০৪:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
পান্ডা কূটনীতির পরের অধ্যায়? এখন স্পটলাইটে সোনালি বানর প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১৪) ভূতুড়ে কণিকা নিয়ে নতুন আবিষ্কার: যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের গবেষকদের যুগান্তকারী অন্তর্দৃষ্টি কিশোরদের এআই চ্যাট সীমাবোধে নতুন সুইচ দিল মেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানসিক সান্ত্বনার নতুন সহচর নাকি কেবল যান্ত্রিক প্রতিফলন? ‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫২) পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের ভয়াবহ এক আত্মজীবনী—যৌন নির্যাতন, ক্ষমতার অন্ধকার এবং এক নারীর করুণ লড়াইয়ের কাহিনি চীনের নারী দর্শকশক্তি বদলে দিচ্ছে দেশটির চলচ্চিত্রজগৎ

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উদ্যোগ—ছাত্রাবাসেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় সেবা

আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রাবাস বা একাডেমিক ভবনের ভেতরেই থাকছেন কাউন্সেলর বা থেরাপিস্ট। এই ‘এম্বেডেড কাউন্সেলর’ মডেল শিক্ষার্থীদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করে তুলছে। ২০২৫ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন এভাবে থেরাপিস্ট নিয়োগ দিচ্ছে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এতে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘লজ্জা’ বা সামাজিক সংকোচ অনেকটা কমেছে। ৩৭ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী যে বিষণ্নতা বা উদ্বেগে ভুগছে, তাদের জন্য এই উদ্যোগ বড় সহায়তা হয়ে উঠেছে।

ব্যক্তিগত সংগ্রাম থেকে শুরু

ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী সিওমারা গার্সিয়া ছিলেন প্রথম প্রজন্মের কলেজগামী ছাত্র। পরিবারের আর্থিক কষ্ট ও সামাজিক ভিন্নতার কারণে শুরু থেকেই তিনি নিজেকে ‘অযোগ্য’ মনে করতেন। এক পর্যায়ে অনলাইন থেরাপি শুরু করলেও গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কখনো সিঁড়ির নিচে বসে, ভিডিও কলে কথা বলতে হতো।

অবশেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকা এক থেরাপিস্টের কাছে যান—যাঁর কক্ষে নরম আলো, আরামদায়ক চেয়ার ও স্ন্যাক্সের ঝুড়ি ছিল। গার্সিয়া বলেন, “এটা যেন নিজের ঘরের মতো পরিবেশ ছিল।” এই সহজলভ্য থেরাপি তাঁকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়।

রাতের বেলায়ও ‘ড্রপ-ইন’ সেশন

ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চারজন এম্বেডেড কাউন্সেলর কাজ করছেন, যাঁরা রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেবা দেন। প্রতিষ্ঠানটির এম্বেডেড কাউন্সেলিংয়ের সহকারী পরিচালক ক্লেয়ার কাবেলোস বলেন, “মানসিক সংকট ৯টা-৫টার সময়সূচিতে হয় না।”

এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ‘রেসিডেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা ছাত্রনেতারাও চাপমুক্ত হচ্ছেন, কারণ আগের মতো তাঁদের আর প্রতিটি সমস্যা নিজেরা সামলাতে হয় না। ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে পাঁচজন কাউন্সেলর ৩৯১ শিক্ষার্থীকে ১,৮০৫টি সেশন দিয়েছেন—যা আগের বছরের দ্বিগুণ।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি ও বাস্তবতা

‘হেলদি মাইন্ডস সার্ভে’র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাত্র ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী, যারা উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় ভুগছে, গত এক বছরে কোনো কাউন্সেলিং নিয়েছে। সময়ের অভাব, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, কোথায় যাবেন তা না জানা, কিংবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া—এসবই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ ও খোলা দরজা

সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেরাপিস্ট ক্রিস্টিন ট্যাপন শুধু থেরাপি দেন না, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে তোলেন। কখনো কুকুর ‘তিরামিসু’কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটেন, আবার কখনো নিজ হাতে বানানো লেমন বার বিতরণ করেন। তাঁর অফিস সাজানো পরিবারের বসার ঘরের মতো—যেখানে শিক্ষার্থীরা আরাম করে বসে কথা বলে।

তবে এই কাজ সহজ নয়। ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের থেরাপিস্ট মেলিসা বোতিলিও বলেন, একা কাজ করা কাউন্সেলরদের মাঝে মাঝে ‘একাকিত্ব’ ও ব্যক্তিগত সীমারেখা বজায় রাখার সমস্যা দেখা দেয়। তবু তিনি মনে করেন, “যখন বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক পদ্ধতি খুঁজে নেয়, তখন এই মডেল অনেক শিক্ষার্থীকে সহায়তা নিতে উৎসাহিত করে।”

Xiomara Garcia wears glasses, a navy zip-up top and pants and sits in a stairwell. Light shines through a window behind her.

সফলতার উদাহরণ

আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১টি ছাত্রাবাসে দুইজন এম্বেডেড থেরাপিস্ট কাজ করছেন। ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জন এবং অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন কাউন্সেলর রয়েছেন। অ্যারিজোনার কাউন্সেলর সারা হেইনজেল বলেন, “যখন শিক্ষার্থীরা দেখে তাঁদের বন্ধুরাও কাউন্সেলিং নিচ্ছে, তখন এই প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক মনে হয়। ফলে আরও অনেকে সাহায্য চাইতে এগিয়ে আসে।”

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এই ‘এম্বেডেড কাউন্সেলিং’ প্রোগ্রাম প্রমাণ করেছে—যখন থেরাপি সহজলভ্য, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিচারহীন পরিবেশে পাওয়া যায়, তখন শিক্ষার্থীরা দ্রুত সাহায্য নিতে সাহসী হয়। মানসিক স্বাস্থ্য এখন শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, বরং শিক্ষার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে।

 

#মানসিক_স্বাস্থ্য #বিশ্ববিদ্যালয় #কাউন্সেলিং #শিক্ষার্থী_সহায়তা #যুক্তরাষ্ট্র

জনপ্রিয় সংবাদ

পান্ডা কূটনীতির পরের অধ্যায়? এখন স্পটলাইটে সোনালি বানর

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উদ্যোগ—ছাত্রাবাসেই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা

০৪:৪০:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় সেবা

আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রাবাস বা একাডেমিক ভবনের ভেতরেই থাকছেন কাউন্সেলর বা থেরাপিস্ট। এই ‘এম্বেডেড কাউন্সেলর’ মডেল শিক্ষার্থীদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করে তুলছে। ২০২৫ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন এভাবে থেরাপিস্ট নিয়োগ দিচ্ছে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মতে, এতে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘লজ্জা’ বা সামাজিক সংকোচ অনেকটা কমেছে। ৩৭ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী যে বিষণ্নতা বা উদ্বেগে ভুগছে, তাদের জন্য এই উদ্যোগ বড় সহায়তা হয়ে উঠেছে।

ব্যক্তিগত সংগ্রাম থেকে শুরু

ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী সিওমারা গার্সিয়া ছিলেন প্রথম প্রজন্মের কলেজগামী ছাত্র। পরিবারের আর্থিক কষ্ট ও সামাজিক ভিন্নতার কারণে শুরু থেকেই তিনি নিজেকে ‘অযোগ্য’ মনে করতেন। এক পর্যায়ে অনলাইন থেরাপি শুরু করলেও গোপনীয়তা রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছিল। কখনো সিঁড়ির নিচে বসে, ভিডিও কলে কথা বলতে হতো।

অবশেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকা এক থেরাপিস্টের কাছে যান—যাঁর কক্ষে নরম আলো, আরামদায়ক চেয়ার ও স্ন্যাক্সের ঝুড়ি ছিল। গার্সিয়া বলেন, “এটা যেন নিজের ঘরের মতো পরিবেশ ছিল।” এই সহজলভ্য থেরাপি তাঁকে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়।

রাতের বেলায়ও ‘ড্রপ-ইন’ সেশন

ভার্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন চারজন এম্বেডেড কাউন্সেলর কাজ করছেন, যাঁরা রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সেবা দেন। প্রতিষ্ঠানটির এম্বেডেড কাউন্সেলিংয়ের সহকারী পরিচালক ক্লেয়ার কাবেলোস বলেন, “মানসিক সংকট ৯টা-৫টার সময়সূচিতে হয় না।”

এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের ‘রেসিডেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা ছাত্রনেতারাও চাপমুক্ত হচ্ছেন, কারণ আগের মতো তাঁদের আর প্রতিটি সমস্যা নিজেরা সামলাতে হয় না। ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে পাঁচজন কাউন্সেলর ৩৯১ শিক্ষার্থীকে ১,৮০৫টি সেশন দিয়েছেন—যা আগের বছরের দ্বিগুণ।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি ও বাস্তবতা

‘হেলদি মাইন্ডস সার্ভে’র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাত্র ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী, যারা উদ্বেগ বা বিষণ্নতায় ভুগছে, গত এক বছরে কোনো কাউন্সেলিং নিয়েছে। সময়ের অভাব, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, কোথায় যাবেন তা না জানা, কিংবা অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়া—এসবই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

বন্ধুত্বপূর্ণ মুখ ও খোলা দরজা

সান্তা ক্লারা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেরাপিস্ট ক্রিস্টিন ট্যাপন শুধু থেরাপি দেন না, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে তোলেন। কখনো কুকুর ‘তিরামিসু’কে সঙ্গে নিয়ে হাঁটেন, আবার কখনো নিজ হাতে বানানো লেমন বার বিতরণ করেন। তাঁর অফিস সাজানো পরিবারের বসার ঘরের মতো—যেখানে শিক্ষার্থীরা আরাম করে বসে কথা বলে।

তবে এই কাজ সহজ নয়। ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বোল্ডারের থেরাপিস্ট মেলিসা বোতিলিও বলেন, একা কাজ করা কাউন্সেলরদের মাঝে মাঝে ‘একাকিত্ব’ ও ব্যক্তিগত সীমারেখা বজায় রাখার সমস্যা দেখা দেয়। তবু তিনি মনে করেন, “যখন বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক পদ্ধতি খুঁজে নেয়, তখন এই মডেল অনেক শিক্ষার্থীকে সহায়তা নিতে উৎসাহিত করে।”

Xiomara Garcia wears glasses, a navy zip-up top and pants and sits in a stairwell. Light shines through a window behind her.

সফলতার উদাহরণ

আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১১টি ছাত্রাবাসে দুইজন এম্বেডেড থেরাপিস্ট কাজ করছেন। ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ জন এবং অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ জন কাউন্সেলর রয়েছেন। অ্যারিজোনার কাউন্সেলর সারা হেইনজেল বলেন, “যখন শিক্ষার্থীরা দেখে তাঁদের বন্ধুরাও কাউন্সেলিং নিচ্ছে, তখন এই প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক মনে হয়। ফলে আরও অনেকে সাহায্য চাইতে এগিয়ে আসে।”

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এই ‘এম্বেডেড কাউন্সেলিং’ প্রোগ্রাম প্রমাণ করেছে—যখন থেরাপি সহজলভ্য, বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিচারহীন পরিবেশে পাওয়া যায়, তখন শিক্ষার্থীরা দ্রুত সাহায্য নিতে সাহসী হয়। মানসিক স্বাস্থ্য এখন শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, বরং শিক্ষার অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠছে।

 

#মানসিক_স্বাস্থ্য #বিশ্ববিদ্যালয় #কাউন্সেলিং #শিক্ষার্থী_সহায়তা #যুক্তরাষ্ট্র