০২:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
আগ্নেয়গিরি থেকে পর্যটন ঢেউ: আইসল্যান্ডের পরিবর্তিত চেহারা হলিউড তারকা স্কারলেট জোহানসনের প্রথম পরিচালনা ‘এলেনর দ্য গ্রেট’ প্রাণীদের জন্য রক্তব্যাংক: চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামে নতুন উদ্যোগ মধ্য এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত অগ্রযাত্রা বিশ্বজুড়ে এআই ব্যবহারে আস্থার উত্থান, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ঘাটতি কোয়াড সম্মেলন অনিশ্চিত: বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও রাজনীতির চাপে থমকে গেছে ভারতের একাধিক রাজ্যে কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ: পরীক্ষায় ধরা পড়ল বিষাক্ত রাসায়নিক জাপানের অতিদক্ষিণপন্থী ভোটারদের মনস্তত্ত্ব: কী তাদের উদ্বুদ্ধ করছে? চায়ের ইতিহাস থেকে শিক্ষা: অতিরিক্ত উৎপাদনের যুগে কী চাষ করা উচিত? নতুন জিনগত সূচক শনাক্ত করল বিজ্ঞানীরা — মস্তিষ্কের টিউমার আগেই শনাক্তের নতুন সম্ভাবনা

গাজায় শান্তি ফেরা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং হামাস ও ইসরায়েলের অবস্থান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এবং সেখানে শান্তি ফিরবে কি না–– এ নিয়ে এখনো রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মেনে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস, তবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চায় তারা।

ট্রাম্প হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নিলেও তাদের ‘আলোচনার’ দাবি নিয়ে এখনো কিছু বলেননি।

এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ অনুযায়ী গাজায় সামরিক অভিযান সীমিত করা হবে হবে বলে যদিও জানিয়েছে ইসরায়েল, তবে হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এরকম কিছু বলেনি তারা।

ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর পরও শনিবার ভোরে গাজায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ দেখা গেছে। অন্তত তিনটি জায়গায় ইসরায়েলি হামলা হয়েছে বলে স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার হাসপাতালগুলো ৬৬ জনের মৃতদেহ এবং ২৬৫ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় এখনো অনেক ভুক্তভোগী ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন।

মন্ত্রণালয় অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে দুই শিশুর মৃত্যুর তথ্যও রেকর্ড করেছে, যার ফলে অপুষ্টিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রস্তাব হলো:

  • গাজায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করা।
  • হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং দুই ডজনেরও বেশি মৃতদেহের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি।
  • শত শত আটক ফিলিস্তিনিকে এবং গাজার অন্যান্য বাসিন্দাদের দেহাবশেষ মুক্ত করবে ইসরায়েল।
  • হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং গাজা শাসনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
  • পক্ষগুলো এসব প্রস্তাবে সম্মত হলে “পূর্ণ সহায়তা” অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হবে।
  • ট্রাম্পের নেতৃত্বে এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং অন্যান্য নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক “বোর্ড অব পিস” বা “শান্তি বোর্ড” গঠন করা হবে এবং এর তত্ত্বাবধানে একটি “টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির” মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে।
  • এই পরিকল্পনাটি ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। যদিও নেতানিয়াহু সোমবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে এই প্রস্তাবটি বাতিল করে দিয়েছেন।

হামাস কোন কোন বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর কোনগুলোতে হয়নি?

গাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস শনিবার যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেখানে ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় পুরোপুরি সম্মতি জানানো হয়নি।

তবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব নেতারা যেসব বিষয়কে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছিলেন, সেগুলো মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

যেসব বিষয়ে তারা একমত হয়েছে:

  • হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য রোববার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই তারা এই তথ্য জানায়।
  • একইসঙ্গে হামাস এটাও বলেছে যে তারা “ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামী নেতাদের সমর্থনের ভিত্তিতে” প্রস্তাবিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার (যা টেকনোক্র্যাটদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে) কাছে গাজা উপত্যকার প্রশাসন হস্তান্তর করতেও রাজি আছে।

যেসব বিষয়ে হামাস আলোচনা চায়:

  • গোষ্ঠীটি তাদের বিবৃতিতে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করেনি।
  • গাজার শাসনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না, এরকম কিছুও তারা বলেনি।

তবে ট্রাম্প এই বিষয়গুলোতে রাজি হবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে, ২০২৩ সালে ৭ই অক্টোবরের হামলায় অংশগ্রহণকারী হামাসের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করেছে।

প্রায় দুই বছর আগের ওই হামলার সময় ইসরায়েল থেকে ধরে নেওয়া ২৫১ জনের মধ্যে, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত বলেও মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসের বক্তব্যকে “ইতিবাচক” বলে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েল কী করছে

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে এগিয়ে নিতে আলোচনাকারী দলগুলোকে আলোচনা আবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

হারেৎজ এবং চ্যানেল টুয়েলভ এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের আলোচনার জন্য “আজই চলে যাওয়ার” প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদিও আলোচকরা কোথায় ভ্রমণ করবেন তা স্পষ্ট নয়।

এর আগে হামাস বিবৃতি দেওয়ার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অবিলম্বে বাস্তবায়নে ইসরায়েল প্রস্তুত হচ্ছে।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, আইডিএফ প্রধান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে রাতভর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিবৃতিতে গাজায় সামরিক তৎপরতা হ্রাস করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে জানানো হয়েছে- সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে যাতে যে যেকোনো মুহূর্তে হুমকির জবাব দিতে পারে।

এরপর শনিবার সকালে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব গাজা সিটি ‘দখলের’ তৎপরতা থামাতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় সামরিক তৎপরতা কেবল প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে।

তবে একই সময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়েছে যে উত্তর দিকে ওয়াদি গাজা এলাকা “একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে রয়ে গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “এখনো গাজা শহরকে ঘিরে রেখেছে” এবং সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা “চরম বিপদ ডেকে আনছে”, আইডিএফ এর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এ কথা লিখেছেন।

তিনি বলেছেন, রশিদ স্ট্রিট এখনো খোলা আছে যাতে লোকেরা দক্ষিণে যেতে পারে।

রাজনৈতিক বিরোধীদের সমর্থন

ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এবং ইসরায়েলের ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ইয়ার গোলান নেতানিয়াহুকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

“এই মুহূর্তে, আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের চুক্তিকে নষ্ট করার জন্য কাউকে – হামাস বা নেতানিয়াহু এবং তার সরকারকেও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়,” গোলান এক্স-এ পোস্ট করেছেন।

ডেমোক্র্যাট দলের নেতা বলেছেন যে চুক্তি বাস্তবায়ন, জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের শাসনের অবসান এবং গাজা পুনর্গঠন নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের “এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বাত্মক লড়াই করা উচিত”।

লাপিদ বলেছেন যে তিনি মার্কিন প্রশাসনকে বলেছেন যে যুদ্ধ শেষ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে।

“চুক্তির বিশদ চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আলোচনায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা করা উচিত” লাপিদ এক্স-এ লিখেছেন।

অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা

গত সোমবার হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিভিন্ন রেখা দেখানো হয়েছে।

যদিও মানচিত্রটি কিছুটা আনুমানিক বলে মনে হচ্ছে।

যদি শান্তি পরিকল্পনা হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো সীমানা অনুসরণ করে, তাহলে সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে থাকবে।

দ্বিতীয় প্রত্যাহারের পর গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ দখল ইসরায়েলের হাতে থাকবে। আর প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা একটি “নিরাপত্তা বাফার জোন” তৈরি করবে, এরপরও গাজার প্রায় ১৫ শতাংশ দখল করে রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিজস্ব মানচিত্রের সর্বশেষ সংস্করণে তারা “বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” বলে যে এলাকা দেখিয়েছে, তা গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

এদিকে, শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের জবাবে যদিও কিছুটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে পরিকল্পনার মূল কয়েকটি বিষয় নিয়ে হামাস তাদের অবস্থান না জানানোয় সংঘাতে এরপর কী হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত নয়।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা অলিভার ম্যাকটার্নান বিবিসিকে বলেন, হামাস এখন ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেডিনয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছে যে তারা শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনার জন্য হামাসের আহ্বান মেনে নেবে কি না।

তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য কোন পক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে তার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প ইসরায়েলকে হত্যা বন্ধ করতে এবং গাজায় সাহায্য পাঠাতে বলার পাশাপাশি আরও আলোচনার অনুমতি দেওয়ার কথা বলবেন।

গাজায় বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা রুশদি আবু আলৌফ বলছেন, গাজার মানুষ হতবাক এবং নাটকীয় ও দ্রুতগতির ঘটনাবলী বুঝতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

“গাজার ভেতর থেকে আমি শত শত বার্তা পেয়েছি, যেখানে প্রশ্ন করা হচ্ছে- যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গেছে? এটি কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সেসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে আমি হিমশিম খাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “এই সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যুদ্ধ থামাতে সফল হবে কি না তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, গাজা যুদ্ধ একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে প্রবেশ করেছে।”

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করার বিষয়টি বিশ্বনেতারা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা অন্যান্য যেসব বিষয়ে সম্মতি আসেনি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “গাজার মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও আলোচনা এবং টেকসই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, শান্তি পরিকল্পনার অন্তত কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করায় যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং “যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর” একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, “আমরা সকল পক্ষকে বিলম্ব না করে চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।”

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে একটি গঠনমূলক এবং উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।”

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার শান্তি এখন নাগালের মধ্যে… প্রায় দুই বছর পর, এটি শান্তির সেরা সুযোগ।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “গাজায় সব জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নাগালের মধ্যে! দেরি না করে হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা উচিত।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, “সবার জন্য এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো যা সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তির দিকে পরিচালিত করে। ইতালি তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, “আমরা সব পক্ষকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য অবিলম্বে কাজ করতে উৎসাহিত করছি।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া “উৎসাহজনক” এবং “এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে”।

“গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মিদের মুক্তি এখনই সম্ভব,” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স-এ পোস্ট করে তিনি আরও বলেন, ইউরোপ যুদ্ধের অবসান এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যাকে তিনি “শান্তির একমাত্র কার্যকর সমাধান” বলে অভিহিত করেছেন।

BBC News বাংলা

জনপ্রিয় সংবাদ

আগ্নেয়গিরি থেকে পর্যটন ঢেউ: আইসল্যান্ডের পরিবর্তিত চেহারা

গাজায় শান্তি ফেরা, ট্রাম্পের পরিকল্পনা এবং হামাস ও ইসরায়েলের অবস্থান নিয়ে ‘অস্পষ্টতা’

১১:০১:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এবং সেখানে শান্তি ফিরবে কি না–– এ নিয়ে এখনো রয়ে গেছে অনেক প্রশ্ন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মেনে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে হামাস, তবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করতে চায় তারা।

ট্রাম্প হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নিলেও তাদের ‘আলোচনার’ দাবি নিয়ে এখনো কিছু বলেননি।

এদিকে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার ‘প্রথম ধাপ’ অনুযায়ী গাজায় সামরিক অভিযান সীমিত করা হবে হবে বলে যদিও জানিয়েছে ইসরায়েল, তবে হামলা পুরোপুরি বন্ধ হবে কি না এরকম কিছু বলেনি তারা।

ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানোর পরও শনিবার ভোরে গাজায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ দেখা গেছে। অন্তত তিনটি জায়গায় ইসরায়েলি হামলা হয়েছে বলে স্থানীয় আল-শিফা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকার হাসপাতালগুলো ৬৬ জনের মৃতদেহ এবং ২৬৫ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় এখনো অনেক ভুক্তভোগী ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছেন।

মন্ত্রণালয় অনাহার এবং অপুষ্টির কারণে দুই শিশুর মৃত্যুর তথ্যও রেকর্ড করেছে, যার ফলে অপুষ্টিতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।

ট্রাম্পের পরিকল্পনা

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর হোয়াইট হাউস সফরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রস্তাব হলো:

  • গাজায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করা।
  • হামাসের হাতে আটক ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং দুই ডজনেরও বেশি মৃতদেহের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি।
  • শত শত আটক ফিলিস্তিনিকে এবং গাজার অন্যান্য বাসিন্দাদের দেহাবশেষ মুক্ত করবে ইসরায়েল।
  • হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং গাজা শাসনে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
  • পক্ষগুলো এসব প্রস্তাবে সম্মত হলে “পূর্ণ সহায়তা” অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হবে।
  • ট্রাম্পের নেতৃত্বে এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং অন্যান্য নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি আন্তর্জাতিক “বোর্ড অব পিস” বা “শান্তি বোর্ড” গঠন করা হবে এবং এর তত্ত্বাবধানে একটি “টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির” মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যত শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে।
  • এই পরিকল্পনাটি ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য দরজা উন্মুক্ত রেখেছে। যদিও নেতানিয়াহু সোমবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে এই প্রস্তাবটি বাতিল করে দিয়েছেন।

হামাস কোন কোন বিষয়ে সম্মত হয়েছে আর কোনগুলোতে হয়নি?

গাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস শনিবার যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে, সেখানে ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় পুরোপুরি সম্মতি জানানো হয়নি।

তবে যুদ্ধ শেষ করার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব ও আরব নেতারা যেসব বিষয়কে অতি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছিলেন, সেগুলো মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।

যেসব বিষয়ে তারা একমত হয়েছে:

  • হামাস তাদের হাতে বন্দি থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য রোববার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই তারা এই তথ্য জানায়।
  • একইসঙ্গে হামাস এটাও বলেছে যে তারা “ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামী নেতাদের সমর্থনের ভিত্তিতে” প্রস্তাবিত স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার (যা টেকনোক্র্যাটদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে) কাছে গাজা উপত্যকার প্রশাসন হস্তান্তর করতেও রাজি আছে।

যেসব বিষয়ে হামাস আলোচনা চায়:

  • গোষ্ঠীটি তাদের বিবৃতিতে নিরস্ত্রীকরণের কথা উল্লেখ করেনি।
  • গাজার শাসনব্যবস্থায় ভবিষ্যতে আর কোনো ভূমিকা পালন করবে না, এরকম কিছুও তারা বলেনি।

তবে ট্রাম্প এই বিষয়গুলোতে রাজি হবেন কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এদিকে, ২০২৩ সালে ৭ই অক্টোবরের হামলায় অংশগ্রহণকারী হামাসের মিত্র ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করেছে।

প্রায় দুই বছর আগের ওই হামলার সময় ইসরায়েল থেকে ধরে নেওয়া ২৫১ জনের মধ্যে, হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত বলেও মনে করা হচ্ছে।

এছাড়া, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং হামাসের বক্তব্যকে “ইতিবাচক” বলে বর্ণনা করেছেন।

ইসরায়েল কী করছে

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম বলছে, শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে এগিয়ে নিতে আলোচনাকারী দলগুলোকে আলোচনা আবার শুরু করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

হারেৎজ এবং চ্যানেল টুয়েলভ এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের আলোচনার জন্য “আজই চলে যাওয়ার” প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যদিও আলোচকরা কোথায় ভ্রমণ করবেন তা স্পষ্ট নয়।

এর আগে হামাস বিবৃতি দেওয়ার পর বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অবিলম্বে বাস্তবায়নে ইসরায়েল প্রস্তুত হচ্ছে।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানায়, আইডিএফ প্রধান সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে রাতভর বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়ন নিয়ে আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিবৃতিতে গাজায় সামরিক তৎপরতা হ্রাস করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে জানানো হয়েছে- সেনারা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে যাতে যে যেকোনো মুহূর্তে হুমকির জবাব দিতে পারে।

এরপর শনিবার সকালে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব গাজা সিটি ‘দখলের’ তৎপরতা থামাতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। গাজা উপত্যকায় সামরিক তৎপরতা কেবল প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে।

তবে একই সময়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়েছে যে উত্তর দিকে ওয়াদি গাজা এলাকা “একটি বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” হিসেবে রয়ে গেছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী “এখনো গাজা শহরকে ঘিরে রেখেছে” এবং সেখানে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা “চরম বিপদ ডেকে আনছে”, আইডিএফ এর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এ কথা লিখেছেন।

তিনি বলেছেন, রশিদ স্ট্রিট এখনো খোলা আছে যাতে লোকেরা দক্ষিণে যেতে পারে।

রাজনৈতিক বিরোধীদের সমর্থন

ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ এবং ইসরায়েলের ডেমোক্র্যাট দলের নেতা ইয়ার গোলান নেতানিয়াহুকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

“এই মুহূর্তে, আমাদের সম্মিলিত লক্ষ্য হলো ট্রাম্পের চুক্তিকে নষ্ট করার জন্য কাউকে – হামাস বা নেতানিয়াহু এবং তার সরকারকেও সুযোগ দেওয়া উচিত নয়,” গোলান এক্স-এ পোস্ট করেছেন।

ডেমোক্র্যাট দলের নেতা বলেছেন যে চুক্তি বাস্তবায়ন, জিম্মিদের মুক্তি, হামাসের শাসনের অবসান এবং গাজা পুনর্গঠন নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের “এগিয়ে যাওয়া এবং সর্বাত্মক লড়াই করা উচিত”।

লাপিদ বলেছেন যে তিনি মার্কিন প্রশাসনকে বলেছেন যে যুদ্ধ শেষ করার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে।

“চুক্তির বিশদ চূড়ান্ত করার জন্য ইসরায়েলের রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আলোচনায় যোগ দেওয়ার ঘোষণা করা উচিত” লাপিদ এক্স-এ লিখেছেন।

অনিশ্চয়তা ও অস্পষ্টতা

গত সোমবার হোয়াইট হাউস একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এগিয়ে গেলে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিভিন্ন রেখা দেখানো হয়েছে।

যদিও মানচিত্রটি কিছুটা আনুমানিক বলে মনে হচ্ছে।

যদি শান্তি পরিকল্পনা হোয়াইট হাউসের মানচিত্রে দেখানো সীমানা অনুসরণ করে, তাহলে সামরিক বাহিনীর প্রাথমিক প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৫ শতাংশ ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে থাকবে।

দ্বিতীয় প্রত্যাহারের পর গাজার প্রায় ৪০ শতাংশ দখল ইসরায়েলের হাতে থাকবে। আর প্রত্যাহারের চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা একটি “নিরাপত্তা বাফার জোন” তৈরি করবে, এরপরও গাজার প্রায় ১৫ শতাংশ দখল করে রাখবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নিজস্ব মানচিত্রের সর্বশেষ সংস্করণে তারা “বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” বলে যে এলাকা দেখিয়েছে, তা গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।

এদিকে, শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাসের জবাবে যদিও কিছুটা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তবে পরিকল্পনার মূল কয়েকটি বিষয় নিয়ে হামাস তাদের অবস্থান না জানানোয় সংঘাতে এরপর কী হতে যাচ্ছে তা নিশ্চিত নয়।

মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা অলিভার ম্যাকটার্নান বিবিসিকে বলেন, হামাস এখন ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেডিনয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর দায়িত্ব চাপিয়েছে যে তারা শান্তি পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনার জন্য হামাসের আহ্বান মেনে নেবে কি না।

তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য কোন পক্ষকে দায়ী করা হচ্ছে তার দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে ট্রাম্প ইসরায়েলকে হত্যা বন্ধ করতে এবং গাজায় সাহায্য পাঠাতে বলার পাশাপাশি আরও আলোচনার অনুমতি দেওয়ার কথা বলবেন।

গাজায় বিবিসি নিউজের সংবাদদাতা রুশদি আবু আলৌফ বলছেন, গাজার মানুষ হতবাক এবং নাটকীয় ও দ্রুতগতির ঘটনাবলী বুঝতে তারা হিমশিম খাচ্ছে।

“গাজার ভেতর থেকে আমি শত শত বার্তা পেয়েছি, যেখানে প্রশ্ন করা হচ্ছে- যুদ্ধ কি শেষ হয়ে গেছে? এটি কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সেসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে আমি হিমশিম খাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “এই সাম্প্রতিক ঘটনাবলী যুদ্ধ থামাতে সফল হবে কি না তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, গাজা যুদ্ধ একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে প্রবেশ করেছে।”

বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করার বিষয়টি বিশ্বনেতারা ব্যাপকভাবে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা অন্যান্য যেসব বিষয়ে সম্মতি আসেনি, সেগুলো নিয়ে আলোচনার ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “গাজার মর্মান্তিক সংঘাতের অবসান ঘটানোর সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমি সব পক্ষকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য আরও আলোচনা এবং টেকসই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্যের সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, শান্তি পরিকল্পনার অন্তত কিছু অংশ হামাস গ্রহণ করায় যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং “যাদের অত্যন্ত প্রয়োজন তাদের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর” একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে, “আমরা সকল পক্ষকে বিলম্ব না করে চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি।”

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া স্থায়ী শান্তি অর্জনের দিকে একটি গঠনমূলক এবং উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।”

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎস বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার শান্তি এখন নাগালের মধ্যে… প্রায় দুই বছর পর, এটি শান্তির সেরা সুযোগ।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “গাজায় সব জিম্মির মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতি নাগালের মধ্যে! দেরি না করে হামাসের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা উচিত।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, “সবার জন্য এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো যা সব জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তির দিকে পরিচালিত করে। ইতালি তার ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, “আমরা সব পক্ষকে প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য অবিলম্বে কাজ করতে উৎসাহিত করছি।”

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেছেন, ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি হামাসের প্রতিক্রিয়া “উৎসাহজনক” এবং “এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে”।

“গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সব জিম্মিদের মুক্তি এখনই সম্ভব,” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক্স-এ পোস্ট করে তিনি আরও বলেন, ইউরোপ যুদ্ধের অবসান এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে, যাকে তিনি “শান্তির একমাত্র কার্যকর সমাধান” বলে অভিহিত করেছেন।

BBC News বাংলা