২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞার অবসান
সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে চাঁদপুরের মেঘনা ও পদ্মা নদী। শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে শুরু হবে ইলিশ ধরার মৌসুম, আর প্রায় ৪৩ হাজার জেলে আবারও নদীতে নামবেন জীবিকা ফিরিয়ে আনতে।
এই সময়ের মধ্যে ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করা। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় এখন জেলেরা দীর্ঘ কষ্টের পর আবারও নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নামার অপেক্ষায়।
কঠোর নজরদারি ও অভিযান
চাঁদপুর সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক জানান, এই বছর শুরু থেকেই সরকার ও প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কঠোর ছিল। জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে যেন কেউ আইন লঙ্ঘন না করে।

সহকারী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা জানান, ২২ দিনের পুরো সময় জুড়ে মা ইলিশ রক্ষায় নদীতে টানা অভিযান চালানো হয়। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ–পুলিশ, কোস্টগার্ড ও টাস্কফোর্সের যৌথ টহল দল দিনরাত টহল দিয়েছে ৭০ কিলোমিটারজুড়ে ইলিশ সংরক্ষণ এলাকায়।
এই সময়ে ৬৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়—এর মধ্যে ৩২টি সদর উপজেলায়, ২০টি হাইমচরে এবং ১২টি মতলব উত্তর ও দক্ষিণে।
জাল ও ইলিশ জব্দ, জেলেদের সাজা
অভিযানের সময় প্রায় দুই মেট্রিক টন মা ইলিশ এবং ৫ লাখ ৫০ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়, যার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পরে এসব জাল ধ্বংস করা হয়।
মোট ৭৭টি মামলা দায়ের করা হয় এবং ১১৯ জন জেলেকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জব্দকৃত ইলিশ স্থানীয় এতিমখানা ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সীমিত সহায়তা
নিষেধাজ্ঞার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের জন্য সরকার ত্রাণ হিসেবে প্রতিজনকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণ করেছে। তবে অনেক জেলে এই সহায়তাকে অপর্যাপ্ত বলেছেন।
শনিবার ইউএনবির সঙ্গে কথা বলেন সদর উপজেলার জেলে রহিম মাঝি, সাকিব মাঝি ও ওমর আলী, এবং হারিনা ফেরিঘাটের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম, শেখ আমির হোসেন, ইউনুস মিজি ও দেলোয়ার হোসেন মিয়া।

তাদের অভিযোগ, চাল দিয়ে পরিবার চালানো সম্ভব নয়। রহিম মাঝি বলেন, “সরকার যদি চালের পাশাপাশি কিছু নগদ সহায়তা দিত, তাহলে অনেক উপকার হতো। ২৫ কেজি চাল কয়েক দিনেই শেষ হয়ে যায়। যদি মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হতো, তাহলে অনিয়মও কম হতো।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতি জেলেকে অন্তত তিন হাজার টাকা দেওয়া হলে কিছুটা স্বস্তি মিলত।”
আশায় বুক বাঁধছেন জেলেরা
চাঁদপুরে ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিল মা ইলিশ রক্ষা ও ভবিষ্যৎ উৎপাদন বৃদ্ধি। এখন সেই সময় শেষ।
নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীপাড়জুড়ে এখন জেলেদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। তারা নৌকা ও জাল প্রস্তুত করছেন নতুন মৌসুমের জন্য। স্থানীয়রা বলছেন, “এবার ইলিশ ধরা ভালো হবে—সবাই সেই আশাতেই দিন গুনছে।”
#ইলিশ, চাঁদপুর, মৎস্য অধিদপ্তর, মা ইলিশ রক্ষা, নদী অভিযান, জেলেদের জীবিকা, পদ্মা-মেঘনা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















