০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮) রাশিয়া, চীন ও ইরানের মাঝের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তন দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালেন তারেক রহমান নরওয়ের বড়দিনে বিতর্কিত খাবার লুটেফিস্কের প্রত্যাবর্তন, ঐতিহ্যেই ফিরছে স্বাদ প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩৪৫) নিউজিল্যান্ডে গ্যাং প্রতীক নিষিদ্ধ: রাস্তায় শান্তি, কিন্তু অপরাধ কি সত্যিই কমল সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

পাকিস্তানকে কঠোর জবাব, নতুন সামরিক নীতির পথে ভারত

ভূমিকা

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার শীর্ষে। অপারেশন সিন্দূরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সামরিক সংঘর্ষ শুধু সীমান্ত পরিস্থিতি নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধানের পরপর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট—আগামী দিনে ভারত আর পূর্বের মতো নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।

সেনাপ্রধানের কঠোর বার্তা

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি পাকিস্তানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন,

  • “ভারত এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আগামীতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ চালালে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না।”
  • “অপারেশন সিন্দূর ১.০ তে ভারত সংযম দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়া হবে আরও কঠিন, এমনকি পাকিস্তানকে তার বিশ্ব মানচিত্রে টিকে থাকার বিষয়েও ভাবতে হবে।”

তিনি সৈন্যদের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন এবং জানান, আবার সুযোগ এলে ভারত দ্বিধাহীনভাবে আঘাত হানবে।

অপারেশন সিন্দূরের পটভূমি

২২ এপ্রিল পাহালগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ৭ মে ভোরে অপারেশন সিন্দূর চালায়।

  • ভারত দাবি করে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মিরে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়—সাতটি সেনা এবং দুটি বিমান বাহিনী দ্বারা।
  • পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি, রানওয়ে, রাডার ও কমান্ড সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • ১০ মে উভয়পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে রাজি হলেও চার দিনের এই সংঘর্ষে ভারত স্পষ্টভাবে শক্তি প্রদর্শন করেছে।

আইএএফ প্রধানের প্রকাশ — পাকিস্তানের বড় ক্ষতি

ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং অপারেশন সিন্দূরের ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরেন।

  • তিনি জানান, পাকিস্তানের ১২-১৩টি বিমান ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন F-16 ও চীনা JF-17 যুদ্ধবিমান ছিল।
  • মাটিতে কমপক্ষে ৬-৭টি বিমান এবং আকাশে আরও ছয়টি বিমান ভারতীয় হামলায় ধ্বংস হয়।
  • পাকিস্তানের অন্তত চারটি রাডার, দুটি কমান্ড সেন্টার, দুটি রানওয়ে এবং তিনটি হ্যাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • একটি C-130 পরিবহন বিমান, একটি AEW&C নজরদারি বিমান এবং একাধিক ফাইটার জেট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

তিনি পাকিস্তানের দাবি—ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হয়েছে—তাকে “কল্পকাহিনী” হিসেবে উড়িয়ে দেন।

সন্ত্রাসী ঘাঁটির স্থানান্তর ও ভবিষ্যৎ কৌশল

আইএএফ প্রধান আরও জানান, পাকিস্তান-অধিকৃত এলাকায় ধ্বংসের পর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো (জইশ, লস্কর, হিজবুল) তাদের ঘাঁটি সরিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে। ভূগোল ও আফগান সীমান্তের কারণে তারা মনে করছে এটি নিরাপদ। তবে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, নতুন ঘাঁটি যেখানেই হোক, যথাযথ গোয়েন্দা তথ্য পেলে তা ধ্বংস করার সক্ষমতা এখন ভারতের রয়েছে।

বিশ্লেষণ: বার্তার মূল তাৎপর্য

১. সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়—ভারত কূটনৈতিক বা সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়িয়ে এবার দীর্ঘস্থায়ী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের পথে হাঁটতে পারে।
২. বিমানবাহিনী প্রধানের বিশ্লেষণ পাকিস্তানের সামরিক দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে—যেখানে শুধু সন্ত্রাসী ঘাঁটি নয়, বরং তাদের বিমানবাহিনীর সক্ষমতাও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
৩. একাধিক ফ্রন্টে আঘাত ও গোয়েন্দা নির্ভর হামলা দেখাচ্ছে ভারত এখন শত্রুপক্ষের গভীরে ঢুকে কৌশলগত অভিযান চালাতে সক্ষম।

অপারেশন সিন্দূর শুধু একটি প্রতিশোধমূলক অভিযান নয়, বরং ভারতীয় সামরিক নীতিতে নতুন ধাপের সূচনা। সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি এবং বিমানবাহিনী প্রধানের বিস্তারিত প্রকাশনা মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে—আগামীতে সীমান্ত সন্ত্রাস ও সামরিক উসকানির জবাব হবে আরও কঠোর ও সিদ্ধান্তমূলক। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাই এক নতুন মোড়ের অপেক্ষায়।

জনপ্রিয় সংবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৭৮)

পাকিস্তানকে কঠোর জবাব, নতুন সামরিক নীতির পথে ভারত

১২:২৮:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

ভূমিকা

ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার শীর্ষে। অপারেশন সিন্দূরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সামরিক সংঘর্ষ শুধু সীমান্ত পরিস্থিতি নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। ভারতীয় সেনাপ্রধান ও বিমানবাহিনী প্রধানের পরপর মন্তব্য থেকে স্পষ্ট—আগামী দিনে ভারত আর পূর্বের মতো নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।

সেনাপ্রধানের কঠোর বার্তা

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি পাকিস্তানকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন,

  • “ভারত এবার সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আগামীতে সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ চালালে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না।”
  • “অপারেশন সিন্দূর ১.০ তে ভারত সংযম দেখিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়া হবে আরও কঠিন, এমনকি পাকিস্তানকে তার বিশ্ব মানচিত্রে টিকে থাকার বিষয়েও ভাবতে হবে।”

তিনি সৈন্যদের সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন এবং জানান, আবার সুযোগ এলে ভারত দ্বিধাহীনভাবে আঘাত হানবে।

অপারেশন সিন্দূরের পটভূমি

২২ এপ্রিল পাহালগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ৭ মে ভোরে অপারেশন সিন্দূর চালায়।

  • ভারত দাবি করে, পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মিরে নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়—সাতটি সেনা এবং দুটি বিমান বাহিনী দ্বারা।
  • পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি, রানওয়ে, রাডার ও কমান্ড সেন্টার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • ১০ মে উভয়পক্ষ অস্ত্রবিরতিতে রাজি হলেও চার দিনের এই সংঘর্ষে ভারত স্পষ্টভাবে শক্তি প্রদর্শন করেছে।

আইএএফ প্রধানের প্রকাশ — পাকিস্তানের বড় ক্ষতি

ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ.পি. সিং অপারেশন সিন্দূরের ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরেন।

  • তিনি জানান, পাকিস্তানের ১২-১৩টি বিমান ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে মার্কিন F-16 ও চীনা JF-17 যুদ্ধবিমান ছিল।
  • মাটিতে কমপক্ষে ৬-৭টি বিমান এবং আকাশে আরও ছয়টি বিমান ভারতীয় হামলায় ধ্বংস হয়।
  • পাকিস্তানের অন্তত চারটি রাডার, দুটি কমান্ড সেন্টার, দুটি রানওয়ে এবং তিনটি হ্যাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • একটি C-130 পরিবহন বিমান, একটি AEW&C নজরদারি বিমান এবং একাধিক ফাইটার জেট আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।

তিনি পাকিস্তানের দাবি—ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হয়েছে—তাকে “কল্পকাহিনী” হিসেবে উড়িয়ে দেন।

সন্ত্রাসী ঘাঁটির স্থানান্তর ও ভবিষ্যৎ কৌশল

আইএএফ প্রধান আরও জানান, পাকিস্তান-অধিকৃত এলাকায় ধ্বংসের পর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো (জইশ, লস্কর, হিজবুল) তাদের ঘাঁটি সরিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে। ভূগোল ও আফগান সীমান্তের কারণে তারা মনে করছে এটি নিরাপদ। তবে ভারত স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, নতুন ঘাঁটি যেখানেই হোক, যথাযথ গোয়েন্দা তথ্য পেলে তা ধ্বংস করার সক্ষমতা এখন ভারতের রয়েছে।

বিশ্লেষণ: বার্তার মূল তাৎপর্য

১. সেনাপ্রধানের বক্তব্য ইঙ্গিত দেয়—ভারত কূটনৈতিক বা সীমিত সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়িয়ে এবার দীর্ঘস্থায়ী ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের পথে হাঁটতে পারে।
২. বিমানবাহিনী প্রধানের বিশ্লেষণ পাকিস্তানের সামরিক দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে—যেখানে শুধু সন্ত্রাসী ঘাঁটি নয়, বরং তাদের বিমানবাহিনীর সক্ষমতাও বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
৩. একাধিক ফ্রন্টে আঘাত ও গোয়েন্দা নির্ভর হামলা দেখাচ্ছে ভারত এখন শত্রুপক্ষের গভীরে ঢুকে কৌশলগত অভিযান চালাতে সক্ষম।

অপারেশন সিন্দূর শুধু একটি প্রতিশোধমূলক অভিযান নয়, বরং ভারতীয় সামরিক নীতিতে নতুন ধাপের সূচনা। সেনাপ্রধানের হুঁশিয়ারি এবং বিমানবাহিনী প্রধানের বিস্তারিত প্রকাশনা মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে—আগামীতে সীমান্ত সন্ত্রাস ও সামরিক উসকানির জবাব হবে আরও কঠোর ও সিদ্ধান্তমূলক। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি তাই এক নতুন মোড়ের অপেক্ষায়।