রিপু দমন করেনি তাদের এরা গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেন না।
থাউক্কা বড়া পিঠা
কিছুদিন আগে পর্যন্ত ঢাকাইয়া বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল থাউক্কা বড়া পিঠা। যেসব উপাদান দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয় তা দিয়েই থাউক্কা করা হতো। তবে এর বৈশিষ্ট্য ছিল প্রতিটি পিঠার ওজন হতো এক কেজি বা তার বেশি। কনে বাড়ির মেয়েরা তা তৈরি করে বরের বাড়ি পাঠাত। বিয়ের পরদিন সকালে পাটিসাপটা ও অন্যান্য পিঠার সঙ্গে একটি ডালায় আলাদা করে থাউক্কা নিয়ে যাওয়া হতো। দ্বিতীয়বার জামাইকে শ্বশুরবাড়ি আমন্ত্রণ জানাতে হলে প্রথমবারের দ্বিগুণ থাউক্কা বড়া পিঠা পাঠাতে হতো। এখন অবশ্য এ পিঠা লুপ্ত।’
দরবেশ ফকির
নাম শুনে মনে হবে মুসলমান, কিন্তু আদৌ তা নয়। এরা বৈষ্ণব মতের অনুসারী কিন্তু কী কারণে যে, এই আরবি নামের উৎপত্তি জানি না। ওয়াইজ জানাচ্ছেন, চৈতন্যদেবের মৃত্যুর পর যে ছয়জন গোসাই হন, তাদের মধ্যে রাম-সনাতন ছিলেন দুইজন। এবং এই দুইজনের সঙ্গেই এ গোত্রের উৎপত্তি জড়িত। তিনি আরো লিখেছেন উদয়চাঁদ নামে একজন কর্মকার “এই গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা”। পদ্মার তীরে ঝাউকান্দিতে ছিল এদের আখড়া।
আরেকটি আখড়া ছিল হিলসামাটি নদীর তীরে। এরা কৃষ্ণের পূজারী। মৃতকে কবর দেন। নিজেদের মতকে বলেন ব্রহ্মধর্ম আবার ধর্মগ্রন্থ হলো চৈতন্য চরিতামৃত। কৌমার্য পালন করেন।
উনিশ শতকে একজন দরবেশ
দাড়ি-গোঁফ ছাঁটেন না। মদ খেতে ভালোবাসেন। ওয়াইজ লিখেছেন, “এই সম্প্রদায়ের লোকেরা যেন বিনয়ের অবতার, আচার-আচরণে সর্বক্ষণ এক বিনম্র ভাব। নিত্যানন্দের এক উপাধি বায়ুলা এরা বর্জন করেছে, সমগ্র বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের এরা সংযমী বলে মনে করে। এবং যারা কৃষ্ণতার মাধ্যমে রিপু দমন করেনি তাদের এরা গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেন না। প্রাণহানির তো প্রশ্ন ওঠে না, গাছপালার একটি পাতা ছেঁড়া কিংবা একটি ডাল ভাঙাকে এরা মনে করে এক মহা অপরাধ। কেউ কেউ উপরের দিকে এরা অবনমিত হয়ে শ্রদ্ধা জানায়। ভূমি স্পর্শ করে গড় হয়ে প্রণাম জানায়। তারপর দাঁড়িয়ে বুকে ও মুখে ধুলা মাখে। ”
উনিশ শতকে দু’জন দরবেশ
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৯)