১১:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব জাপানে ভিসা ফি বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমান হবে হার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে ভারত হয়ে উঠছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিকল্প আউটসোর্সিং কেন্দ্র বৈশ্বিক মানবিক সহায়তায় নতুন ভূমিকা নিচ্ছে বেইজিং, তবে ‘গণতান্ত্রিক বিকল্প’ও দরকার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪১) ভূতের নৃত্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দফা দাবিতে শিক্ষকদের টানা আন্দোলন, সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা শাহজালাল বিমানবন্দরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ৩৫ নিরাপত্তাকর্মী কিংবদন্তি রক গুরু আইয়ুব বাচ্চুর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধার স্রোত

জুলাই সনদ নিয়ে বিভাজন—রক্ত দিল যারা, ক্ষমতার মঞ্চে তাদের দেখা নেই

জুলাই সনদ সই ও রাজনৈতিক আলোড়ন

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আয়োজিত “জুলাই সনদ” সই অনুষ্ঠান ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও উপস্থিত হয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দল।

এনসিপির অনুপস্থিতি ও অবস্থান

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকা বাংলা মোটরে দলের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “যারা গতকালকের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল, তারা জনগণ থেকে ছিটকে গেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দাবির কোনও মিল নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই সনদে সই কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা, যার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। নাহিদ বলেন, “এটি যদি আইনি ভিত্তি না পায়, তবে এটি হবে একটি গণপ্রতারণা ও জাতির সঙ্গে প্রহসন।”

রক্ত দিলামদেখা নেই ক্ষমতার খেলায়

এদিকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন—একটি জুলাই আন্দোলনের সময়ের, আরেকটি সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানের। প্রথম ছবিতে দেখা যায় আন্দোলনের মুখগুলো, দ্বিতীয়টিতে তারা কেউ নেই।

হাসনাত লেখেন, “রক্ত দেওয়ার সময় আমরা এগিয়ে থাকবো, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে আমাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুনরাবৃত্তি!”

এই মন্তব্য দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা সনদ সই নিয়ে বিরোধপূর্ণ মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

৯০-এর পুনরাবৃত্তি চাই না

নাহিদ ইসলাম ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, “১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তিন দলের জোট যে রূপরেখা দিয়েছিল, তা রক্ষা করা হয়নি। আমরা সেই ভুল আর দেখতে চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লড়াই শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিরুদ্ধে। কেবল নেতৃত্ব বদল নয়, কাঠামোগত সংস্কারই আমাদের লক্ষ্য।”

আইনি ভিত্তির প্রশ্নে সরকারের প্রতি আহ্বান

নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার এখনো সনদকে কোনও আইনি ভিত্তি দেয়নি। এটি অর্থবহ করতে হলে প্রয়োজন সংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের ব্যবস্থা। “যদি বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকে আদেশ জারি হয়, তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না,” তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি যুক্তি দেন, “রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সাহেব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক নন। বরং প্রফেসর ইউনূসই জনগণের আহ্বানে এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই এই সনদ বৈধতা পেতে হলে তা ইউনূসের মাধ্যমেই হতে হবে।”

দলীয় ঐক্যের সম্ভাবনা ও শর্ত

নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো আইনি ভিত্তি গড়ে তুলে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে, আমরা তাদের সমর্থন করবো। কিন্তু কেউ যদি না আসে, আমরা এককভাবেও এই লড়াই চালিয়ে যাবো।”

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন দ্বিধা ও বিভাজন। একদিকে অংশগ্রহণকারী দলগুলো দাবি করছে এটি সংস্কারের সূচনা, অন্যদিকে এনসিপি মনে করছে—আইনি কাঠামো ছাড়া এটি হবে ইতিহাসের আরেকটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আন্দোলনের মঞ্চে যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের আশা—ক্ষমতার মঞ্চেও যেন তাদের স্থান থাকে, আর জনগণের প্রত্যাশা—সংস্কারের প্রতিশ্রুতি যেন আরেকবার বিশ্বাসঘাতকতায় পরিণত না হয়।

# জুলাই_সনদ, এনসিপি, ড_ইউনূস, নাহিদ_ইসলাম, হাসনাত_আবদুল্লাহ, গণঅভ্যুত্থান, সংবিধান_সংস্কার

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব

জুলাই সনদ নিয়ে বিভাজন—রক্ত দিল যারা, ক্ষমতার মঞ্চে তাদের দেখা নেই

০৭:৫৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ সই ও রাজনৈতিক আলোড়ন

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আয়োজিত “জুলাই সনদ” সই অনুষ্ঠান ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও উপস্থিত হয়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দল।

এনসিপির অনুপস্থিতি ও অবস্থান

শনিবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকা বাংলা মোটরে দলের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “যারা গতকালকের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল, তারা জনগণ থেকে ছিটকে গেছে। তাদের সঙ্গে আমাদের দাবির কোনও মিল নেই।”

তিনি অভিযোগ করেন, জুলাই সনদে সই কেবলই একটি আনুষ্ঠানিকতা, যার কোনও আইনি ভিত্তি নেই। নাহিদ বলেন, “এটি যদি আইনি ভিত্তি না পায়, তবে এটি হবে একটি গণপ্রতারণা ও জাতির সঙ্গে প্রহসন।”

রক্ত দিলামদেখা নেই ক্ষমতার খেলায়

এদিকে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন—একটি জুলাই আন্দোলনের সময়ের, আরেকটি সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানের। প্রথম ছবিতে দেখা যায় আন্দোলনের মুখগুলো, দ্বিতীয়টিতে তারা কেউ নেই।

হাসনাত লেখেন, “রক্ত দেওয়ার সময় আমরা এগিয়ে থাকবো, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে আমাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পুনরাবৃত্তি!”

এই মন্তব্য দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা সনদ সই নিয়ে বিরোধপূর্ণ মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

৯০-এর পুনরাবৃত্তি চাই না

নাহিদ ইসলাম ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, “১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর তিন দলের জোট যে রূপরেখা দিয়েছিল, তা রক্ষা করা হয়নি। আমরা সেই ভুল আর দেখতে চাই না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লড়াই শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, বরং একটি ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিরুদ্ধে। কেবল নেতৃত্ব বদল নয়, কাঠামোগত সংস্কারই আমাদের লক্ষ্য।”

আইনি ভিত্তির প্রশ্নে সরকারের প্রতি আহ্বান

নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার এখনো সনদকে কোনও আইনি ভিত্তি দেয়নি। এটি অর্থবহ করতে হলে প্রয়োজন সংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের ব্যবস্থা। “যদি বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকে আদেশ জারি হয়, তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না,” তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি যুক্তি দেন, “রাষ্ট্রপতি চুপ্পু সাহেব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রতীক নন। বরং প্রফেসর ইউনূসই জনগণের আহ্বানে এসেছেন, দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই এই সনদ বৈধতা পেতে হলে তা ইউনূসের মাধ্যমেই হতে হবে।”

দলীয় ঐক্যের সম্ভাবনা ও শর্ত

নাহিদ ইসলাম বলেন, “যদি সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো আইনি ভিত্তি গড়ে তুলে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে, আমরা তাদের সমর্থন করবো। কিন্তু কেউ যদি না আসে, আমরা এককভাবেও এই লড়াই চালিয়ে যাবো।”

জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন দ্বিধা ও বিভাজন। একদিকে অংশগ্রহণকারী দলগুলো দাবি করছে এটি সংস্কারের সূচনা, অন্যদিকে এনসিপি মনে করছে—আইনি কাঠামো ছাড়া এটি হবে ইতিহাসের আরেকটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আন্দোলনের মঞ্চে যারা রক্ত দিয়েছে, তাদের আশা—ক্ষমতার মঞ্চেও যেন তাদের স্থান থাকে, আর জনগণের প্রত্যাশা—সংস্কারের প্রতিশ্রুতি যেন আরেকবার বিশ্বাসঘাতকতায় পরিণত না হয়।

# জুলাই_সনদ, এনসিপি, ড_ইউনূস, নাহিদ_ইসলাম, হাসনাত_আবদুল্লাহ, গণঅভ্যুত্থান, সংবিধান_সংস্কার