০৬:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলে জনপ্রিয়তাবাদী নেতাদের উত্থান আরিজোনার নবনির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান শপথ নিতে পারছেন না রাশিয়া ইউক্রেনের গ্যাস নেটওয়ার্কে সবচেয়ে বড় হামলা চালিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন গ্রিনল্যান্ডের মেরু ভালুক রক্ষায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দের পরিকল্পনা নর্থ ক্যারোলিনায় আউটার বাংকসে সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি সোমালিয়ায় সংক্রামক রোগের কেস তিন মাসে দ্বিগুণ আফ্রিকায় মার্কিন সহায়তা কাটছাঁটে ওষুধ-সরঞ্জামের ঘাটতি বাড়ছে সাবেক নৌবাহিনী প্রধান সরওয়ার জাহান নিজাম আর নেই ইথিওপিয়ার গামবেলা শরণার্থী ক্যাম্পে ম্যালেরিয়া রোগী দ্বিগুণের বেশি ঢাকার শাহবাগে তিন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৪)

দেশের কাজে হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের ভাবা উচিত যে, পাকিস্তান তাদের নিজেদেরই দেশ।”

তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫)

বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই সরকারের কর্তৃত্বাধীনে মুক্তিযুদ্ধ হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় তাঁর জন্ম। আজীবন মেধাবী ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম শ্রেণি পাওয়া ছাত্র। আইন ডিগ্রিও পেয়েছিলেন জেল থেকে ১৯৬৪ সালে।

 

মুসলিম লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন ছাত্রাবস্থায়। আবুল হাশিমের নৃেতত্বে মুসলিম দীসের প্রগতিশীল তরুণরা ওয়াকার্স ক্যাম্প গঠন করেন যার সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। যুবলীগের। অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন ও গ্রেফতারবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

এ সময় আবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজ সেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে। ফের গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে এর কাঠামো ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১২ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মুজিবনগর/প্রবাসী/বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

তাজউদ্দীন আহমদ

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে সে পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাকশালেও তিনি যোগ দেন নি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাতীয় চারনেতা গ্রেফতার হন। ৩ নভেম্বর সামরিক বাহিনী তাঁদের জেলেই হত্যা করে। তাজউদ্দীন এর মধ্যে অন্যতম। তাজউদ্দীন আহমেদ লিখিত ডায়েরির যে কটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে তাই ১৯৪৭-১৯৫৪ সালের রাজনৈতিক ইতিহাসের আকর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সমাজতন্ত্রে তাঁর বিশ্বাস ছিল। মোহাম্মদ তোয়াহা লিখেছেন, তাজউদ্দীন ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, এর সত্যাসত্য নিরূপণ করা দুরূহ। ১৯৪৭সালে তাজউদ্দীন বলেছিলেন- “আমাদের একটা জনগণের রাষ্ট্র গঠন করা উচিত। দুর্নীতি ও ঘুষ শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে। মানুষ খোলা মনে স্বতস্ফূর্তভাবে সবকিছু দেখতে এবং বুঝতে শিখুক। একটা সুখী রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে আবেদন জানালাম। দেশের কাজে হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের ভাবা উচিত যে, পাকিস্তান তাদের নিজেদেরই দেশ।”

‘জনগণের রাষ্ট্র’ এ শব্দ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র সম্পর্কে যৌবনেই তাঁর ধারণা ছিল স্পষ্ট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরির সময় সে কারণেই হয়তো নবাগত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়েছিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক বেতার ভাষণে তিনি বলেছিলেন- “আমাদের আজকের সংগ্রাম সেদিনই সার্থক হবে যেদিন আমরা বঙ্গবন্ধু প্রতিশ্রত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৩)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৩)

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলে জনপ্রিয়তাবাদী নেতাদের উত্থান

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৪)

০৭:০০:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

দেশের কাজে হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের ভাবা উচিত যে, পাকিস্তান তাদের নিজেদেরই দেশ।”

তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫-১৯৭৫)

বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সেই সরকারের কর্তৃত্বাধীনে মুক্তিযুদ্ধ হয়। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় তাঁর জন্ম। আজীবন মেধাবী ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রথম শ্রেণি পাওয়া ছাত্র। আইন ডিগ্রিও পেয়েছিলেন জেল থেকে ১৯৬৪ সালে।

 

মুসলিম লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন ছাত্রাবস্থায়। আবুল হাশিমের নৃেতত্বে মুসলিম দীসের প্রগতিশীল তরুণরা ওয়াকার্স ক্যাম্প গঠন করেন যার সক্রিয় সদস্য ছিলেন তিনি। যুবলীগের। অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করেন ও গ্রেফতারবরণ করেন। ১৯৫৩ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

এ সময় আবার কারাবরণ করেন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক ও সমাজ সেবা সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে। ফের গ্রেফতার হন। ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ও ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে এর কাঠামো ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ১২ এপ্রিল ১৯৭২ সালে মুজিবনগর/প্রবাসী/বাংলাদেশ সরকার গঠন এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান করেন।

তাজউদ্দীন আহমদ

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে সে পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বাকশালেও তিনি যোগ দেন নি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জাতীয় চারনেতা গ্রেফতার হন। ৩ নভেম্বর সামরিক বাহিনী তাঁদের জেলেই হত্যা করে। তাজউদ্দীন এর মধ্যে অন্যতম। তাজউদ্দীন আহমেদ লিখিত ডায়েরির যে কটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে তাই ১৯৪৭-১৯৫৪ সালের রাজনৈতিক ইতিহাসের আকর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

সমাজতন্ত্রে তাঁর বিশ্বাস ছিল। মোহাম্মদ তোয়াহা লিখেছেন, তাজউদ্দীন ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য, এর সত্যাসত্য নিরূপণ করা দুরূহ। ১৯৪৭সালে তাজউদ্দীন বলেছিলেন- “আমাদের একটা জনগণের রাষ্ট্র গঠন করা উচিত। দুর্নীতি ও ঘুষ শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে। মানুষ খোলা মনে স্বতস্ফূর্তভাবে সবকিছু দেখতে এবং বুঝতে শিখুক। একটা সুখী রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতা করার জন্য সকলকে আবেদন জানালাম। দেশের কাজে হিন্দুদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের ভাবা উচিত যে, পাকিস্তান তাদের নিজেদেরই দেশ।”

‘জনগণের রাষ্ট্র’ এ শব্দ দুটি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র সম্পর্কে যৌবনেই তাঁর ধারণা ছিল স্পষ্ট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরির সময় সে কারণেই হয়তো নবাগত রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়েছিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এক বেতার ভাষণে তিনি বলেছিলেন- “আমাদের আজকের সংগ্রাম সেদিনই সার্থক হবে যেদিন আমরা বঙ্গবন্ধু প্রতিশ্রত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।

(চলবে)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৩)

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৩)