০২:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫
ভিয়েতনামের শেয়ারবাজারে রেকর্ড উল্লম্ফন: এফটিএসই উন্নয়ন ঘোষণা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহের নতুন দ্বার চ্যানেল ও ব্ল্যাজির সংগ্রহ: আধুনিক ফ্যাশনের নতুন দিগন্ত প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কেরালার দুগ্ধ খামারে সফর: ‘আলিয়া ভাট’ নামের গরুর সাথে দেখা ক্রিস্টি টলিভারের কোচিং দক্ষতা ও খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষমতা বাঘ যে বদলে ফেলছে ডোরা: এক অদ্ভুত কাহিনি আফরান নিশো: অভিনয়ের সীমানা পেরিয়ে এক জীবন পেন্টাগনের হেগসেথের অনুমোদন, মার্কিন নৌবাহিনীর পরবর্তী প্রজন্মের ফাইটার বিমান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩১) ১৯ বছরে দৃষ্টিসেবায় ব্র্যাকের অগ্রযাত্রা: সারা দেশে পৌঁছেছে ১ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ টানা তিন দিনে শেয়ারবাজারে পতন, কমেছে লেনদেনের পরিমাণ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩০)

  • নাঈম হক
  • ০৯:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • 36

ব্রিটিশরাজ তখন নিজের সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহাব্যস্ত; অ-সামরিক জনগোষ্ঠীকে নয়, প্রাধান্য দেয়া হয় সামরিক বাহিনীকে।

প্রফেসর করিম আমাকে বলেন যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন দিনগুলোতে- হরহামেশাই স্থানীয় বামপন্থি ছাত্র এবং বামপন্থি মার্কিন সৈনিকদের মধ্যে এমন ধরনের দেখাসাক্ষাৎ মিটিং ইত্যাদি হতো। আরো বলেন যে এখন যেটি গুলিস্তান সিনেমা হল নামে পরিচিত (প্রফেসর করিমের সঙ্গে লেখকের যে সময়ে আলাপ আলোচনা হয় তখনো গুলিস্তান সিনেমা হলের অস্তিত্ব ছিল), সেই ভবনটিকে বলা হতো গুলিস্তান ভবন। 

সেই ভবনে “ডি এন ফা” (DN Fa) নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, এটির ঠিক উল্টোদিকে ছিল “ব্রিটানিকা” নামক একটি সিনেমা হল। ঢাকায় তখন এটিই ছিল একমাত্র সিনেমা হল যেখানে ইংরেজি ভাষার ফিল্ম দেখানো হতো। মার্কিন সৈনিকরা সাধারণত ছাত্রদেরকে গুলিস্তান ভবনের “ডি এন ফা”-য় নিয়ে যেতেন, খাওয়াতেন। সেখানে তাঁরা সচরাচর দরকারের তুলনায় অধিক পরিমাণ খাদ্যের অর্ডার দিতেন এবং ‘লেফট ওভার’ খাদ্য ছাত্রদেরকে নিয়ে যেতে বলতেন।

প্রথম প্রথম ছাত্ররা বিষম আপত্তি করতেন বটে কিন্তু মার্কিন সৈনিকরাও কম নাছোড়বান্দা ছিলেন না, বলতেন “না না করলেই হলো, নাকি? নাও, নিয়ে যাও, তোমাদের দরকার নেই নাকি? খুব দরকার রয়েছে, নাও কাজে লাগবে, নাও…”। মার্কিন সৈনিকরা বাস্তবিকই ঠিক বলেছিলেন, তাঁরা বুঝতে পারছিলেন যে এইসব স্থানীয় ছাত্রের অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছিল খাদ্য প্রাপ্তি নিয়ে; কারণ ঢাকাসহ বঙ্গদেশ তখন তেতাল্লিশের মহামন্বন্তরের ছোবল থেকে টিকে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লড়ে যাচ্ছে। তেতাল্লিশের ভয়াবহ মহামন্বন্তর সম্বন্ধে ভারত বিশেষজ্ঞ ডঃ দুশান জবাভিতেল লেখেন:

ব্রিটিশ রাজ নদীপথে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের যানবাহন নৌকা ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। …মহাদুর্ভিক্ষ বাংলা’য় আঘাত হানে ১৯৪৩ সালে, … প্রয়োজন ছিলো জরুরি ভিত্তিতে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশেষ করে চালের সরবরাহ পাঠানো। কিন্তু ব্রিটিশরাজ তখন নিজের সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহাব্যস্ত; অ-সামরিক জনগোষ্ঠীকে নয়, প্রাধান্য দেয়া হয় সামরিক বাহিনীকে।

দুর্গত অঞ্চলে খাদ্য সরবারহ প্রেরণের জন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রস্তুতি ছিলো না। এমনকি নৌকা পর্যন্ত না থাকায় গঙ্গার বদ্বীপে বিদ্যমান অসংখ্য দ্বীপে চাষাবাদ পর্যন্ত করা যায়নি এবং এই নৌকার অভাবে উপকূলবর্তী এলাকার কয়েক স্থানে মানুষজনকে স্থানান্তর কর্মেও একই সমস্যা হয়েছিলো।

সবশেষে, ‘গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া’ হয় বার্মা থেকে আগত উদ্বাস্তুর বন্যা: অথচ এই বার্মা থেকেই চাল আমদানীর সব পুরানো শিপমেন্টগুলো পূর্বেই সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেয়া হয়েছিলো। অতএব আশ্চর্য্যের কি আছে যে মহাদুর্ভিক্ষ নজীরবিহীন ব্যাপকতা নিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯)

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিয়েতনামের শেয়ারবাজারে রেকর্ড উল্লম্ফন: এফটিএসই উন্নয়ন ঘোষণা ও বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহের নতুন দ্বার

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩০)

০৯:০০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

ব্রিটিশরাজ তখন নিজের সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহাব্যস্ত; অ-সামরিক জনগোষ্ঠীকে নয়, প্রাধান্য দেয়া হয় সামরিক বাহিনীকে।

প্রফেসর করিম আমাকে বলেন যে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন দিনগুলোতে- হরহামেশাই স্থানীয় বামপন্থি ছাত্র এবং বামপন্থি মার্কিন সৈনিকদের মধ্যে এমন ধরনের দেখাসাক্ষাৎ মিটিং ইত্যাদি হতো। আরো বলেন যে এখন যেটি গুলিস্তান সিনেমা হল নামে পরিচিত (প্রফেসর করিমের সঙ্গে লেখকের যে সময়ে আলাপ আলোচনা হয় তখনো গুলিস্তান সিনেমা হলের অস্তিত্ব ছিল), সেই ভবনটিকে বলা হতো গুলিস্তান ভবন। 

সেই ভবনে “ডি এন ফা” (DN Fa) নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, এটির ঠিক উল্টোদিকে ছিল “ব্রিটানিকা” নামক একটি সিনেমা হল। ঢাকায় তখন এটিই ছিল একমাত্র সিনেমা হল যেখানে ইংরেজি ভাষার ফিল্ম দেখানো হতো। মার্কিন সৈনিকরা সাধারণত ছাত্রদেরকে গুলিস্তান ভবনের “ডি এন ফা”-য় নিয়ে যেতেন, খাওয়াতেন। সেখানে তাঁরা সচরাচর দরকারের তুলনায় অধিক পরিমাণ খাদ্যের অর্ডার দিতেন এবং ‘লেফট ওভার’ খাদ্য ছাত্রদেরকে নিয়ে যেতে বলতেন।

প্রথম প্রথম ছাত্ররা বিষম আপত্তি করতেন বটে কিন্তু মার্কিন সৈনিকরাও কম নাছোড়বান্দা ছিলেন না, বলতেন “না না করলেই হলো, নাকি? নাও, নিয়ে যাও, তোমাদের দরকার নেই নাকি? খুব দরকার রয়েছে, নাও কাজে লাগবে, নাও…”। মার্কিন সৈনিকরা বাস্তবিকই ঠিক বলেছিলেন, তাঁরা বুঝতে পারছিলেন যে এইসব স্থানীয় ছাত্রের অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছিল খাদ্য প্রাপ্তি নিয়ে; কারণ ঢাকাসহ বঙ্গদেশ তখন তেতাল্লিশের মহামন্বন্তরের ছোবল থেকে টিকে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় লড়ে যাচ্ছে। তেতাল্লিশের ভয়াবহ মহামন্বন্তর সম্বন্ধে ভারত বিশেষজ্ঞ ডঃ দুশান জবাভিতেল লেখেন:

ব্রিটিশ রাজ নদীপথে ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের যানবাহন নৌকা ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করে ধ্বংস করে দিয়েছিল। …মহাদুর্ভিক্ষ বাংলা’য় আঘাত হানে ১৯৪৩ সালে, … প্রয়োজন ছিলো জরুরি ভিত্তিতে দেশের অন্য অঞ্চল থেকে দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশেষ করে চালের সরবরাহ পাঠানো। কিন্তু ব্রিটিশরাজ তখন নিজের সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে মহাব্যস্ত; অ-সামরিক জনগোষ্ঠীকে নয়, প্রাধান্য দেয়া হয় সামরিক বাহিনীকে।

দুর্গত অঞ্চলে খাদ্য সরবারহ প্রেরণের জন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রস্তুতি ছিলো না। এমনকি নৌকা পর্যন্ত না থাকায় গঙ্গার বদ্বীপে বিদ্যমান অসংখ্য দ্বীপে চাষাবাদ পর্যন্ত করা যায়নি এবং এই নৌকার অভাবে উপকূলবর্তী এলাকার কয়েক স্থানে মানুষজনকে স্থানান্তর কর্মেও একই সমস্যা হয়েছিলো।

সবশেষে, ‘গোঁদের উপর বিষ ফোঁড়া’ হয় বার্মা থেকে আগত উদ্বাস্তুর বন্যা: অথচ এই বার্মা থেকেই চাল আমদানীর সব পুরানো শিপমেন্টগুলো পূর্বেই সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেয়া হয়েছিলো। অতএব আশ্চর্য্যের কি আছে যে মহাদুর্ভিক্ষ নজীরবিহীন ব্যাপকতা নিয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।

(চলবে)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-২৯)