১২:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫২) পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের ভয়াবহ এক আত্মজীবনী—যৌন নির্যাতন, ক্ষমতার অন্ধকার এবং এক নারীর করুণ লড়াইয়ের কাহিনি চীনের নারী দর্শকশক্তি বদলে দিচ্ছে দেশটির চলচ্চিত্রজগৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৫) ঢাকার অর্থনীতির ৫৬ শতাংশ উৎপাদন খাতে—ডিসিসিআই প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে ১৮ শতাংশ এশিয়া সফরে ট্রাম্প—চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা ইসলামাবাদ–কাবুল দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু

দেশের অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এক বছরে ফিলিস্তিনেরও নীচে নেমে গেছে

বৈশ্বিক অবস্থান ও চলাচলের স্বাধীনতায় বড় ধাক্কা

গত এক বছরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চলাচল ও বৈশ্বিক অবস্থান বড় ধাক্কা খেয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিদেশে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অবিশ্বাসের ফলে দেশের পাসপোর্ট এখন বিশ্বের অন্যতম দুর্বল অবস্থানে নেমে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত ২০২৫ সালের ‘হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স’-এর (১৪ অক্টোবর) তথ্যে দেখা গেছে, ১০৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০০তম। ফলে বৈশ্বিকভাবে এটি সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশ এই অবস্থান ভাগ করছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে; আর ফিলিস্তিন এক ধাপ উপরে, ৯৯তম স্থানে। বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকেরা মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করেন—যদিও অনেক ভ্রমণকারী দাবি করেছেন, এসব দেশেও প্রবেশে বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রবেশ-নিষেধের ঘটনা বাড়ছে।

পাসপোর্টের শক্তি নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ভিসা চুক্তি এবং অনিয়মিত অভিবাসনের ধরণসহ নানা বিষয়ের ওপর।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবনতির পেছনে রয়েছে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, মানবপাচার কেলেঙ্কারি এবং ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সৃষ্ট কূটনৈতিক টানাপোড়েন।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক—যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ গন্তব্য—সম্পর্কে পরিবর্তনের পর তীব্রভাবে অবনতি ঘটে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারত নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের সব ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দেয়। যদিও পরে সীমিত আকারে চিকিৎসা ও শিক্ষার্থী ভিসা চালু হয়।

শ্রীলঙ্কা আগমন-পূর্ব ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) বাধ্যতামূলক করেছে, আর সৌদি আরব ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশসহ আরও ১৩টি দেশের কর্মভিসা স্থগিত করে।

এদিকে ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোও বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। ফলে যাচাইকরণে সময় বাড়ছে, প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে এবং বৈধ ভিসা থাকলেও অনেককে বিমানবন্দরে নামানো হচ্ছে।

ফেরত পাঠানো ও মানবিক সংকটের গভীরতা

সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনাগুলো দেশের পাসপোর্ট সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

২০২৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান ১৮০ জন অনিবন্ধিত বাংলাদেশিকে দেশে পাঠায়, যারা প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠায় আরও ৩০ জনকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইতালি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও সাইপ্রাস থেকে ৫২ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। ৩০ আগস্ট যুক্তরাজ্য অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগে ১৫ জনকে দেশে ফেরায়।

মালয়েশিয়াও ১৫ আগস্ট ৯৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায়, এর আগে আরও ২০৪ জনকে দেশ থেকে পাঠানো হয়েছিল।

মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনে বিশ্ব আস্থার ক্ষয়

বিশ্লেষকদের মতে, অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের উল্লম্ফন বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান কমিয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৫ সালের ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস (TIP)’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে আবারও টিয়ার-২ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ মানবপাচার প্রতিরোধে সীমিত অগ্রগতি দেখিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ৩,৪১০ জন বাংলাদেশি মানবপাচারের শিকার হয়েছেন—যার মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচারে, ২,৫৭২ জন বাধ্যতামূলক শ্রমে এবং ৭৩ জন, অন্যভাবে শোষণের শিকার হন। অথচ সরকারি হিসাবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা মাত্র ১,৪৬২।

আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও বৈশ্বিক সন্দেহ

২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রংপুরের তারাগঞ্জে ৯ আগস্ট দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জুলাই মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেন, লাল রঙের সরকারি পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তিনি বিদেশে কেবল ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে সন্দেহের চোখে পড়েন। তাঁর ভাষায়, সাধারণ সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে চলাচল করলে পরিস্থিতি আরও ‘ভয়াবহ’ হয়।

একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্বীকার করেন, বিদেশে বাংলাদেশিদের হয়রানির ঘটনা বাস্তব এবং পাসপোর্টের অবমূল্যায়নের দায় কেবল বিদেশি কর্তৃপক্ষের নয়, এর কিছুটা বাংলাদেশের নিজেদেরও, বহন করতে হবে।

মানবপাচার, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পাসপোর্টের শক্তি বাড়াতে সরকারের প্রয়োজন টেকসই কূটনৈতিক কৌশল, শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান।

#বাংলাদেশ #পাসপোর্ট_সংকট #মানবপাচার #ভিসা_নিষেধাজ্ঞা #আন্তর্জাতিক_বিশ্বাস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি

দেশের অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবস্থান এক বছরে ফিলিস্তিনেরও নীচে নেমে গেছে

০১:৩৩:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

বৈশ্বিক অবস্থান ও চলাচলের স্বাধীনতায় বড় ধাক্কা

গত এক বছরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক চলাচল ও বৈশ্বিক অবস্থান বড় ধাক্কা খেয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিদেশে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অবিশ্বাসের ফলে দেশের পাসপোর্ট এখন বিশ্বের অন্যতম দুর্বল অবস্থানে নেমে এসেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত ২০২৫ সালের ‘হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স’-এর (১৪ অক্টোবর) তথ্যে দেখা গেছে, ১০৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০০তম। ফলে বৈশ্বিকভাবে এটি সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

বাংলাদেশ এই অবস্থান ভাগ করছে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে; আর ফিলিস্তিন এক ধাপ উপরে, ৯৯তম স্থানে। বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকেরা মাত্র ৩৮টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করেন—যদিও অনেক ভ্রমণকারী দাবি করেছেন, এসব দেশেও প্রবেশে বাড়তি জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রবেশ-নিষেধের ঘটনা বাড়ছে।

পাসপোর্টের শক্তি নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক, ভিসা চুক্তি এবং অনিয়মিত অভিবাসনের ধরণসহ নানা বিষয়ের ওপর।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পাসপোর্টের অবনতির পেছনে রয়েছে দুর্বল শাসনব্যবস্থা, মানবপাচার কেলেঙ্কারি এবং ছাত্রনেতৃত্বাধীন আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সৃষ্ট কূটনৈতিক টানাপোড়েন।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক—যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভ্রমণ গন্তব্য—সম্পর্কে পরিবর্তনের পর তীব্রভাবে অবনতি ঘটে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারত নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের সব ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দেয়। যদিও পরে সীমিত আকারে চিকিৎসা ও শিক্ষার্থী ভিসা চালু হয়।

শ্রীলঙ্কা আগমন-পূর্ব ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশন (ইটিএ) বাধ্যতামূলক করেছে, আর সৌদি আরব ২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশসহ আরও ১৩টি দেশের কর্মভিসা স্থগিত করে।

এদিকে ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোও বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করেছে। ফলে যাচাইকরণে সময় বাড়ছে, প্রত্যাখ্যানের হার বেড়েছে এবং বৈধ ভিসা থাকলেও অনেককে বিমানবন্দরে নামানো হচ্ছে।

ফেরত পাঠানো ও মানবিক সংকটের গভীরতা

সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ অভিবাসী বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনাগুলো দেশের পাসপোর্ট সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

২০২৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তান ১৮০ জন অনিবন্ধিত বাংলাদেশিকে দেশে পাঠায়, যারা প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন। এর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠায় আরও ৩০ জনকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ১৮৭ জন বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ইতালি, অস্ট্রিয়া, গ্রিস ও সাইপ্রাস থেকে ৫২ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়। ৩০ আগস্ট যুক্তরাজ্য অভিবাসন আইন ভঙ্গের অভিযোগে ১৫ জনকে দেশে ফেরায়।

মালয়েশিয়াও ১৫ আগস্ট ৯৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায়, এর আগে আরও ২০৪ জনকে দেশ থেকে পাঠানো হয়েছিল।

মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনে বিশ্ব আস্থার ক্ষয়

বিশ্লেষকদের মতে, অনিয়মিত অভিবাসন ও মানবপাচারের উল্লম্ফন বাংলাদেশের পাসপোর্টের মান কমিয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে এর বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৫ সালের ‘ট্রাফিকিং ইন পারসনস (TIP)’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে আবারও টিয়ার-২ পর্যায়ে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ মানবপাচার প্রতিরোধে সীমিত অগ্রগতি দেখিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর ৩,৪১০ জন বাংলাদেশি মানবপাচারের শিকার হয়েছেন—যার মধ্যে ৭৬৫ জন যৌন পাচারে, ২,৫৭২ জন বাধ্যতামূলক শ্রমে এবং ৭৩ জন, অন্যভাবে শোষণের শিকার হন। অথচ সরকারি হিসাবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা মাত্র ১,৪৬২।

আইনশৃঙ্খলা অবনতি ও বৈশ্বিক সন্দেহ

২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১৭৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রংপুরের তারাগঞ্জে ৯ আগস্ট দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জুলাই মাসে এক অনুষ্ঠানে বলেন, লাল রঙের সরকারি পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তিনি বিদেশে কেবল ‘বাংলাদেশি’ পরিচয়ে সন্দেহের চোখে পড়েন। তাঁর ভাষায়, সাধারণ সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে চলাচল করলে পরিস্থিতি আরও ‘ভয়াবহ’ হয়।

একই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্বীকার করেন, বিদেশে বাংলাদেশিদের হয়রানির ঘটনা বাস্তব এবং পাসপোর্টের অবমূল্যায়নের দায় কেবল বিদেশি কর্তৃপক্ষের নয়, এর কিছুটা বাংলাদেশের নিজেদেরও, বহন করতে হবে।

মানবপাচার, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কূটনৈতিক উত্তেজনা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও পাসপোর্টের শক্তি বাড়াতে সরকারের প্রয়োজন টেকসই কূটনৈতিক কৌশল, শ্রমবাজারে স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান।

#বাংলাদেশ #পাসপোর্ট_সংকট #মানবপাচার #ভিসা_নিষেধাজ্ঞা #আন্তর্জাতিক_বিশ্বাস #সারাক্ষণ_রিপোর্ট