আইনহীনতার মাঝে আঞ্চলিক নেতৃত্ব
ইতালির বিভিন্ন অঞ্চল এখন সংসদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সহায়ক মৃত্যুর (assisted dying) প্রশ্নে এগিয়ে যাচ্ছে। সেপ্টেম্বরে সার্ডিনিয়া অঞ্চল টাসকানির পর দ্বিতীয় অঞ্চল হিসেবে চিকিৎসক-সহায়তায় আত্মহত্যা নিয়ন্ত্রণে একটি আঞ্চলিক আইন পাস করেছে। আশা করা হচ্ছে, উমব্রিয়াও শিগগিরই একই পথে হাঁটবে।
এই প্রবণতা শুরু হয় ২০১৯ সালে ইতালির সাংবিধানিক আদালতের এক ঐতিহাসিক রায়ের পর। আদালত শর্তসাপেক্ষে চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যাকে বৈধ ঘোষণা করে এবং সংসদকে, এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানায়। কিন্তু ডানপন্থী জাতীয় সরকার এখন পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। সে জন্য একটি বিল সেনেটে আলোচনাধীন রয়েছে।
ফাবিয়ানো আন্তোনিয়ানির মৃত্যুর পরের পরিবর্তন
এই রায়ের সূত্রপাত এক বাস্তব ঘটনার মধ্য দিয়ে। সঙ্গীত প্রযোজক ফাবিয়ানো আন্তোনিয়ানি এক সড়ক দুর্ঘটনায় সম্পূর্ণ পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও অন্ধ হয়ে পড়েন। পরে তিনি মারকো কাপাত্তোর সহায়তায় সুইজারল্যান্ডের ডিগনিটাস ক্লিনিকে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। কাপাত্তো, যিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রাক্তন সদস্য ও “মৃত্যুর অধিকারের” আন্দোলনের কর্মী, তাঁর বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় সহায়তার অভিযোগ আনা হয়।
আদালত রায় দেয়, এমন অভিযোগ সাংবিধানিকভাবে টিকবে না। বরং যদি কোনো ব্যক্তি অসহনীয় ও অপরিবর্তনীয় যন্ত্রণায় ভোগেন এবং সম্পূর্ণ মানসিক সক্ষমতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন, তবে তাকে সহায়তা দেওয়া সাংবিধানিকভাবে বৈধ।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও প্রশাসনিক প্রতিরোধ
রায় কার্যকর হওয়ার পরও অনেক অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে ডানপন্থী শাসিত এলাকাগুলো, এসব অনুরোধকে উপেক্ষা করেছে। কাপাত্তো একে বলেছেন, “কার্যকর ধ্বংসাত্মক প্রতিরোধ।”
ফেব্রুয়ারিতে টাসকানির আইন অনুমোদন নতুন বিতর্কের সূচনা করে। সেই আইন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে কোনো সহায়ক মৃত্যুর অনুরোধের বিষয়ে ৩০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দিতে বাধ্য করে।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
ক্যাথলিক গির্জা এই উদ্যোগের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ইতালীয় বিশপ সম্মেলন বলেছে, এসব পদক্ষেপ ‘মানব মর্যাদার মূলনীতির সঙ্গে মৌলিকভাবে সাংঘর্ষিক’।
![]()
অন্যদিকে, “মৃত্যুর অধিকার”-পন্থীরা বলছেন, সরকারের প্রস্তাবিত নতুন আইন প্রকৃতপক্ষে অধিকার সীমিত করবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রে সংযুক্ত রোগীরা এই সুবিধা পাবেন। উপরন্তু, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার বাইরে এর প্রয়োগ সীমিত করা হবে, ফলে কেবল আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানরাই ব্যক্তিগত চিকিৎসা খাতে এটি পেতে পারেন।
নৈতিক প্রশ্নে সরকারের দুর্বলতা
এই বিতর্ক দেখায়, সাম্প্রতিক ইতালীয় সরকারগুলো নৈতিক প্রশ্নে আইন প্রণয়নে ব্যর্থ হয়েছে। যেমন সমকামী অধিকার ইস্যুতেও নাগরিক সমাজ বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে। জর্জিয়া মেলোনির সরকার এমন ফলাফল এড়াতে চাইলেও, সংসদে সাফল্যের নিশ্চয়তা নেই।
যদিও ডানপন্থীদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তবু ভেতরে বিভক্তি আছে। সিলভিও বারলুসকোনির কন্যা মারিনা বারলুসকোনি—যিনি ফোরজা ইতালিয়ার বড় অর্থদাতা—এই ইস্যুতে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।
যদি সংসদে এই বিলের ওপর মুক্ত ভোট ও গোপন ব্যালট হয়, তবে ফলাফল অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইতালির আঞ্চলিক উদ্যোগগুলো জাতীয় রাজনীতির এক গভীর সংকটকে সামনে এনেছে—মানবিক বোধ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার সংঘাত। সংসদ যখন নীরব, তখন প্রদেশগুলো নৈতিক নেতৃত্ব দিচ্ছে—এটাই এখন ইতালির বাস্তবতা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















