নতুন প্রযুক্তিকে ‘বিপ্লবী’ আখ্যা
চীনের সামরিক সাময়িকী অর্ডন্যান্স ইন্ডাস্ট্রি সায়েন্স টেকনোলজি জানিয়েছে, পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-এর সর্বশেষ পানির নিচের মানববিহীন সিস্টেমগুলোকে “বিপ্লবী” প্রযুক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাময়িকীর প্রতিবেদনে বলা হয়, এগুলো বুদ্ধিমত্তা নির্ভরভাবে কাজ করতে সক্ষম এবং আধুনিক নৌযুদ্ধের নিয়ম বদলে দিতে পারে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর বেইজিংয়ে আয়োজিত বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে এ ধরনের নতুন ড্রোন ও সাবমার্সিবল প্রদর্শিত হয়। প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব সাবমার্সিবলের রয়েছে “শূন্য ব্যাসার্ধ ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা”, ফলে জটিল সামুদ্রিক পরিবেশেও সহজে কাজ করা সম্ভব।
সোনার এড়ানো ও সমন্বিত অস্ত্র ব্যবস্থা
লেখক তাং ই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব সিস্টেম ৯০ ডেসিবেলের নিচে কাজ করে, যা শত্রুর সোনার শনাক্তকরণ এড়াতে সহায়ক। এছাড়া এগুলোকে সাবমেরিন-নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, স্মার্ট মাইন এবং অন্যান্য মানববিহীন পানির নিচের যানবাহনের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব। এর মাধ্যমে বহুমাত্রিক আক্রমণ নেটওয়ার্ক তৈরি করা যায়।
উন্নত অস্ত্র প্রদর্শনী
চীনের জাপানবিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত কুচকাওয়াজে পিএলএ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, অ্যান্টি-শিপ মিসাইল, ড্রোন ও বিমানবাহী যুদ্ধবিমানও প্রদর্শন করে। নৌবাহিনী নতুন মানববিহীন সাবমার্সিবল, সারফেস ভেসেল এবং মাইন পাতা সিস্টেম তুলে ধরে।
সাময়িকীতে উল্লেখ করা হয়, এসব নতুন পানির নিচের সিস্টেম গোপনে শত্রুপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট অবরুদ্ধ করতে পারে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য শনাক্ত করতে সক্ষম এবং গণহারে আক্রমণ চালাতে পারে।
দীর্ঘস্থায়িত্ব ও চার্জিং প্রযুক্তি
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এসব যানবাহন অত্যন্ত দীর্ঘ সময় পানির নিচে কার্যকর থাকতে পারে। ভবিষ্যতে এগুলো পানির নিচে চার্জিং স্টেশনের মাধ্যমে আরও টেকসই হবে। যদিও রাশিয়া ইতোমধ্যেই এ ধরনের চার্জিং স্টেশন তৈরির কাজ করছে, চীন এখনো প্রকাশ্যে এমন কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আধুনিক নৌযুদ্ধের নতুন ধারণা
এক নৌ কমান্ডারের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, এসব নতুন অস্ত্র নৌযুদ্ধে মাইন পাতা কৌশলকে আরও শক্তিশালী করবে, টর্পেডো প্রতিরক্ষা বাড়াবে এবং আধুনিক নৌযুদ্ধের ধারণাই বদলে দেবে।
আরও বলা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এগুলো পানির উপরিভাগের মানববিহীন জাহাজ ও আকাশযানের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে তিন-মাত্রিক যুদ্ধ পরিচালনা করতে পারবে। স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ব্যবস্থা লক্ষ্য শনাক্ত ও হুমকি মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে।
‘ঝাঁক’ কৌশল ও বৈশ্বিক প্রভাব
প্রতিবেদনটি বলছে, বিপুল সংখ্যক মানববিহীন জাহাজ একসঙ্গে পরিচালিত হলে তা সমুদ্র নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ে নতুন ভেরিয়েবল হয়ে উঠবে। এসব নতুন প্রযুক্তি শুধু জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভূমিকা রাখবে না, বৈশ্বিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
এজেএক্স০০২ মাইন পাতা সিস্টেম
বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে এজেএক্স০০২ মানববিহীন মাইন পাতা সিস্টেম। এর দৈর্ঘ্য ১৮ থেকে ২০ মিটার এবং এটি পাম্প-জেট প্রপালশন সিস্টেমে চলে। এটি রাশিয়ার পসাইডন পারমাণবিক টর্পেডোর মতো দেখতে হলেও এটি পারমাণবিক-চালিত বা পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত কি না তা জানা যায়নি।
প্রতিবেদনে একে “বিপ্লবী” আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একাধিক এজেএক্স০০২ ইউনিট একত্রে পানির নিচে যোগাযোগ রিলে ও ডাটা শেয়ারিং ব্যবস্থার মাধ্যমে বুদ্ধিমান মাইনফিল্ড গড়ে তুলতে সক্ষম। এর ফলে কম খরচে কার্যকর অবরোধ চালানো সম্ভব হবে।
কৌশলগত গুরুত্ব ও তাইওয়ান প্রসঙ্গ
অজ্ঞাতনামা সামরিক বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব সিস্টেম কেবল প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং সামুদ্রিক আধিপত্যের ধারণাকেই পুনর্গঠন করছে।
চীন ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি শক্তিশালী ‘ব্লু-ওয়াটার’ নৌবাহিনী গড়ে তুলতে চায়। তখন তাদের ছয়টি বিমানবাহী রণতরী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ান প্রণালীর সংঘাতে এসব সম্পদ উভচর অভিযানকে সহায়তা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।
বেইজিং মনে করে তাইওয়ান চীনের অংশ এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে পুনঃএকত্রীকরণ ঘটানো হবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও অধিকাংশ দেশ তাইওয়ানকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও চীনের বলপ্রয়োগের বিরোধিতা করছে এবং তাইওয়ানকে অস্ত্র সরবরাহ করছে।