লেহে সহিংসতা এবং যুবকদের ক্ষোভ
লাদাখের লেহ শহরে ২৪ সেপ্টেম্বর সহিংসতার পরবর্তী পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই সহিংসতার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে চাকরি সংকট এবং স্থানীয় রাজনীতির পরিবর্তনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। লেহ শহরের ২৬ বছর বয়সী সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সেরিং নরবু জানান, সহিংসতার সময় তার প্রতিবেশী রিঞ্চেন দাদুলের, ২০, পুলিশ গুলিতে প্রাণ হারান।
প্রথমে পরিবেশবাদী সোনাম ওয়াংচুকের আহ্বানে এই আন্দোলন শুরু হলেও কিছু যুবক এর পরিপ্রেক্ষিতে পাথর ছোড়া ও অগ্নিসংযোগ করতে থাকে, যার ফলে পুলিশ পাল্টা গুলি চালিয়ে চারটি প্রাণ নেয়। লেহ শহর এবং বৃহত্তর লাদাখ অঞ্চলে এমন সহিংসতা আগে কখনো দেখা যায়নি। ২০২০ সালে ভারত-চীন সীমান্তে সংঘর্ষের সময়ে একমাত্র গুলি চলেছিল।
চাকরির অভাব এবং সরকারি প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা
নরবু জানান, “লাদাখ একটি ইউনিয়ন অঞ্চল হওয়ার পর, বিজেপি সাংসদ জামিয়াং টসেরিং নামগিয়াল বলেছিলেন যে এখানে ১২,০০০ চাকরি সৃষ্টি হবে। তবে কিছু মাস পর সেই সংখ্যা ৭,০০০-এ নেমে আসে, আর ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় স্টাফ সিলেকশন কমিশনের মাধ্যমে মাত্র ৭০০টি চাকরি ঘোষিত হয়, যদিও এর জন্য ৩০,০০০ এরও বেশি আবেদন পড়ে।”
লাদাখে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে এক বিরাট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যুবকরা বলতে শুরু করেছেন যে, তাদের প্রাথমিক শিক্ষা বা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির সুযোগ নেই। সিভিল সার্ভিস কমিশন না থাকার কারণে, কোনো সরকারি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
ষষ্ঠ তফসিল এবং লাদাখের সাংস্কৃতিক সুরক্ষা
লাদাখের যুবসমাজের মধ্যে শোনা যাচ্ছে এক গুরুত্বপূর্ণ দাবি: ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি। লাদাখের জনগণ ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় এসে নিজেদের সংস্কৃতি ও ভূমির সুরক্ষা চান। ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে, আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী জনগণের জন্য স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা তৈরি হয়, যা তাদের সাংস্কৃতিক ও ভূমির অধিকার রক্ষা করতে সহায়ক।
লাদাখের সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত সমস্যা গুলি আরও প্রকট হয়ে উঠছে, বিশেষ করে যখন বড় প্রকল্পগুলোর জন্য স্থানীয় জনগণের ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পাং অঞ্চলে একটি সৌর শক্তি প্রকল্পের জন্য পশমিনা ছাগল চারণভূমি ব্যবহার করা হবে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং যুবকদের রাজনীতিতে নতুন অবস্থান
লাদাখের রাজনীতিতে যুবকদের মধ্যে বৃদ্ধি পাওয়া অস্থিরতা নতুন এক দিক নির্দেশ করছে। লেহের আপ্রেক্স বডি (এবিএল) এবং কারগিলের ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (কেডিএ) একত্রিত হয়েছে এবং তারা যৌথভাবে লাদাখের জন্য রাজ্যত্ব, ষষ্ঠ তফসিল অন্তর্ভুক্তি, লাদাখ সেবা কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং দুটি সংসদীয় আসন দাবি করছে।
একই সঙ্গে, স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলো এখন বুঝতে পারছে যে, নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হওয়ার সময় শেষ। প্রশাসনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে লাদাখের পাহাড়ি পরিষদগুলি, আর স্থানীয় নেতাদের কোনো গুরুত্বও নেই। লাদাখের ভবিষ্যত রাজনৈতিক কাঠামো এখন কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দৃঢ় সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে।
লাদাখের শাস্ত্রীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি
লাদাখের যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এই ক্ষোভ যদি আরও বৃদ্ধি পায়, তবে তা সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
লাদাখের সহিংসতা এবং সরকারের সাথে সম্পর্কের ক্রমশ খারাপ হওয়া প্রমাণ করে যে, এই অঞ্চলের ভবিষ্যতের জন্য বৃহত্তর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সংস্কারের প্রয়োজন।