ভূমি ব্যবস্থাপনায় সার্ভেয়ারদের ভূমিকা শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং উন্নয়ন পরিকল্পনা, নাগরিক সেবা ও সম্পদ সংরক্ষণের মূল চালিকাশক্তি—এমন মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ. এস. এম. সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, ভূমির সঠিক ব্যবহার, সংরক্ষণ, মালিকানা নির্ধারণ এবং বিরোধ নিষ্পত্তিতে নির্ভুল জরিপের কোনো বিকল্প নেই।
ভূমি ব্যবস্থাপনায় সার্ভেয়ারদের অপরিহার্য ভূমিকা
শনিবার রাজধানীর ভূমি ভবনে আয়োজিত “ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ব্যবস্থাপনা বিভাগে নবনিযুক্ত সার্ভেয়ারগণের সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০২৫”-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মোট ২০৫ জন সার্ভেয়ার নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৯৬ জন যোগদান করেছেন। আয়োজক ছিল বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট সার্ভেয়ার্স’ অ্যাসোসিয়েশন।
ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ শুরু
সার্ভেয়ারদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আগামীকাল ২৬ অক্টোবর থেকে ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ছয় সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হবে বলে জানান সিনিয়র সচিব।

তিনি বলেন, “সার্ভেয়ারদের সঠিক কাজের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সহজে নিরসন সম্ভব হয়। পরিমাপের নির্ভুলতা ভূমি রেকর্ড প্রণয়নে সহায়তা করে, যা জমির মালিকানা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভুল মাপের কারণে মালিকানা বিরোধ, দখল সমস্যা ও আইনি জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।”
তিনি সততা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে আরও বলেন, “সবাই একসঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করলে ’৭১ ও ’২৪-এর প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব।”
ডিজিটাল যুগে সার্ভেয়ারদের আধুনিক ভূমিকা
সালেহ আহমেদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে সার্ভেয়ারদের কাজ এখন আরও গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ইতিমধ্যে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এসেছে, ফলে সময় কম লাগছে, নির্ভুলতা বাড়ছে এবং নাগরিকরা দ্রুত সেবা পাচ্ছেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “আগে সার্ভেয়ারদের কাজ ছিল হাতে-কলমে মানচিত্র অঙ্কন ও রেকর্ড সংরক্ষণ। এখন এসব কাজ ডিজিটালভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সার্ভেয়ারদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য।”
জনসেবায় সততা ও পেশাগত দায়বদ্ধতা
সিনিয়র সচিব বলেন, সার্ভেয়ারদের সততা, পেশাগত দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতা জনসেবার মূল ভিত্তি। কারণ ভূমি সম্পর্কিত প্রতিটি কাজ মানুষের জীবিকা, সম্পদ ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
তিনি যোগ করেন, “একজন সার্ভেয়ারের ভুল মাপ বা অনৈতিক সিদ্ধান্ত বহু মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই এই পেশা শুধু চাকরি নয়—এটি মানুষের মৌলিক অধিকার ও সম্পদ সুরক্ষার দায়িত্ব।”

উন্নয়ন প্রকল্পে সার্ভেয়ারদের অবদান
সালেহ আহমেদ বলেন, ভূমি সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা নির্মাণ, কৃষিজমি সংরক্ষণ,—সব ক্ষেত্রেই সার্ভেয়ারদের অবদান অনন্য। সঠিক ভূমি তথ্য দিয়ে তারা সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনাকে ত্বরান্বিত করছেন।
তিনি বলেন, “ভূমি সেবার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সার্ভেয়ারদের পেশাদারিত্ব ও কর্মদক্ষতার ওপর। তারা সঠিকভাবে কাজ করলে ভূমি প্রশাসন হবে জনবান্ধব, দক্ষ ও আধুনিক—যা একটি উন্নত বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ. জে. এম. সালাহউদ্দিন নাগরী, চেয়ারম্যান (সচিব), ভূমি সংস্কার বোর্ড, ড. মো. মাহমুদ হাসান, চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) ভূমি আপিল বোর্ড, মো. সাইদুর রহমান, মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, অতিরিক্ত সচিব মো. শরিফুল ইসলাম, মো. মাহফুজুর রহমান ও মো. এমদাদুল হক চৌধুরীসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ শামিউল ইসলাম শামীম, এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মো. মিরাজ হোসেন।
#ভূমি_মন্ত্রণালয় #সার্ভেয়ার #ডিজিটালবাংলাদেশ #ভূমিসেবা #জনসেবা
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















