দুই বছরের যুদ্ধের ক্লান্তি
গাজার মানুষ দুই বছরের ধ্বংসযজ্ঞে সম্পূর্ণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। টানা বোমাবর্ষণ, ক্ষুধা ও মৃত্যুতে আচ্ছন্ন ফিলিস্তিনিরা শনিবার আশা প্রকাশ করেছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবেন এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৬৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
হামাসের ঘোষণা ও নতুন আলো
হামাস ঘোষণা দিয়েছে, তারা জিম্মিদের হস্তান্তরে প্রস্তুত এবং ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কিছু শর্ত মেনে নিতে রাজি। তবে কয়েকটি মূল ইস্যুতে আরও আলোচনার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ঘোষণায় গাজার ধ্বংসস্তূপে বসবাসরত মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
৩২ বছর বয়সী সাউদ কারনেইটা বলেন, “এটি সুখবর। যারা বেঁচে আছেন, তাদের জন্য এটি রক্ষা। ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আর কী বাকি আছে?”
গাজার মানুষের আকুতি: যুদ্ধের সমাপ্তি চাই
৪০ বছর বয়সী ইসমাইল জায়েদা, যিনি উত্তর গাজার শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, বলেন: “আমরা চাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধ শেষ করতে চাপ অব্যাহত রাখেন। যদি এই সুযোগ হারাই, তবে ইসরায়েল পুরো গাজা ধ্বংস করে দেবে। আমরা হয়তো আর বাঁচব না।”
৫৯ বছর বয়সী আলি আহমদ, যিনি একটি অস্থায়ী শিবিরে বাস করছেন, বলেন, “আল্লাহ চাইলে এটাই শেষ যুদ্ধ হবে। আমরা যুদ্ধ থেকে মুক্ত হব।”
ইসরায়েলের আক্রমণ ও ক্ষুধার সংকট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সীমান্ত আক্রমণে ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। এর পর থেকেই ইসরায়েল পূর্ণমাত্রায় গাজায় হামলা শুরু করে। এখনো ৪৮ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ধ্বংস হয়েছে। পাশাপাশি মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ দুর্ভিক্ষ তৈরি করেছে। জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালিয়েছে। তবে নেটানিয়াহুর সরকার তা অস্বীকার করছে এবং আত্মরক্ষার যুক্তি তুলে ধরছে।
সতর্কবার্তা ও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা
ইসরায়েলি সেনারা নতুন করে সতর্ক করেছে যে গাজা শহর এখনো “বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র,” তাই কেউ যেন সেখানে ফিরে না যায়। এ অবস্থায় অনেক গাজাবাসী আশঙ্কা করছেন যে আগের মতো এবারও শান্তিচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে।
৩১ বছর বয়সী আয়াহ, যিনি পরিবারের সঙ্গে দেইর আল-বালাহতে আশ্রয় নিয়েছেন, বলেন: “আমরা হয়তো ট্রাম্পকে বিশ্বাস করতে পারি, কিন্তু নেটানিয়াহু কি এবার শান্তিচুক্তি মেনে নেবেন? সবসময় তিনি সবকিছু নষ্ট করেছেন। আশা করি এবার যুদ্ধ থামাবেন।”
তিনি আরও বলেন: “হয়তো যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটতে পারে সেই তারিখেই যেদিন এটি শুরু হয়েছিল—৭ অক্টোবরের দুই বছর পূর্তিতে।”
গাজার মানুষ এখনো সন্দিহান হলেও একটুখানি আশায় ভর করে আছে। বহুবার ব্যর্থতার পর তারা আবারও বিশ্বাস করতে চাইছে যে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ এবার সত্যিকারের শান্তি আনতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে ইসরায়েলি নেতৃত্বের ওপর এবং বিশেষ করে নেটানিয়াহুর অবস্থানের ওপর।