০৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায় জন বোলটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: ট্রাম্পের সমালোচক আবারও বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন ১৩ বছর বয়সী জে টেলরের আত্মহত্যার পেছনে রহস্য: FBI-র তদন্তে ‘হোয়াইট টাইগার’ এর সন্ধান সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ধারাবাহিক পতনে ধসের মুখে শেয়ারবাজার — ৫ হাজার পয়েন্ট সীমার কাছাকাছি ডিএসই সূচক তিন দফা দাবিতে অনড় এমপিও শিক্ষকরা, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিলেটের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল বিএনপিকে জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে — সালাহউদ্দিন জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ আসলে পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা — নাহিদ ইসলাম

শিরোনাম: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আপিলের শুনানি নির্ধারিত

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—হাইকোর্টের এমন ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ অক্টোবর। রবিবার আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।


হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

২০২৪ সালের ১৩ মে হাইকোর্ট রায় দেন যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা অসাংবিধানিক ও বেআইনি।
একই রায়ে জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধিকেও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ টানা তিন ঘণ্টার শুনানির পর এই রায় দেন। আদালত নির্দেশ দেন, বর্তমানে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে।


চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০২৪ সালের ১৫ মে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত ওই রায় স্থগিত করেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলাটির শুনানির তারিখ ২৮ অক্টোবরের জন্য নির্ধারিত হয়।


রায়ের মূল বক্তব্য

হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বিচার প্রক্রিয়ার সব ধাপ সম্পন্ন না হলে কাউকে কনডেম সেলে রাখা মানবাধিকারের পরিপন্থী।
তবে আদালত মত দেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে—যেমন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বা সংক্রামক রোগের আশঙ্কা থাকলে—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দিকে একা রাখার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল নিয়ে রায় : আপিল করবে সরকার – Padmatimes24

মামলার পটভূমি

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তিনজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে রিট আবেদন দাখিল করেন।
তারা হলেন — চট্টগ্রাম কারাগারের জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারের শাহ আলম।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজনস এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেল সুপারদের বিবাদী করা হয়।
আবেদনকারীরা জানতে চান, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।


আদালতের রুল ও প্রতিবেদন নির্দেশনা

রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান কেন জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।
পাশাপাশি আদালত কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন, ছয় মাসের মধ্যে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে।


আইনজীবীর বক্তব্য

রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরপরই তা কার্যকর করার কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ও ৪১০ ধারায় বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হলে হাইকোর্টের অনুমোদন ও আপিলের সুযোগ দিতে হয়। আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “তবুও দেশে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর আসামিদের সঙ্গে সঙ্গে কনডেম সেলে পাঠানো হয়, যা সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এজন্য আমরা জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছি, যেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আলাদা সেলে রাখতে হবে।”

এই মামলার ফলাফল বাংলাদেশের কারা ব্যবস্থায় একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত প্রথার বৈধতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে। আগামী ২৮ অক্টোবরের শুনানিতে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেয়, তা এখন দেশের আইনজীবী সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিচার পর্যবেক্ষকদের মধ্যে গভীর আগ্রহের বিষয়।

#হাইকোর্ট #মৃত্যুদণ্ড #কনডেমসেল #আপিলবিভাগ #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায়

শিরোনাম: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আপিলের শুনানি নির্ধারিত

০৫:৫০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের চূড়ান্ত রায় হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—হাইকোর্টের এমন ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ অক্টোবর। রবিবার আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ তারিখ নির্ধারণ করা হয়।


হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

২০২৪ সালের ১৩ মে হাইকোর্ট রায় দেন যে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা অসাংবিধানিক ও বেআইনি।
একই রায়ে জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধিকেও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চ টানা তিন ঘণ্টার শুনানির পর এই রায় দেন। আদালত নির্দেশ দেন, বর্তমানে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে।


চেম্বার জজ আদালতের স্থগিতাদেশ

হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০২৪ সালের ১৫ মে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন চেম্বার জজ আদালত ওই রায় স্থগিত করেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলাটির শুনানির তারিখ ২৮ অক্টোবরের জন্য নির্ধারিত হয়।


রায়ের মূল বক্তব্য

হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বিচার প্রক্রিয়ার সব ধাপ সম্পন্ন না হলে কাউকে কনডেম সেলে রাখা মানবাধিকারের পরিপন্থী।
তবে আদালত মত দেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে—যেমন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বা সংক্রামক রোগের আশঙ্কা থাকলে—সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্দিকে একা রাখার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল নিয়ে রায় : আপিল করবে সরকার – Padmatimes24

মামলার পটভূমি

২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির তিনজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে রিট আবেদন দাখিল করেন।
তারা হলেন — চট্টগ্রাম কারাগারের জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারের শাহ আলম।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজনস এবং সংশ্লিষ্ট জেলার জেল সুপারদের বিবাদী করা হয়।
আবেদনকারীরা জানতে চান, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।


আদালতের রুল ও প্রতিবেদন নির্দেশনা

রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুল জারি করে জানতে চান কেন জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।
পাশাপাশি আদালত কারা মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন, ছয় মাসের মধ্যে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের অবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করতে।


আইনজীবীর বক্তব্য

রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরপরই তা কার্যকর করার কোনো বিধান নেই। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ও ৪১০ ধারায় বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হলে হাইকোর্টের অনুমোদন ও আপিলের সুযোগ দিতে হয়। আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “তবুও দেশে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর আসামিদের সঙ্গে সঙ্গে কনডেম সেলে পাঠানো হয়, যা সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এজন্য আমরা জেল কোডের ৯৮০ নম্বর বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছি, যেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আলাদা সেলে রাখতে হবে।”

এই মামলার ফলাফল বাংলাদেশের কারা ব্যবস্থায় একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত প্রথার বৈধতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে। আগামী ২৮ অক্টোবরের শুনানিতে আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেয়, তা এখন দেশের আইনজীবী সমাজ, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিচার পর্যবেক্ষকদের মধ্যে গভীর আগ্রহের বিষয়।

#হাইকোর্ট #মৃত্যুদণ্ড #কনডেমসেল #আপিলবিভাগ #বাংলাদেশবিচারব্যবস্থা #সারাক্ষণরিপোর্ট