উনিশ শতকের শেষার্ধে এরকম মিছিলে “ইসলামপুরের মুসলমানদের সঙ্গে পূর্বাংশের সঙওয়ালাদের সাথে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল
এই মিছিলের বৈশিষ্ট্য ছিল সঙের গান। হাকিম হাবিব লিখেছেন, মিছিলে মহাদেবের অনেক লম্বা-চওড়া মূর্তি থাকতো। লালচানের মূর্তির কথা তিনি উল্লেখ করেননি। কাহাররা মূর্তি বহন করত। “লোকেরা মহাদেবের জয়ধ্বনি দিত আর ফুল ও খেলনা ছিটানো হতো। তার সাথে থাকতো হিন্দু-মুসলমানদের সঙ-এর দল আর তার মধ্যেও সেই পূর্ব-পশ্চিম এর রেষারেষির হিংসাত্মক ভাব বিদ্যমান থাকতো।” প্রায়ই এ নিয়ে সংঘর্ষ হতো।
হাকিম উল্লেখ করেছেন, উনিশ শতকের শেষার্ধে এরকম মিছিলে “ইসলামপুরের মুসলমানদের সঙ্গে পূর্বাংশের সঙওয়ালাদের সাথে তীব্র সংঘর্ষ হয়েছিল। অনেক লাঠালাঠি হলো। মাথা ফাটানো, সঙওয়ালারা আহত হলো। কিন্তু মহাদেবের মূর্তির সাথে কেউ কোনোরকম দুর্ব্যবহার করলো না। অর্থাৎ সেই মূর্খ যুগের বাসিন্দারা এতই বুদ্ধি রাখতো বা সচেতন ছিল যে, ধর্মীয় সংঘর্ষ থেকে তারা বিরত থাকতো।”
জন্মাষ্টমীর বড় চৌকী (ইসলামপুর), বিশ শতকের প্রথমার্ধ
এইসব দাঙ্গাহাঙ্গামা ও লালচানের উত্তরাধিকারদের আর্থিক দৈন্যের কারণে বিশ শতকের শুরুতেই এই মিছিল বন্ধ হয়ে যায়।
সপ্ত এর গানের নিদর্শন এখন আর পাওয়া যায়নি। কয়েকটি সঙ-এর গান উদ্ধার করেছি তার থেকে দুটি গান উদ্ধৃতি করছি। এগুলি প্রধানত জন্মাষ্টমীর মিছিলে গাওয়া হতো। তার মানে এ নয় যে, অন্য সময় গাওয়া হতো না। জন্মাষ্টমীর মিছিলেরও বড় আকর্ষণ ছিল সঙ এর গান।
১
মা তোমার কি অপার লীলা, ঢাকায় বসন্তের খেলা।
বুড়িগঙ্গার চরে নিলা.
হাসপাতালের ঘর।
বসন্ত আর ঝিন-ঝিন বাতে, লোক মরেছে শতে শতে,
লালবাগ আর শ্যামপুরেতে,
চিভার নাই অবসর।
কেহ যায় স্নান করিতে
কেহ যায় মা বাজারেতে,
কিন-ঝিন পাত পড়ে বসে
তাহাদের উপর।
২
ঢাকাতে ঢাকেশ্বরী তুই রইলি,
রায়ই কেন বাঁধালি,
সংকাবাড়ির রাত্তিতে
কত গোল পড়লো ঢাকাতে,
রায় সাহেবের বাজার কিছু নাই,
চকবাজারে উড়লো ছাই,
শ্যামবাজারে কত লোকের ঠাঁই,
মদন পালের বাগিচায়,
নতুন করে বাজার বসালি,
ঢাকাতে ঢাকেশ্বরী তুই রইলি।”
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০২)