০৫:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
ইরান মহাকাশ প্রোগ্রামে নতুন পদক্ষেপ: শক্তি-ভিত্তিক উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬ জন মহিলার মৃত্যু: মুম্বাইয়ের ক্যাটারিং ইউনিটে প্রাণহানি নেতানিয়াহুর ভাষণে হামাস ও গাজা যুদ্ধের সমালোচনা সোনালী ঝলক এখন পুরনো হয়ে গেছে নিউক্লিয়ার শক্তি উৎপাদন: আর্কানসাসে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ লেহেদের ক্ষোভ: রাজ্যত্ব ও ষষ্ঠ তফসিলের দাবি মীরা সেতির সাহসী সিদ্ধান্ত মুদ্রানীতি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ভারতের কেন্দ্রিয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নেই বলে জানালেন সে দেশের গর্ভনর মস্তিষ্কের মৃত্যু এবং অঙ্গ দানে প্রশিক্ষণের অভাব শরজাহ আন্তর্জাতিক বইমেলায় সম্মানিত হবে গ্রীক সংস্কৃতি

মধ্য এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত অগ্রযাত্রা

টোকিও— জাপানের ট্রেডিং হাউস সোইজিত্স উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ এ বছর শুরু করতে যাচ্ছে। এটি কোম্পানিটির এক বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ, যা ইউক্রেন যুদ্ধের পর মধ্য এশিয়ার দেশগুলো পশ্চিমের দিকে ঝুঁকতে শুরু করায় আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।

বিমানবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা

তাশখন্দে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে তৈরি হবে। এই প্রকল্পে সোইজিত্সের অংশীদার হবে সৌদি আরবের ভিশন ইনভেস্ট। এতে সোইজিত্স কয়েকশো মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইয়েন বিনিয়োগ করবে। কোম্পানিটি এর আগে জাপানের কুমামোতো ও ওকিনাওয়া প্রদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পালাউ দ্বীপের বিমানবন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

উজবেকিস্তান সরকার আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দরটি ২০২৮ সালে চালু হবে এবং প্রতি বছর ২ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। ঘণ্টায় ৪০টির বেশি উড্ডয়ন ও অবতরণ সামলাতে সক্ষম এই স্থাপনা মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হয়ে উঠবে। তাশখন্দগামী যাত্রীর সংখ্যা ২০৩০ সালে দেড় কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উজবেকিস্তানে সোইজিত্সের অন্যান্য বিনিয়োগ

সোইজিত্স বিমানবন্দর ছাড়াও আরও কিছু বড় প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে সামারকান্দে ৮০০ শয্যার একটি হাসপাতাল, যা হবে দেশটির অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পে তুরস্কের ঠিকাদার রনেসাঁস ইন্টারন্যাশনাল অংশীদার। এছাড়া ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার উইন্ড ফার্ম এবং ১.৬ গিগাওয়াটের জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাও রয়েছে।

ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে মধ্য এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্ব বেড়েছে। উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও তাজিকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে চীন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত হয়ে যাওয়ায় এসব দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণ

৩ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার উজবেকিস্তান বর্তমানে বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়সহ নানা সুবিধা দিচ্ছে দেশটি। করপোরেট ট্যাক্স হার ১৫ শতাংশ, যা কাজাখস্তান ও তাজিকিস্তানের তুলনায় কম।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত উজবেকিস্তানে ৫৪টি জাপানি কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা ২০১৯ সালের দ্বিগুণ। সোইজিত্স জুন মাসে প্রায় দুই দশক পর তাশখন্দে নতুন অফিস খুলেছে।

অন্যান্য জাপানি কোম্পানির কার্যক্রম

উজবেকিস্তানে অবকাঠামো উন্নয়নে অন্যান্য জাপানি কোম্পানিও সক্রিয়। টয়োটা সুশো তাদের সহযোগী কোম্পানি ইউরাস এনার্জির মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার উইন্ড ফার্মের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে এবং এনইসির সঙ্গে মিলে ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ করছে। মারুবেনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বর্জ্যপানি শোধনাগার তৈরি করছে।

এছাড়া ইতোচু ফ্রান্সের ওরানো ও উজবেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নাভোইউরানের সঙ্গে যৌথ ইউরেনিয়াম খনন প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। মারুবেনি ইউরেনিয়াম বাণিজ্যেও জড়িত।

খনিজ খাতে সহযোগিতা

উজবেকিস্তান জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে খনিজ খাতের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আহরণে যৌথ উদ্যোগে আগ্রহী বলে দেশটির বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী লাজিজ কুদরাতভ নিক্কেইকে জানিয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইরান মহাকাশ প্রোগ্রামে নতুন পদক্ষেপ: শক্তি-ভিত্তিক উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুতি

মধ্য এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত অগ্রযাত্রা

০১:৪৭:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

টোকিও— জাপানের ট্রেডিং হাউস সোইজিত্স উজবেকিস্তানের রাজধানী তাশখন্দে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ এ বছর শুরু করতে যাচ্ছে। এটি কোম্পানিটির এক বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো বিনিয়োগ পরিকল্পনার অংশ, যা ইউক্রেন যুদ্ধের পর মধ্য এশিয়ার দেশগুলো পশ্চিমের দিকে ঝুঁকতে শুরু করায় আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।

বিমানবন্দর নির্মাণ পরিকল্পনা

তাশখন্দে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে তৈরি হবে। এই প্রকল্পে সোইজিত্সের অংশীদার হবে সৌদি আরবের ভিশন ইনভেস্ট। এতে সোইজিত্স কয়েকশো মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ইয়েন বিনিয়োগ করবে। কোম্পানিটি এর আগে জাপানের কুমামোতো ও ওকিনাওয়া প্রদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পালাউ দ্বীপের বিমানবন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

উজবেকিস্তান সরকার আগস্টে প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দরটি ২০২৮ সালে চালু হবে এবং প্রতি বছর ২ কোটি যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা থাকবে। ঘণ্টায় ৪০টির বেশি উড্ডয়ন ও অবতরণ সামলাতে সক্ষম এই স্থাপনা মধ্য এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হয়ে উঠবে। তাশখন্দগামী যাত্রীর সংখ্যা ২০৩০ সালে দেড় কোটিতে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উজবেকিস্তানে সোইজিত্সের অন্যান্য বিনিয়োগ

সোইজিত্স বিমানবন্দর ছাড়াও আরও কিছু বড় প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে সামারকান্দে ৮০০ শয্যার একটি হাসপাতাল, যা হবে দেশটির অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পে তুরস্কের ঠিকাদার রনেসাঁস ইন্টারন্যাশনাল অংশীদার। এছাড়া ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার উইন্ড ফার্ম এবং ১.৬ গিগাওয়াটের জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাও রয়েছে।

ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব

রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকে মধ্য এশিয়ার কৌশলগত গুরুত্ব বেড়েছে। উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান ও তাজিকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে চীন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত হয়ে যাওয়ায় এসব দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ আকর্ষণ

৩ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার উজবেকিস্তান বর্তমানে বছরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড়সহ নানা সুবিধা দিচ্ছে দেশটি। করপোরেট ট্যাক্স হার ১৫ শতাংশ, যা কাজাখস্তান ও তাজিকিস্তানের তুলনায় কম।

জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত উজবেকিস্তানে ৫৪টি জাপানি কোম্পানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা ২০১৯ সালের দ্বিগুণ। সোইজিত্স জুন মাসে প্রায় দুই দশক পর তাশখন্দে নতুন অফিস খুলেছে।

অন্যান্য জাপানি কোম্পানির কার্যক্রম

উজবেকিস্তানে অবকাঠামো উন্নয়নে অন্যান্য জাপানি কোম্পানিও সক্রিয়। টয়োটা সুশো তাদের সহযোগী কোম্পানি ইউরাস এনার্জির মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার উইন্ড ফার্মের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করছে এবং এনইসির সঙ্গে মিলে ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ করছে। মারুবেনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে বর্জ্যপানি শোধনাগার তৈরি করছে।

এছাড়া ইতোচু ফ্রান্সের ওরানো ও উজবেক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নাভোইউরানের সঙ্গে যৌথ ইউরেনিয়াম খনন প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। মারুবেনি ইউরেনিয়াম বাণিজ্যেও জড়িত।

খনিজ খাতে সহযোগিতা

উজবেকিস্তান জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে খনিজ খাতের অংশীদারিত্ব বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করছে। বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ আহরণে যৌথ উদ্যোগে আগ্রহী বলে দেশটির বিনিয়োগ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী লাজিজ কুদরাতভ নিক্কেইকে জানিয়েছেন।