১২:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫২) পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের ভয়াবহ এক আত্মজীবনী—যৌন নির্যাতন, ক্ষমতার অন্ধকার এবং এক নারীর করুণ লড়াইয়ের কাহিনি চীনের নারী দর্শকশক্তি বদলে দিচ্ছে দেশটির চলচ্চিত্রজগৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৫) ঢাকার অর্থনীতির ৫৬ শতাংশ উৎপাদন খাতে—ডিসিসিআই প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে ১৮ শতাংশ এশিয়া সফরে ট্রাম্প—চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা ইসলামাবাদ–কাবুল দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু

৫৫ দলের মধ্যে মাত্র ১৮টি স্বাক্ষর করেছে ‘জুলাই চার্টার’—অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের আলোচনায় বক্তাদের মত

দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫ হলেও ‘জুলাই চার্টার’-এ স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৮টি দল—এ তথ্য উঠে এসেছে শনিবারের এক আলোচনা সভায়। বক্তারা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত।


আয়োজন ও প্রেক্ষাপট

সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রিদরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) যৌথভাবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র’ শীর্ষক এ আলোচনা আয়োজন করে। উদ্যোগটির লক্ষ্য তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপকে উৎসাহ দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহাবস্থানকে দৃঢ় করা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।


উদ্দেশ্য ও কাঠামো

উদ্যোগটির মূল উদ্দেশ্য হলো তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের মতাদর্শগত আলোচনায় সম্পৃক্ত করা, বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করা এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। আলোচনার শুরুতে সিজিএস-এর সভাপতি জিল্লুর রহমান উদ্বোধনী বক্তব্য দেন; সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসি এবং এফইএস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার সাধন কুমার দাসও বক্তব্য রাখেন।


গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জনধারণা

জিল্লুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র বা রাজনীতি নিয়ে কথা বললে জনধারণাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার ভাষায়, শুধু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র সম্পূর্ণ হয় না; তবে নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরুই করা যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের পথে — এ প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা এখন দেখার বিষয়।


প্রতিনিধিত্ব ও ‘জুলাই চার্টার’ প্রসঙ্গ

আলোচনায় উঠে আসে যে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হলেও ‘জুলাই চার্টার’-এ স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৮টি দল। বক্তারা বলেন, এই সীমিত অংশগ্রহণ অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হলেও, এই প্রক্রিয়ায় নারী-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত ছিল। এই সমঝোতা কীভাবে হলো — তা নিয়ে ভাবনার জায়গা আছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।


প্রান্তিকতা: ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক

পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর বা আসতে পারার সম্ভাবনা থাকলে অনেক সময় দলগুলো অতিমাত্রায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, আর যারা পরাজিত হয় তারা কার্যত রাজনৈতিক পরিসর থেকে হারিয়ে যায়। রাজনৈতিক সংখ্যালঘু নিয়ে আলোচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রসঙ্গ আসে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রান্তিকতাও বড় চ্যালেঞ্জ — নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী বারবারই সুবিধা ভোগ করে। তার মতে, সাংস্কৃতিক প্রান্তিকতাও দৃশ্যমান; অনেক ক্ষেত্রে তা জোরপূর্বক, আর কখনও কখনও রাষ্ট্রীয় সমর্থন নিয়েও ঘটতে পারে।


আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংযোগ

এফইএস-এর প্রতিনিধি ফেলিক্স গারদেস বলেন, তরুণ রাজনীতিকদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে পেরে তারা আনন্দিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে সামাজিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত থেকে প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা, রাজনৈতিক সংলাপ ও জনআলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। আসন্ন নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ন্যায্য ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার বিশ্বজুড়েই, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ — কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচার সংখ্যালঘুর অত্যাচারের চেয়ে ভালো নয়।


আলোচনার সঞ্চালনা ও অংশগ্রহণ

আলোচনা কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীরা গণতন্ত্রের ভিত্তি, মতাদর্শগত বিভাজন এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন।

বক্তারা মনে করেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র কেবল নীতিগত অঙ্গীকার নয় — এটি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, প্রতিনিধিত্ব এবং প্রান্তিক কণ্ঠের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বাস্তব প্রক্রিয়া। ন্যায্য নির্বাচন, বহুত্ববাদ এবং নীতিনিষ্ঠ সংলাপই স্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিতে পারে।


#অন্তর্ভুক্তিমূলকগণতন্ত্র #জুলাইচার্টার #বাংলাদেশরাজনীতি #গণতান্ত্রিকপ্রক্রিয়া #রাজনৈতিকস্থিতি

জনপ্রিয় সংবাদ

‘দ্য লাইফ অব আ শোগার্ল’-এ অশালীনতা ও রক্ষণশীলতার মিশেল—আমেরিকার সাংস্কৃতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি

৫৫ দলের মধ্যে মাত্র ১৮টি স্বাক্ষর করেছে ‘জুলাই চার্টার’—অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের আলোচনায় বক্তাদের মত

০৮:৩১:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫ হলেও ‘জুলাই চার্টার’-এ স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৮টি দল—এ তথ্য উঠে এসেছে শনিবারের এক আলোচনা সভায়। বক্তারা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত।


আয়োজন ও প্রেক্ষাপট

সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রিদরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) যৌথভাবে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র’ শীর্ষক এ আলোচনা আয়োজন করে। উদ্যোগটির লক্ষ্য তরুণ রাজনীতিকদের মধ্যে মতাদর্শভিত্তিক সংলাপকে উৎসাহ দেওয়া এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহাবস্থানকে দৃঢ় করা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।


উদ্দেশ্য ও কাঠামো

উদ্যোগটির মূল উদ্দেশ্য হলো তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের মতাদর্শগত আলোচনায় সম্পৃক্ত করা, বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করা এবং গণতান্ত্রিক সহাবস্থানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। আলোচনার শুরুতে সিজিএস-এর সভাপতি জিল্লুর রহমান উদ্বোধনী বক্তব্য দেন; সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসি এবং এফইএস বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অ্যাডভাইজার সাধন কুমার দাসও বক্তব্য রাখেন।


গণতন্ত্র, নির্বাচন ও জনধারণা

জিল্লুর রহমান বলেন, গণতন্ত্র বা রাজনীতি নিয়ে কথা বললে জনধারণাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তার ভাষায়, শুধু নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র সম্পূর্ণ হয় না; তবে নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরুই করা যায় না। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ জাতীয় নির্বাচনের পথে — এ প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, তা এখন দেখার বিষয়।


প্রতিনিধিত্ব ও ‘জুলাই চার্টার’ প্রসঙ্গ

আলোচনায় উঠে আসে যে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা প্রায় ৫৫ হলেও ‘জুলাই চার্টার’-এ স্বাক্ষর করেছে মাত্র ১৮টি দল। বক্তারা বলেন, এই সীমিত অংশগ্রহণ অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পথে বড় বাধা। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হলেও, এই প্রক্রিয়ায় নারী-সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত ছিল। এই সমঝোতা কীভাবে হলো — তা নিয়ে ভাবনার জায়গা আছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।


প্রান্তিকতা: ধর্মীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক

পারভেজ করিম আব্বাসি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর বা আসতে পারার সম্ভাবনা থাকলে অনেক সময় দলগুলো অতিমাত্রায় প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, আর যারা পরাজিত হয় তারা কার্যত রাজনৈতিক পরিসর থেকে হারিয়ে যায়। রাজনৈতিক সংখ্যালঘু নিয়ে আলোচনা করলে স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুর প্রসঙ্গ আসে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রান্তিকতাও বড় চ্যালেঞ্জ — নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠী বারবারই সুবিধা ভোগ করে। তার মতে, সাংস্কৃতিক প্রান্তিকতাও দৃশ্যমান; অনেক ক্ষেত্রে তা জোরপূর্বক, আর কখনও কখনও রাষ্ট্রীয় সমর্থন নিয়েও ঘটতে পারে।


আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সংযোগ

এফইএস-এর প্রতিনিধি ফেলিক্স গারদেস বলেন, তরুণ রাজনীতিকদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনায় অংশ নিতে পেরে তারা আনন্দিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে সামাজিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত থেকে প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা, রাজনৈতিক সংলাপ ও জনআলোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। আসন্ন নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ন্যায্য ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া দেখার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকার বিশ্বজুড়েই, গণতন্ত্রের অপরিহার্য অঙ্গ — কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচার সংখ্যালঘুর অত্যাচারের চেয়ে ভালো নয়।


আলোচনার সঞ্চালনা ও অংশগ্রহণ

আলোচনা কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা। মতাদর্শগত ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও অংশগ্রহণকারীরা গণতন্ত্রের ভিত্তি, মতাদর্শগত বিভাজন এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করেন।

বক্তারা মনে করেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্র কেবল নীতিগত অঙ্গীকার নয় — এটি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, প্রতিনিধিত্ব এবং প্রান্তিক কণ্ঠের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বাস্তব প্রক্রিয়া। ন্যায্য নির্বাচন, বহুত্ববাদ এবং নীতিনিষ্ঠ সংলাপই স্থিতিশীল রাজনীতি ও অর্থনীতির ভিত্তি গড়ে দিতে পারে।


#অন্তর্ভুক্তিমূলকগণতন্ত্র #জুলাইচার্টার #বাংলাদেশরাজনীতি #গণতান্ত্রিকপ্রক্রিয়া #রাজনৈতিকস্থিতি