১১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫

ব্রিটেনের ইহুদিদের উপর হামলা: এক অবিচ্ছিন্ন উদ্বেগ

ব্রিটেনের ইহুদিরা হামলার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

২০২৩ সালের অক্টোবর ৭ তারিখে হামাসের হামলার পর থেকেই ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তাহীন ও বিচ্ছিন্ন মনে করছেন। তারা বলেছেন যে, শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, তাদের জন্য অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এটি ছিল শুধুমাত্র একটি প্রশ্নের উত্তর: কখন হবে, কিভাবে নয়।

সাম্প্রতিক দুই বছরে ব্রিটেনের ইহুদিরা অনুভব করেছেন যে, একসময় যেটি ছিল ইউরোপে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তা এখন বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। হামলার পর, পুলিৎজার পুরস্কৃত লেখক রাবি স্যার এফ্রাহিম মিরভিস বলেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য স্থানে ইহুদি বিদ্বেষের তরঙ্গ দেখছিলাম—এটাই তার ফলাফল।”

মিডিয়া ও রাজনৈতিক পরিবেশের ভূমিকা

হামলার আগে থেকেই ব্রিটেনের ইহুদিরা উল্লেখ করেছেন যে, গাজায় চলমান যুদ্ধ, ইসরায়েলের প্রতি ব্রিটেনের সরকার এবং জনসাধারণের অস্বস্তি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইহুদি বিদ্বেষ এবং প্রো-প্যালেস্টাইনের বিক্ষোভের প্রভাব তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। একটি প্রো-প্যালেস্টাইনের বিক্ষোভের মধ্যে, যা ম্যানচেস্টারের হামলার আগের রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে ইহুদি বিদ্বেষী স্লোগান ও পতাকা দেখানো হয়েছিল।

UK police name the 2 victims of Manchester synagogue attack : NPR

ইহুদি বিদ্বেষের বৃদ্ধির বিপদ

ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য এটাই ছিল পরবর্তী হামলার পূর্বাভাস। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের প্রায় অর্ধেক জনগণ মনে করেন যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রতি নাজিদের মতো আচরণ করছে। একটি ক্যাম্পেইন অ্যান্টি-সেমিটিজম সোসাইটির মতে, জরিপে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্রিটেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জনগণ গভীর ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব ধারণ করে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’আর বলেছেন যে, ব্রিটেনে ইহুদি বিদ্বেষ এবং সন্ত্রাসী হামলার আহ্বান স্পষ্টভাবে বেড়ে গেছে। “এখন, কেউ কেউ ইহুদি বিদ্বেষী হওয়ায় গর্বিত,” বলেছেন জশ ক্যাপলান, একটি লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্রের ডিজিটাল নিউজ প্রধান।

ধর্মীয় চিন্তার প্রভাব

ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ সদস্য এখন তাদের ধর্মীয় প্রতীক বহন করতে ভয় পাচ্ছেন, বিশেষত যেসব এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি। ব্রিটেনে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা ২০০০ সালের পর থেকে দ্বিগুণ হয়ে চার মিলিয়নে পৌঁছেছে।

অতীতে, দুটি সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও, গাজার যুদ্ধের কারণে এখন মধ্যে কিছু উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। মুসলিমদেরও ঘৃণা-অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে, তবে সম্প্রতি ইহুদি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহাবস্থানের এক নতুন দিক দেখা যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্রিটেনের ইহুদিদের উপর হামলা: এক অবিচ্ছিন্ন উদ্বেগ

০৮:২৫:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

ব্রিটেনের ইহুদিরা হামলার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

২০২৩ সালের অক্টোবর ৭ তারিখে হামাসের হামলার পর থেকেই ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের অনেকেই নিজেদের নিরাপত্তাহীন ও বিচ্ছিন্ন মনে করছেন। তারা বলেছেন যে, শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ম্যানচেস্টারের একটি সিনাগগে দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, তাদের জন্য অবাক হওয়ার মতো কিছু ছিল না। এটি ছিল শুধুমাত্র একটি প্রশ্নের উত্তর: কখন হবে, কিভাবে নয়।

সাম্প্রতিক দুই বছরে ব্রিটেনের ইহুদিরা অনুভব করেছেন যে, একসময় যেটি ছিল ইউরোপে তাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তা এখন বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। হামলার পর, পুলিৎজার পুরস্কৃত লেখক রাবি স্যার এফ্রাহিম মিরভিস বলেন, “আমরা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য স্থানে ইহুদি বিদ্বেষের তরঙ্গ দেখছিলাম—এটাই তার ফলাফল।”

মিডিয়া ও রাজনৈতিক পরিবেশের ভূমিকা

হামলার আগে থেকেই ব্রিটেনের ইহুদিরা উল্লেখ করেছেন যে, গাজায় চলমান যুদ্ধ, ইসরায়েলের প্রতি ব্রিটেনের সরকার এবং জনসাধারণের অস্বস্তি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইহুদি বিদ্বেষ এবং প্রো-প্যালেস্টাইনের বিক্ষোভের প্রভাব তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল। একটি প্রো-প্যালেস্টাইনের বিক্ষোভের মধ্যে, যা ম্যানচেস্টারের হামলার আগের রাতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেখানে ইহুদি বিদ্বেষী স্লোগান ও পতাকা দেখানো হয়েছিল।

UK police name the 2 victims of Manchester synagogue attack : NPR

ইহুদি বিদ্বেষের বৃদ্ধির বিপদ

ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য এটাই ছিল পরবর্তী হামলার পূর্বাভাস। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের প্রায় অর্ধেক জনগণ মনে করেন যে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের প্রতি নাজিদের মতো আচরণ করছে। একটি ক্যাম্পেইন অ্যান্টি-সেমিটিজম সোসাইটির মতে, জরিপে প্রমাণিত হয়েছে যে, ব্রিটেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জনগণ গভীর ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব ধারণ করে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সা’আর বলেছেন যে, ব্রিটেনে ইহুদি বিদ্বেষ এবং সন্ত্রাসী হামলার আহ্বান স্পষ্টভাবে বেড়ে গেছে। “এখন, কেউ কেউ ইহুদি বিদ্বেষী হওয়ায় গর্বিত,” বলেছেন জশ ক্যাপলান, একটি লন্ডনভিত্তিক সংবাদপত্রের ডিজিটাল নিউজ প্রধান।

ধর্মীয় চিন্তার প্রভাব

ব্রিটেনের ইহুদি সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ সদস্য এখন তাদের ধর্মীয় প্রতীক বহন করতে ভয় পাচ্ছেন, বিশেষত যেসব এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা বেশি। ব্রিটেনে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা ২০০০ সালের পর থেকে দ্বিগুণ হয়ে চার মিলিয়নে পৌঁছেছে।

অতীতে, দুটি সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও, গাজার যুদ্ধের কারণে এখন মধ্যে কিছু উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে। মুসলিমদেরও ঘৃণা-অপরাধের শিকার হতে হচ্ছে, তবে সম্প্রতি ইহুদি এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহাবস্থানের এক নতুন দিক দেখা যাচ্ছে।