১২:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

হামাসের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় আশার আলো

ইসলামিক জিহাদের সমর্থন ও জিম্মি মুক্তির সম্ভাবনা

হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসলামিক জিহাদ শনিবার জানায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করছে। এই সমর্থন ইঙ্গিত দিচ্ছে উভয় সংগঠনের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পথ সহজ হতে পারে।

শুক্রবার হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাবের কয়েকটি মূল বিষয় গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের সমাপ্তি, ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি।


বিশ্ব নেতাদের আশাবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

হামাসের এই অবস্থান বিশ্বজুড়ে আশার বার্তা দিয়েছে। অনেক বিশ্বনেতা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবি তুলেছেন। ইরান-সমর্থিত ইসলামিক জিহাদের সমর্থনও সেই আশাকে আরও জোরালো করেছে।

গাজাবাসীরা যারা বিগত দুই বছরে একের পর এক যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে দেখেছে, এবার খানিকটা আশার আলো দেখছে। হেবরনের বাসিন্দা শরীফ আল-ফাখুরি বলেন, “গাজার মানুষের কষ্ট কমুক। পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণের জন্য যে কোনো আশার আলোই বিজয়ের সমান।”


অমীমাংসিত প্রশ্ন ও শঙ্কা

তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত। বিশেষ করে ইসরায়েলের মূল দাবি: হামাস কি নিরস্ত্র হবে কি না। অন্যদিকে, অনেক ফিলিস্তিনি আশঙ্কা করছেন যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ পর্যন্ত এই শান্তি পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিতে পারেন।

জেরুজালেমের বাসিন্দা জামাল শিহাদা বলেন, “হামাস যখন রাজি হয়, নেতানিয়াহু তখন অস্বীকার করেন, এটাই তার অভ্যাস।”

Shock in Gaza as Trump appears to welcome Hamas response to US peace plan

ইসরায়েলের অবস্থান ও ট্রাম্পের চাপ

শনিবার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলা চললেও তা তুলনামূলক কম ছিল। এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, হামাস শান্তির জন্য প্রস্তুত এবং ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর তারা ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ: ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, সামরিক বাহিনীকে গাজায় আক্রমণাত্মক তৎপরতা কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বিশ্বব্যাপী সমর্থন

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডা ও ইউরোপসহ বিশ্বের বহু দেশের সমর্থন পেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ বলেন, “এই ভয়াবহ যুদ্ধের সমাপ্তি এখন নাগালের মধ্যে।”

শুক্রবার ট্রাম্প জানান, তিনি বিশ্বাস করেন হামাস এখন “স্থায়ী শান্তির” জন্য প্রস্তুত। তার মতে, এবার দায়িত্ব ইসরায়েলের। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ইসরায়েলকে এখনই গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত ও নিরাপদে জিম্মিদের বের করতে পারি।”


জিম্মিদের পরিবারের হতাশা ও দাবি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যুদ্ধ শেষ করার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। জিম্মিদের পরিবারের ফোরামের সদস্য এফরাত মাচিকাভা, যিনি জানুয়ারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মি গাদি মোসেসের ভাগ্নি, বলেন, “এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষ করে প্রতিটি জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। আমরা প্রতিশোধ চাই না, আমরা জীবন চাই।”


যুদ্ধের পটভূমি ও ক্ষয়ক্ষতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েলের হিসাবে এখনও ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলের আক্রমণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বাস্তবায়নের পথে রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতা রয়ে গেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হামাসের প্রতিক্রিয়ায় গাজায় আশার আলো

০৮:৫৫:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামিক জিহাদের সমর্থন ও জিম্মি মুক্তির সম্ভাবনা

হামাসের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসলামিক জিহাদ শনিবার জানায় তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা যুদ্ধ শেষ করার পরিকল্পনায় হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করছে। এই সমর্থন ইঙ্গিত দিচ্ছে উভয় সংগঠনের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির পথ সহজ হতে পারে।

শুক্রবার হামাস ট্রাম্পের প্রস্তাবের কয়েকটি মূল বিষয় গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের সমাপ্তি, ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহার এবং ইসরায়েলি জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি।


বিশ্ব নেতাদের আশাবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতিক্রিয়া

হামাসের এই অবস্থান বিশ্বজুড়ে আশার বার্তা দিয়েছে। অনেক বিশ্বনেতা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন এবং গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির দাবি তুলেছেন। ইরান-সমর্থিত ইসলামিক জিহাদের সমর্থনও সেই আশাকে আরও জোরালো করেছে।

গাজাবাসীরা যারা বিগত দুই বছরে একের পর এক যুদ্ধবিরতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে দেখেছে, এবার খানিকটা আশার আলো দেখছে। হেবরনের বাসিন্দা শরীফ আল-ফাখুরি বলেন, “গাজার মানুষের কষ্ট কমুক। পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগণের জন্য যে কোনো আশার আলোই বিজয়ের সমান।”


অমীমাংসিত প্রশ্ন ও শঙ্কা

তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন এখনও অমীমাংসিত। বিশেষ করে ইসরায়েলের মূল দাবি: হামাস কি নিরস্ত্র হবে কি না। অন্যদিকে, অনেক ফিলিস্তিনি আশঙ্কা করছেন যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শেষ পর্যন্ত এই শান্তি পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিতে পারেন।

জেরুজালেমের বাসিন্দা জামাল শিহাদা বলেন, “হামাস যখন রাজি হয়, নেতানিয়াহু তখন অস্বীকার করেন, এটাই তার অভ্যাস।”

Shock in Gaza as Trump appears to welcome Hamas response to US peace plan

ইসরায়েলের অবস্থান ও ট্রাম্পের চাপ

শনিবার ভোরে ইসরায়েলি বিমান হামলা চললেও তা তুলনামূলক কম ছিল। এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, হামাস শান্তির জন্য প্রস্তুত এবং ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের প্রতিক্রিয়ার পর তারা ট্রাম্প পরিকল্পনার প্রথম ধাপ: ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপর ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, সামরিক বাহিনীকে গাজায় আক্রমণাত্মক তৎপরতা কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বিশ্বব্যাপী সমর্থন

ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া অস্ট্রেলিয়া, ভারত, কানাডা ও ইউরোপসহ বিশ্বের বহু দেশের সমর্থন পেয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ বলেন, “এই ভয়াবহ যুদ্ধের সমাপ্তি এখন নাগালের মধ্যে।”

শুক্রবার ট্রাম্প জানান, তিনি বিশ্বাস করেন হামাস এখন “স্থায়ী শান্তির” জন্য প্রস্তুত। তার মতে, এবার দায়িত্ব ইসরায়েলের। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ইসরায়েলকে এখনই গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে, যাতে আমরা দ্রুত ও নিরাপদে জিম্মিদের বের করতে পারি।”


জিম্মিদের পরিবারের হতাশা ও দাবি

ইসরায়েলের অভ্যন্তরে যুদ্ধ শেষ করার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। জিম্মিদের পরিবারের ফোরামের সদস্য এফরাত মাচিকাভা, যিনি জানুয়ারিতে মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মি গাদি মোসেসের ভাগ্নি, বলেন, “এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শেষ করে প্রতিটি জিম্মিকে ঘরে ফিরিয়ে আনার সময় এসেছে। আমরা প্রতিশোধ চাই না, আমরা জীবন চাই।”


যুদ্ধের পটভূমি ও ক্ষয়ক্ষতি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। ইসরায়েলের হিসাবে এখনও ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে, এর মধ্যে ২০ জন জীবিত। পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলের আক্রমণে গাজায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এই প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও হামাসের প্রতিক্রিয়া শান্তির পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে বাস্তবায়নের পথে রাজনৈতিক ও সামরিক জটিলতা রয়ে গেছে।