টানা মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে সাধারণ মানুষ
খুলনা শহরের বাজারে গত দুই মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও রান্নার উপকরণের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। সবজিসহ বেশিরভাগ পণ্যের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা এখন অনেক ভোক্তার নাগালের বাইরে।
সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে, কমার লক্ষণ নেই
বেশিরভাগ সবজি এখন কেজিপ্রতি ৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলেও দামের কোনো হেরফের দেখা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীরা অতিবৃষ্টিকে দোষারোপ করলেও এখন তারা মৌসুমি পরিবর্তন ও সরবরাহ ঘাটতিকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন।
মাছ, মাংস, রসুনেও বাড়তি চাপ
সবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস ও রসুনের দামও বেড়েছে। যদিও চাল, ডাল, ডিম ও কিছু মাংসের দামে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে, তবে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে দুর্বল নজরদারি
ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া সিন্ডিকেট বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত মুনাফা করছে। যথাযথ বাজার তদারকি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযান না থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

সরেজমিনে বাজারচিত্র
শুক্রবার খুলনা শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজি, মাছ ও দৈনন্দিন পণ্যের দাম প্রায় সর্বত্রই বেড়েছে।
বিক্রেতারা জানান, ভোজ্যতেলের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল হলেও তা আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল (ফ্রেশ, তীর, বসুন্ধরা) বিক্রি হচ্ছে ৯২০ টাকায়, অর্থাৎ প্রতি লিটার ১৮৪ টাকা—তিন সপ্তাহ আগের তুলনায় ১ টাকা বেশি। খোলা সয়াবিন তেলের দাম আরও চড়া, প্রতি লিটার ২০০ টাকা, যা দুই মাস আগে ছিল ১৮০–১৮৫ টাকার মধ্যে।
খুলনা সন্ধ্যা বাজারে সবজির অগ্নিমূল্য
খুলনা সিটি করপোরেশনের ময়লাপোতার সন্ধ্যা বাজারে শুক্রবার সবজির এমন দাম দেখা গেছে—
- বেগুন: ১০০–১২০ টাকা কেজি
- কাঁচামরিচ: ২৪০ টাকা কেজি
- ফুলকপি: ১৪০ টাকা
- করলা: ৬০ টাকা
- ঢেঁড়স: ৪০–৫০ টাকা
- ঝিঙা: ৫০–৬০ টাকা
- টমেটো: ১০০–১২০ টাকা
- চীনা রসুন: ১৫০ টাকা
- দেশি রসুন: ৮০–১৩০ টাকা মানভেদে
অন্যদিকে, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০–৮০ টাকায়, কুমড়া ৫০ টাকায়, লাউ ৬০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৫০–৬০ টাকায়, আলু ২০ টাকায়, গাজর ১২০ টাকায়, কাঁচকলা (প্রতি ঘা) ৪০–৫০ টাকায় এবং আগাম শিম ৮০ টাকায়।

চাল, ডাল, পেঁয়াজেও উর্ধ্বগতি
স্থানীয় পেঁয়াজের দাম এক সপ্তাহে ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা হয়েছে। ডালের দামও কমছে না—মোটা ডাল ১০০ টাকা কেজি, সূক্ষ্ম ডাল ১৫০ টাকা, যা ছয় সপ্তাহ আগে যথাক্রমে ৮০–৯০ এবং ১৪০–১৪৫ টাকায় বিক্রি হতো।
চালের দামও অস্থিতিশীল। দুই মাসে কেজিপ্রতি ৪–৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে—
- স্বর্ণা: ৫৫–৫৬ টাকা
- আতাশ বলাম: ৬২–৬৫ টাকা
- প্রিমিয়াম মিনিকেট: ৭৫ টাকা
- নিম্নমানের মিনিকেট: ৬০–৬৬ টাকা
- বাসমতি: ৯০–৯৫ টাকা
এক মাস আগেও একই চাল পাওয়া যেত ৫২, ৫৮–৬২, ৭০–৭২, ৬০–৬২ ও ৮০–৮৫ টাকায়।
মুরগি ও ডিমের দামও বেড়েছে
ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০ টাকা কেজি, যা এক মাস আগে ছিল ১৫৫ টাকা। দেশি মুরগি ২৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ২৬০–২৬৫ এবং ৩২০–৩৩৫ টাকা।
ডিমের দামও পুনরায় বেড়েছে—লেয়ার মুরগির ডজনপ্রতি ৪৮ টাকা, দেশি ডিম ৬০–৬৪ টাকা।
গরুর মাংসের নাগাল হারাচ্ছে সাধারণ ক্রেতা
খুলনার বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস ৬৫০–৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, যা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে।

ব্যবসায়ীদের দাবি ও ভোক্তাদের আহ্বান
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিবৃষ্টিতে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, বিশেষ করে মরিচের উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরবরাহে তারতম্য ঘটেছে। ফলে দামের এই ওঠানামা স্বাভাবিক।
ক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, “দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে না আনলে সাধারণ মানুষের পক্ষে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।”
রূপসা কেসিসি মার্কেটে মাছ ব্যবসায়ী মজাহিদুল ইসলাম জানান, “তেল, সবজি, মাছ—সবকিছুর দামই বেড়েছে। সরকারকে মোবাইল কোর্টের অভিযান জোরদার করতে হবে এবং প্রতিটি দোকানে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।”
#খুলনা #নিত্যপণ্য #মূল্যবৃদ্ধি #বাজারঅস্থিরতা #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















