংশগ্রহণকারীদের পাশে ছিলেন পেশাদার মডেলরা। কেউ আত্মবিশ্বাসী হাসিতে, কেউ দৃঢ় নীরবতায় রানওয়ে আলোকিত করেন। ফ্যাশন জগতের দর্শকরা দাঁড়িয়ে করতালি দেন। এটি ছিল শুধুই পোশাক প্রদর্শনী নয়, বরং ভুক্তভোগীদের নতুন করে সমাজে জায়গা করে নেওয়ার প্রতীক।
শিল্প, সংস্কৃতি ও অন্তর্ভুক্তি
ফ্যাশন শোতে শুধু পোশাক নয়—শিল্প-সংস্কৃতিও ছিল সমান গুরুত্বপূর্ণ।
- নৃত্যশিল্পী শীমা কিরমানি ফয়েজের কবিতায় কাথক পরিবেশন করেন।
- তরুণ নৃত্যশিল্পীরা আধুনিকতার সাথে শাস্ত্রীয় নৃত্যের মিশ্রণ ঘটান।
- ডিজাইনাররা ঐতিহ্যবাহী বিয়ের পোশাক থেকে শুরু করে আধুনিক নকশার পোশাক প্রদর্শন করেন।
- ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী কামি চৌধুরী শোস্টপার হিসেবে অংশ নিয়ে অন্তর্ভুক্তির বার্তা শক্তিশালী করেন।
এক তরুণের স্বপ্নপূরণ
এক তরুণ অংশগ্রহণকারী (নাম পরিবর্তিত), যিনি অ্যাসিড হামলা থেকে বেঁচে গেছেন, জানান যে তিনি কিশোর বয়সে মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। হামলার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। তবে এই রানওয়েতে হাঁটা তাঁর জন্য ছিল স্বপ্নপূরণের মুহূর্ত। তিনি বলেন:
“সারা জীবন মডেল হতে চেয়েছি, কিন্তু কখনো ভাবিনি আমার এমন সুযোগ আসবে। আজ আমার অসম্ভব স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।”
মূল বার্তা
বিউটি ফর আ বেটার লাইফ শুধু প্রশিক্ষণ নয়, বরং জীবন বদলে দেওয়ার একটি প্রয়াস। এটি বেঁচে থাকা মানুষদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার হাতিয়ার দিচ্ছে, একই সঙ্গে প্রমাণ করছে—স্বপ্নকে নতুন করে জাগানো সম্ভব।
এই কর্মসূচির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সমাজকে বোঝানো: সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক নয়; এটি হতে পারে পুনর্গঠন, মর্যাদা ফিরিয়ে আনা ও জীবনের নতুন আলো খোঁজার এক শক্তিশালী মাধ্যম।
পাকিস্তানে এই উদ্যোগ দেখিয়েছে, ট্রমা নয়—আশা ও স্বপ্নই হতে পারে জীবনের শেষ কথা। সমাজ একসাথে দাঁড়ালে সৌন্দর্য হতে পারে পরিবর্তনের হাতিয়ার, যা ভুক্তভোগীদের নতুন পরিচয়ে বাঁচার সুযোগ দেয়।